শ্বাসরুদ্ধকর টাইব্রেকারে জিতে কোপা আমেরিকার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে আর্জেন্টিনা। আর্জেন্টিনা-কলম্বিয়ার মধ্যকার কোপা আমেরিকার দ্বিতীয় সেমিফাইনাল গড়ায় টাইব্রেকারে। ১-১ গোলে ড্র হওয়ায় শেষ পর্যন্ত টাইব্রেকারে যায় খেলা। কোপার চলতি আসরের নিয়মানুযায়ী অতরিক্ত সময় খেলা হয়নি। সেখানে আর্জেন্টিনার নায়ক গোলরক্ষক মার্টিনেজ। কলম্বিয়ার তিনটি শট ঠেকিয়ে দিলেন তিনি। সে সঙ্গে ৩-২ গোলে কলম্বিয়াকে হারিয়ে কোপা আমেরিকার ফাইনালে পৌঁছে গেলো লিওনেল মেসির দল আর্জেন্টিনা। ফাইনালে ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ হলো আর্জেন্টাইনরা।
টাইব্রেকারে কলম্বিয়া ১ম শট নেন কুয়াদ্রাদো, গোল। আর্জেন্টিনার প্রথম শট নেন মেসি, গোল। কলম্বিয়ার দ্বিতীয় শট, সানচেজ, ফিরিয়ে দিলেন আর্জেন্টিনা গোলরক্ষক মার্টিনেজ। গোল হলো না। আর্জেন্টিনা দ্বিতীয় শট, রদ্রিগো। বারের ওপর দিয়ে মেরে দিলেন তিনি। গোল হলো না।
কলম্বিয়ার তৃতীয় শট নিলেন, ইয়েরি মিনা। আবারও ফিরিয়ে দিলেন মার্টিনেজ। গোল হলো না। আর্জেন্টিনা তৃতীয় শট পেরেডেস। গোল। কলম্বিয়ার চর্তুথ শটে গোল। আর্জেন্টিনা চতুর্থ শট লওতারো মার্টিনেজ, গোল হয়ে গেলো। কলম্বিয়ার শেষ শটটিও ঠেকিয়ে দিলেন মার্টিনেজ। ফাইনালে উঠে গেলো আর্জেন্টিনা।
এর আগে নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলায় আর্জেন্টিনা এবং কলম্বিয়ার মধ্যে ফল নিষ্পত্তি হলো না। ১-১ গোলে সমতা। যার ফলে ফাইনালের দল নির্ধারণে খেলা গড়াল টাইব্র্রেকারে। কোপা আমেরিকার নিয়ম অনুসারে অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের খেলা হওয়ার নিয়ম নেই। ৯০ মিনিটের খেলা শেষ হলো সরাসরি টাইব্রেকার।
এ যেন রোমাঞ্চকে ছাড়িয়ে যাওয়া রোমাঞ্চ। হাড়ে কাঁপুনি ধরানো কোনো থ্রিলার। সব মিলিয়ে অবশেষে পূর্ণতা পেল ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ভক্তদের চাওয়া। তাদের অনেক দিনের চাওয়া ছিল কোপা আমেরিকার স্বপ্নের এক ফাইনালে খেলবে দুটি দল। প্রথম সেমিফাইনাল জিতে সেই মঞ্চটা সাজিয়ে রেখেছিল স্বাগতিক ব্রাজিল। বাকি ছিল শুধু আর্জেন্টিনার প্রত্যাশা পূরণের। দ্বিতীয় সেমিফাইনালে কলম্বিয়াকে টাইব্রেকারে হারিয়েই তারা নিশ্চিত করেছে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা মহারণ!
তাতে বড় অবদান মেসির! ব্রাজিলে এবার তাকে দেখে মনে হচ্ছিল, নতুন একটা মানদণ্ড নির্ধারণ করতেই যেন তার আগমন। অবশ্য সেটি করেছেনও। ৫ গোলের সঙ্গে করেছেন ৫টি অ্যাসিস্ট!
প্রথম দিকেই সুযোগ তৈরি করা আর্জেন্টিনা প্রথম গোল পায় সপ্তম মিনিটে। ৭ মিনিটে লাউতারো মার্তিনেজ করেন প্রথম গোল। ডানপ্রান্তে পেনাল্টি অঞ্চলে বল পেয়ে যান মেসি। অসাধারণ দক্ষতায় কলম্বিয়া ডিফেন্ডারদের কাটিয়ে এর পর বামপ্রান্তে থাকা মার্তিনেজকে পাস দিলে তিনি সহজেই জাল কাঁপান। যা ছিল মেসির পঞ্চম অ্যাসিস্ট।
এর দুই মিনিট বাদে কলম্বিয়াও গোলের সুযোগ তৈরি করেছিল। সেটি সেভ করেন আর্জেন্টাইন গোল কিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজ।
৩৬ মিনিটে সুবর্ণ সুযোগ ছিল বারিওসের। লুজ বল পেয়ে ভলি করেছিলেন কিন্তু বল গিয়ে লেগেছে ডান পোস্টে। এর পর কর্নার থেকে আবারও কলম্বিয়ার আক্রমণ। কুয়াদ্রাদোর কর্নার থেকে দারুণ এক হেড করেছিলেন মিনা। তার হেড ক্রসবারে লেগে চলে যায় পেছনে!
৪৪ মিনিটে মেসির দারুণ এক কর্নারে ব্যবধান দ্বিগুণ করার সুযোগ ছিল। কিন্তু ৬ গজ বক্সের প্রান্তে থাকা গনজালেস হেড করলেও নিচু হয়ে অবিশ্বাস্যভাবে সেটি রক্ষা করেছেন কলম্বিয়া গোলরক্ষক।
বিরতির পরই জমে উঠে খেলা। ৬১ মিনিটে অবিশ্বাস্য এক গোলে সমতা ফেরায় কলম্বিয়া। দুরূহ কোণ থেকে ডান পায়ের শটে জাল কাঁপিয়েছেন লুইস দিয়াজ। এর আগে অবশ্য ফাউলের শিকার হন মেসি। তাতে পা থেকে রক্ত ঝরতে থাকলেও আর্জেন্টাইন খুদে জাদুকর খেলা চালিয়ে যেতে থাকেন।
তার পর কলম্বিয়া আত্মবিশ্বাস ফিরে পেলেও ব্যবধান বাড়াতে মরিয়া হয়ে উঠে আর্জেন্টিনা। কিন্তু সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে কয়েকবার। ৮১ মিনিটে ডি মারিয়ার থ্রু বল পেয়েও মেসি শট নেন বাম পোস্ট বরাবার!
এর পর সমানতালে ফাউলের ঘটনাও ঘটে ম্যাচে। কিন্তু স্কোরলাইনে আর হেরফের হয়নি। ম্যাচ টাইব্রেকারে গেলে সেখানেই শেষ হাসি হেসেছে আর্জেন্টিনা। শুটআউটে আর্জেন্টিনা জেতে ৩-২ ব্যবধানে।
এখন ১১ জুলাই রবিবার ভোর ৬টায় শিরোপা লড়াইয়ে মারাকানায় মুখোমুখি হবে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]