ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গত বৃহস্পতিবার রাতে হেনস্তার শিকার এক তরুণী এসব কথা বলেন। ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, এফ রহমান হলের সামনে মোটরসাইকেলে থাকা এক ব্যক্তি আমাকে স্পর্শ করে। খামচে আমার পরিহিত জামার সামনের অংশ ছিঁড়ে ফেলে। এরপর সেই ব্যক্তি আমাকে চোখ রাঙ্গিয়ে হাতের ঈশারায় কিছু একটা বলে। সে আমাকে শারীরিকভাবে হেনস্তার জন্য এই কাজটি করেছে। আমার গলায় কোনো স্বর্ণের গহনা ছিল না। আমি কানে হেডফোন দিয়ে গান শুনতে শুনতে রিকশায় যাচ্ছিলাম।আমি চিৎকার করলে সে দ্রুত গালাগাল করতে করতে পালিয়ে যায়। মানুষ কতোটা ভয়ঙ্কর হলে একটি মেয়ের জামা টেনে এভাবে ছিঁড়তে পারে।হেনস্তার ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলা করেছেন ওই তরুণী। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই মাঈনুল ইসলাম বলেন, আমরা এ বিষয়ে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। এখনো কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। আমাদের তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ ব্যাপারে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুত হাওলাদার বলেন, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। ঘটনাটি তদন্তে আমরা কাজ করছি।হেনস্তার শিকার তরুণী আরও বলেন, হতাশার জায়গা থেকে ফেসবুকে একটা পোস্ট করি। সেখান থেকে সবাই বিষয়টি জানতে পারে। এরপর অনেকে আমাকে এই বিষয়ে মুখ খুলতে বলে। পরে আমি থানায় গিয়ে অভিযোগ দেই। পুলিশও আমাকে অনেক সহযোগিতা করছে। তিনি বলেন, প্রতিদিন রাস্তাঘাটে মেয়েরা এরকম হেনস্তার শিকার হচ্ছে। আমি এ বিষয়ে মুখ খুলেছি বলে সবাই জানতে পারছে। প্রতিদিন কর্মস্থল বা অন্য কাজে বের হলে মেয়েরা যে ঘটনার মধ্যে যায় আমারটাও সেরকম। আমি বিষয়টি নিয়ে বলার কারণ হলো সবাই যেন সাহস করে মুখ খোলে। ভয় এবং হতাশায় ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো যেন মানুষ নিজের মধ্যে রেখে না দেয়। আমি চাই সবাই কথা বলুক। আমি একটি রেডিওতে ভয়েস অর্টিস্ট হিসেবে কর্মরত। আশাকরি এ অপরাধীকে পুলিশ খুঁজে পাবে। আমার পরিবারের সবাই আমাকে সহযোগিতা করছে। বিশেষ করে আমার মা আমাকে খুব বেশি সাপোর্ট দিচ্ছে। মা প্রথমে ভয় পাচ্ছিলো। এটা নিয়ে পরবর্তীতে যদি কোনো ধরনের ঝামেলা হয়। তখন আমি মাকে বিষয়টি বুঝিয়ে বলি। এর আগে বৃহস্পতিবার ওই তরুণী নিজের ফেসবুক ওয়ালে স্ট্যাটাস দিয়ে ঘটনার বর্ণনা দেন। তাতে লিখেছেন, এই যে আমার ছেঁড়া জামাটা দেখতেছেন, এটাই আপনাদের বাংলাদেশ। এই দেশে মেয়েদের মলেস্ট হওয়া, হ্যারাস হওয়া, রেপ হওয়া, গালি খাওয়া স্বাভাবিকভাবে মেনে থাকতে পারলে থাকেন, নইলে এই রাগে দুঃখে ট্রমাটাইজ হয়ে সুইসাইড করেন, মরে যান, যা খুশি করেন কিন্তু প্রতিরোধ কিংবা বিচারের আশা কইরেন না। তিনি আরও লিখেছেন, একটা লোক বাইক নিয়ে রিকশার পেছন থেকে এসে আমার বুক খামচে টেনে হিঁচরে জামা ছিঁড়ে আমাকেই গালাগাল করতে করতে চলে গেলো। আশপাশে একটা পুলিশ নাই, একটা মানুষ এসে ধরল না, আমার চিৎকার শুনে। আমি কিচ্ছু করতে পারলাম না। আমার শরীর এখনো কাঁপতেছে ভয়ে। গত কয়েকমাস যাবৎ আমি ভয়ঙ্করভাবে মেন্টালি আন্সটেবল। আজকেও আমার মনের অবস্থা ঠিক ছিল না। কানে হেডফোন দিয়ে গান শুনতে শুনতে বাসায় ফিরতেছিলাম। আমার এই ড্রেসে ঠিক কি খারাপ ছিল যার কারণে এমন ঘটনা ঘটলো? পোশাকের দোষ দেয়া মানুষগুলো সালোয়ার কামিজে একটা মেয়েকে কি নিয়ে দোষ দিবে? আমার সঙ্গে এমনটা কেন হলো? কখনো ভাবিনাই আমার ঢাকা শহরে আমার সঙ্গেই এমন কিছু হতে পারে! তরুণী আরও লিখেছেন, এই দেশে থাকতে চাইলে বিনিময়ে রাস্তাঘাটে গায়ে হাত দেয়ার পারমিশন দিতে হবে? নাকি এখন সন্ধ্যার পর বাসার বাইরে বের হওয়া বন্ধ করে দিবো? আর কারে গিয়ে বললে একটু স্বাভাবিক সিকিউরভাবে এদেশে বাঁচতে পারবো?