জেমস আব্দুর রহিম রানা যশোর জেলা প্রতিনিধি দৈনিক শিরোমণিঃ পদ্মাসেতুর রেল লিংক প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সরকার। যেকারণে পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী ২০২৪ সালের জুন নাগাদ শেষ হচ্ছে না পদ্মাসেতুর রেল লিংক প্রকল্পের কাজ। আরো দেড় বছর প্রকল্পের সময় বাড়তে পারে বলে জানা গেছে। আর সেই হিসেবে কাজ শেষ হয়ে পদ্মাসেতু দিয়ে ট্রেন চলাচলে সময় লাগতে পারে ২০২৬ সাল। ফলে ট্রেনে চড়ে পদ্মাসেতু হয়ে যশোর থেকে ঢাকা যাওয়ার অপেক্ষার প্রহর আরো বাড়তে চলেছে। নির্মাণকাজের ব্যয় বাড়ানোসহ বিভিন্ন কারণে প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনের জন্য ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) প্রণয়ন প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।জানা যায়, পদ্মাসেতুর রেল লিংক প্রকল্পের কাজের সময় বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে এর প্রকল্প ব্যয়। শতভাগ কাজ সম্পন্ন করতে আরো এক হাজার একশ ৯১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা প্রয়োজন বলে পরিকল্পনা কমিশনকে জানিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নে বর্তমানে কিছু চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম ভূমি অধিগ্রহণ। প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন জেলায় প্রায় ১৫২ একর অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম চলমান। যশোর জেলায় ২ দশমিক ৯৪ একর, নড়াইল জেলায় ২২ দশমিক ৯৭৭৫ একর, গোপালগঞ্জ জেলায় ১৩ দশমিক ১৩৬২ একর, ফরিদপুর জেলায় ২৭ দশমিক ৫৬৩০ একর, মাদারীপুর জেলায় ৩১ দশমিক ৭৫৪৫ একর, মুন্সিগঞ্জ জেলায় ৩৩ দশমিক ২২৭৫ একর, নারায়ণগঞ্জ জেলায় ২ দশমিক ৭৩২১ একর ও ঢাকা জেলায় ১৮ দশমিক ২৩৯১ একর ভূমি সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক দফতর থেকে হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা প্রয়োজন। যথাসময়ে ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রম শেষ করে ঠিকাদারকে সাইট বুঝিয়ে দেয়ার প্রক্রিয়ায় বিলম্বের কারণে ঠিকাদারের মাধ্যমে ক্লেইম দাখিল করা হয়েছে।সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যশোর থেকে পদ্মাসেতু হয়ে কেরানীগঞ্জের উপর দিয়ে ঢাকা পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা ছিলো ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে সব কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও সময়–ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি।পদ্মাসেতু রেল লিংক প্রকল্পের আওতায় ৪৩ দশমিক ২২ কিলোমিটার লুপ ও সাইডিং লাইন, ৫৮টি মেজর ব্রিজ, ২৭৩টি মাইনর ব্রিজ, কালভার্ট ও আন্ডারপাস, ২০টি স্টেশন, ১০০টি ব্রডগেজ কোচ কেনাসহ দুই হাজার ৪২৬ একর ভূমি অধিগ্রহণের সং¯’ান রয়েছে। ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত সেকশনের কাজ তিনটি সেকশনে ভাগ করা হয়েছে। যশোর-ভাঙ্গা, ভাঙ্গা-মাওয়া ও মাওয়া-ঢাকা। এরমধ্যে যশোর-ভাঙ্গা অংশের নির্মাণকাজের হালনাগাদ অগ্রগতি ৩৬ শতাংশ, ভাঙ্গা-মাওয়া অংশে ৭১ শতাংশ ও মাওয়া-ঢাকা অংশে ৪৩ শতাংশ। প্রকল্পের সার্বিক ভৌত অগ্রগতি ৪৬ শতাংশ ও আর্থিক অগ্রগতি ৫০ দশমিক ৭৩ শতাংশ।নির্মাণকাজের চুক্তি অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়নকাল ডিসেম্বর ২০২২ এবং ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড বিবেচনায় ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত। ঠিকাদারের দাখিল করা সবশেষ ওয়ার্ক প্রোগ্রাম (এফ) অনুযায়ী বাস্তবায়নকাল জুলাই ২০২৪ পর্যন্ত। ভূমি অধিগ্রহণ, ইউটিলিটি শিফটিং,ভেরিয়েশন,বর্ষাকাল, করোনার প্রকোপের কারণে ঠিকাদার প্রায় দেড় বছর প্রকল্প বাস্তবায়নকাল বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন।সম্প্রতি রেল ভবনে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদারের সভাপতিত্বে ‘পদ্মাসেতু রেল সংযোগ (১ম সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) চতুর্থ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রকল্পের সময়-ব্যয় বাড়ানোর বিষয়টি উঠে আসে। প্রকল্পের সময়-ব্যয় বাড়ানো নিয়ে পিআইসির চতুর্থ কার্যবিবরণী পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্র জানায়, নানা কারণে প্রকল্পের আওতায় বাড়তি ব্যয় প্রয়োজন। যশোরের রুপদিয়া, পদ্মবিলা, কাশিয়ানি ও মাওয়া স্টেশনগুলোতে অপারেশনাল সুবিধা বৃদ্ধিজনিত পরিবর্তন, নড়াইলের তুলারামপুরে নতুন আন্ডারপাস নির্মাণ, ভায়াডাক্টের পিয়ারের নকশা পরিবর্তন, কমলাপুরের টিটিপাড়ায় আন্ডারপাস, ভাঙ্গা জংশনে ওভারহেড স্টেশন, ঢাকা থেকে গেন্ডারিয়া তৃতীয় ডুয়েলগেজ লাইন এবং একশটি বিজি কোচের ডিজাইন পরিবর্তনও ব্যয় বাড়ার জন্য দায়ী। এছাড়া নদীর নেভিগেশন ক্লিয়ারেন্স বৃদ্ধিজনিত অতিরিক্ত সম্ভাব্য ব্যয় প্রায় ১৩৮ দশমিক ৫৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রতি ডলার ৮৬ টাকা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ এক হাজার একশ ৯১ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।এছাড়াও ব্যয় বাড়ছে ইউটিলিটি শিফটিং ও পরামর্শক সেবায়ও। বর্তমানে বিভিন্ন সংস্থা ও দফতর থেকে ইউটিলিটি শিফটিং বাবদ ৩৬ কোটি ৮০ লাখ টাকার প্রাক্কলন করা হয়েছে। প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে বাস্তবায়নে পরামর্শক সেবাও বাড়াতে হবে। বর্তমান সাইট কন্ডিশন ও বিভিন্ন সরকারি সিদ্ধান্ত পরিপালনের জন্য ভেরিয়েশন দেয়ায় কাজের পরিধি বেড়েছে। তাই প্রকল্পের মূল স্কোপ থেকে অতিরিক্ত কাজ সুষ্ঠু তদারকির জন্য কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালট্যান্টের (সিএসসি) জনমাস বাড়ানোসহ নতুন পদ সৃষ্টিও অত্যাবশ্যক বলে জানায় রেলওয়ে।
পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক আফজাল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, করোনা সংকটে অনেক সময় অপচয় হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ ও পরামর্শক সেবা খাতে হয়েছে বাড়তি ব্যয়। এসব কারণে প্রকল্পের সময়–ব্যয় বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত নয়, প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।বর্তমানে প্রস্তাবিত প্রকল্পের একটি খাতের চুক্তিমূল্য দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪০৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা, যা মূল চুক্তিমূল্য ও সবশেষ অনুমোদিত চুক্তিমূল্যের চেয়ে ৪৬৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা বেশি। ট্যাক্সভ্যাট ছাড়া এ ব্যয় ৩৬৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা বেশি। নির্মাণকাজের ব্যয় বাড়ানোসহ বিভিন্ন কারণে প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনের জন্য ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) প্রণয়ন প্রক্রিয়াধীন বলে জানায় বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]