রেজিঃ নং ডিএ ৬০০৯ | বর্ষ ১৪ | ৪ পৃষ্ঠা ৩ টাকা || সোমবার | ২৫ নভেম্বর ২০২৪ | ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
তরুনীর প্রান বাঁচালো স্বেচ্ছসেবীদের অক্সিজেন
রেদোয়ান হাসান সাভার,ঢাকা প্রতিনিধি দৈনিক শিরোমণিঃ
দুপুর বেলা হঠাৎ প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হয় মেয়েটির। বাইরেও মুষুলধারে বৃষ্টি ঝড়ছে। স্ত্রীকে বাঁচাতে পাগলপ্রায় তখন স্বামী। পরিচিতজনদের জানাতেই পেয়ে যান অক্সিজেন সেবার একটি হটলাইন নম্বর। ফোন করতেই ১০-১৫মিনিটের মিনিটের মধ্যেই বাসার ছয় তলায় হাজির দুটি অক্সিজেন সিলিন্ডার। সিঁড়ি বেয়ে হন্তদন্ত হয়ে আসা দুই কিশোর তখন সিলিন্ডার হাতে হাপাচ্ছিলো। রোগীকে ফ্লোরে পড়ে থাকতে দেখে দ্রুত তারা অক্সিজেন মাপলো। পরে নজেল লাগানোসহ বাকী কাজ করলো পুরোদস্তর সেবকের মতোই। অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় ছয়তলা থেকে আরেকজনের সহায়তায় রোগীকে নামিয়ে হাসপাতালে পৌছে দিল দুই কিশোর। আইসিইউতে ভর্তির পর চিকিৎসক জানালেন, সময়মতো রোগীকে আনা না গেলে হয়তো দুর্ঘটনা ঘটতো।এভাবেই রাতি-দিন রোদ, ঝড় ও বৃষ্টি উপেক্ষ করে করোনা মহামারিতে মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে কোভিড এক্সপ্রেস হেল্প ইউনিট নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। যারা নিজেরাই এই সংকটে নিজেদের করেছেন প্রস্তুত। করোনায় নিজেদের স্বজন হারানো কিংবা শ্বাসকষ্টে ভোগাদের দেখেই এই মহান কাজ শুরু করেছেন তারা। মাত্র কয়েক মাসের যাত্রায় বাঁচিয়েছেন বেশ কজনের সংকটাপন্নদের প্রান। সাভারের ব্যাংকটাউন এলাকার এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের দুই কিশোর জুনায়েদ ইসলাম ও ইয়াসিন আরাফাত সিয়াম বৃহস্পতিবার দুপুরে হটলাইনের কল পেয়ে বৃষ্টির মধ্যেই ছুটে যান সিলিন্ডার নিয়ে। ব্যাংক টাউনের এক নম্বর সড়কে রিয়ান মাহমুদের ছয় তলার ফ্ল্যাটে দুটি সিলিন্ডার অনেক কষ্ট স্বত্ত্বেও টেনে তোলেন তারা। কোভিড এক্সপ্রেস হেল্প ইউনিটের স্বেচ্ছাসেবী দশম শ্রেণী পড়ুয়া জুনায়েদ আহমেদ বলেন, দুপুরে আমাদের সংগঠনের সেক্রেটারী বিদ্যুত ভাইয়ের হটলাইন নম্বরে কল আসে। তিনি আমাদের জানালে দ্রুত আমরা দুটি সিলিন্ডার নিয়ে বৃষ্টির মধ্যেই ছুটে যাই ওই বাসায়। ছয়তলার ফ্ল্যাটে সিঁড়ি বেয়ে উঠতেই দেখি রোগীটি শ্বাসকষ্টে ফ্লোরে গড়াগড়ি দিচ্ছেন। দ্রুত তার অক্সিজেন মেপে দেখি লেভেল উপরেরটা ১০২ ও নিচেরটা ছিলো ১০১। যে জায়গায় একজন স্বাভাবিক মানুষের অক্সিজেন লেভেল থাকা উচিত ৭০-৮০। পরে নজেল লাগিয়ে ওনাকে অক্সিজেন দেই। এসময় রোগীর হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিলো। তখন দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য ছয়তলা থেকে ধরে নিয়ে নিচে আনি। পরে ওনাদের ব্যক্তিগত গাড়িতে করে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি। তখন ডাক্তার আমাদের জানায়, দেরি হলে হয়তো দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো। কিভাবে এসব আয়ত্ব করেছেন এমন প্রশ্নে বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের সেক্রেটারী বিদ্যুৎ ভাই এসব শিখিয়েছেন। ১৫ দিন কোন সিচুয়েশনে কি করতে হয় এসব ট্রেনিং করিয়েছেন। আমার কাজ করতে খুব ভালো লাগে। খুব প্রাউড ফিল হয় যখন আমার কারণে কোন প্রান বাঁচে। কারো মুখে হাসি ফোটে।শ্বাসকষ্টে ভোগ বিলকিস আক্তার সাথীর স্বামী রিয়ান মাহমুদ বলেন, ‘আমার স্ত্রীর আগে থেকেই শ্বাসকষ্টজনিত রোগ। আজ দুপুরে হঠাৎ করেই ও মারাত্মক অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। বাইরে তখন মুষুলধারে বৃষ্টি পড়ছিলো। কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। পরিচিত একজনকে ফোন করে জানাতেই সে একটা হটলাইন নম্বর দিলো। পরে সেখানে জানানোর কিছুক্ষণ পরে দুই কিশোর সিলিন্ডার নিয়ে আমার ফ্ল্যাটে আসে। আমার স্ত্রীকে তারা সবধরণের সেবা দিয়ে হাসপাতালে পৌছে দেয়। আমার স্ত্রী এখন ভালো আছেন। তাদের ধন্যবাদ দেওয়ার ভাষা আমার নাই। আর ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতেও চাই না। ওনাদের অক্সিজেনের কারণে আজ আমার স্ত্রী প্রানে বেঁচে ফিরেছে।কোভিড এক্সপ্রেস হেল্প ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান বিদ্যুৎ বলেন, ‘গত ২৯ এ্প্রিল করোনায় আমার মামীকে হারিয়েছি। ওই সময় করোনা ইউনিটের একটা বেডের জন্য আমি অনেক আকুতি করেছিলাম। পরে আমার মা’য়েরও করোনা সিম্পট দেখা দেয়। এরপর এলাকার রুবেল আহমেদ ভাইয়ের বাবা করোনা আক্রান্ত হন। তাকে প্রতিদিন বাসায় অক্সিজেন দিতে হতো। মা আর ওনার অক্সিজেন দেওয়া দেখতে দেখতে আমিও শিখে গেছি। তখন রুবেল ভাই উদ্যোগটা নিলেন। করোনায় এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের স্বজন ও এলাকার লোকদের জন্য কিছু করা প্রয়োজন। তখন ওনার অর্থায়নে আমরা দুই-তিনটা সিলিন্ডার কিনি। পরে ওনার ব্যবসায়িক পার্টনারও অর্থায়ন করলে আরো ১০টা সিলিন্ডার কিনি। আমাদের ব্যাংকটাউন এলাকা ও আশপাশ থেকে প্রায় ১৬জন ভলানটিয়ার যুক্ত করি। তাদের প্রশিক্ষণও দেই। এভাবে গত কয়েক মাসে আমাদের ব্যাংকটাউনের বেশ কয়েকজন মুমুর্ষূ রোগীকে আমরা অক্সিজেন সেবা দিয়েছি। তবে এসবের পিছনে আমাদের সার্বিক সহযোগিতা করেছেন সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব ভাই।’
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]
Copyright © 2024 দৈনিক শিরোমনি | shiromoni.com. All rights reserved.