বিধান রায়,টাঙ্গাইল প্রতিনিধি দৈনিক শিরোমণিঃ টাঙ্গাইলের সখীপুরের হাতীবান্ধা ইউনিয়নের ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠীর এক নারীকে গণধর্ষণের পর যৌনাঙ্গ থেকে পেট পর্যন্ত ছিঁড়ে চারটি দাঁত ভেঙে ফেলা হয়েছে। ধর্ষকরা পায়ুপথও ফেঁড়ে ফেলেছে। সারা শরীর জুড়ে রয়েছে পাশবিক নির্যাতনের অসংখ্য চিহ্ন। নির্যাতনের এমনতর চিহ্ন দেখে চিকিৎসকও শিউরে উঠেছেন।টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের গাইনি চিকিৎসক রেহানা পারভীন জানান, ওই নারীর বয়স ৪০-৪৫ বছর হবে। তার সারা শরীরে জখম, কয়েকটি দাঁত ভেঙে ফেলা হয়েছে। যৌনাঙ্গ থেকে পেট পর্যন্ত এবং পায়ুপথ ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে।তিনি জানান, দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে নির্যাতনের শিকার নারীদের তিনি পরীক্ষা- নিরীক্ষা করছেন। এমন নির্মম নির্যাতন আগে কখনো দেখেননি।তিনি আরও জানান, ধর্ষণের চেষ্টা নয়- তাকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। ওই নারীকে পরীক্ষা নিরীক্ষায় এমনই দেখেছেন তিনি।গত বৃহস্পতিবার (১১ জুন) রাতে দিনা সরকার, মণ্টু সরকার এবং সবদুল মিয়া নামে তিন ব্যক্তি মদ্যপ অবস্থায় হাতীবান্ধা ইউনিয়নের বাজাইল বড়চালা গ্রামের ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠীর ওই নারীর বাড়িতে যান। তারা তাকে ডেকে পাশের বনে নিয়ে ধর্ষণ ও নির্যাতন করেন।পরদিন শুক্রবার সকালে ওই নারীকে উদ্ধার করে প্রথমে সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।এদিকে, মঙ্গলবার(১৫ জুন) সকালে ওই ঘটনায় অভিযুক্ত ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ কোচ আদিবাসী ইউনিয়ন ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে। মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ কোচ আদিবাসী ইউনিয়নের যুগ্ম-আহ্বায়ক রতন কুমার রায় ও বিশ্বজিৎ কোচ, ঘাটাইল উপজেলার শাখার সভাপতি পরিমল চন্দ্র কোচ, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অলিক মৃ, বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি জন যেত্রা প্রমুখ।অপরদিকে, গণধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত প্রধান দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। মঙ্গলবার(১৫ জুন) দুপুরে তাদের আদালতে পাঠানো হয়।টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, সোমবার দিবাগত রাত পৌনে ১টার দিকে নাগরপুর ও মির্জাপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছেন- সখীপুরের বড়চালা গ্রামের প্রকাশ সরকারের ছেলে দিনা সরকার (৩০) ও স্বর্গীয় নারায়ণ সরকারের ছেলে মণ্টু সরকার (৩২)। দুই আসামি ধর্ষিতার স্বগোত্রীয় ও প্রতিবেশি।পুলিশ সুপার বলেন, মামলা দায়ের হওয়ার পর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (উত্তর) ওসি সাজ্জাদ হোসেনের নেতৃত্বে কয়েকজন সদস্যের সমন্বয়ে একটি চৌকষ টিম ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মির্জাপুর ও নাগরপুর থেকে আসামিদের মধ্যে দুইজনকে গ্রেপ্তার করে।গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে তারা আদালতে জবানবন্দি দিতে সম্মতি প্রকাশ করেছে। মামলার অপর আসামি সবদুল মিয়াকে গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।