রেজিঃ নং ডিএ ৬০০৯ | বর্ষ ১৪ | ৪ পৃষ্ঠা ৩ টাকা || মঙ্গলবার | ২৬ নভেম্বর ২০২৪ | ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
তালার আব্দুর রবের নাম নেই পূর্ণাঙ্গ বুদ্ধিজীবী তালিকায়
কাজী জীবন বারী, তালা সাতক্ষীরা প্রতিনিধি দৈনিক শিরোমণিঃ তালায় স্বাধীনতা ৫০ বছর পার হলেও শহীদ বুদ্ধিজীবী পূর্ণাঙ্গ তালিকায় ঠাঁয় মেলেনি পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্পে হত্যা করে কপোতাক্ষ নদে ভাসিয়ে দেওয়া ডাক্তার আব্দুর রবের নাম।১৯৭১সালে ৩রা আগষ্ট সাতক্ষীরা তালার মাঝিয়াড়া গ্রামের ডাক্তার সৈয়দ আব্দুর রব তালা উপজেলা তিন রাস্তার মোড়ে তার নিজ চিকিৎসালয়ে তৎকালীন জয় বাংলার পতাকা উত্তোলনের অপরাধে খুলনা জেলার কপিলমুনি পাকিস্তানি ক্যাম্পে ধরে নিয়ে বর্বরতা চালিয়ে হত্যা করে কপোতাক্ষ নদে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন।শহীদ বুদ্ধিজীবী সংজ্ঞায় চিকিৎসক শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসাবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় গেজেটে অন্তর্ভূক্ত জরুরী।২৫ জানুয়ারী সাংবাদিকদের সাথে সাক্ষাৎ কালে এমনটাই দাবি করেছেন ডাক্তার সৈয়দ আব্দুর রবের ছেলে সৈয়দ আব্দুল্লাহেল কাফী (মঞ্জু) । সূত্র মতে জানা যায়, এমন করুন মৃত্যু বরণ কারী শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করে স্বয়ং স্বাধীনতা ঘোষক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৬ মার্চ ১৯৭২ সালে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ গনপ্রজাতান্ত্রী বাংলাদেশ সরকার - ঢাকার ১৮১৩ নং স্মারকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে সারাদেশে মুক্তিযুদ্ধের শহীদ পরিবারকে সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি আর্থিক সহায়তা দেন। এমনই এক মুক্তিযুদ্ধের শহীদ পরিবার সাতক্ষীরার তালা উপজেলার মাঝিয়াড়া গ্রামের হোমিও চিকিৎসক ডা. সৈয়দ আব্দুর রব। মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের বইয়ের তালিকায় নাম থাকলেও নেই শহীদ পরিবারের সরকারি তালিকায়। দীর্ঘ ৫০ বছর পরে হলেও বাড়িতে পাওয়া গেছে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাক্ষরিত একটি চিঠি। "" বঙ্গবন্ধু চিঠিতে উল্লেখ করেন, ‘আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে আপনার সুযোগ্য স্বামী আত্মৎসর্গ করেছেন। আপনাকে আমি গভীর দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি, আমার আন্তরিক সমবেদনা। আপনার শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতিও রইলো আমার প্রাণঢালা সহানুভূতি। এমন নিঃস্বার্থ মহান দেশ প্রেমিকের স্ত্রী হওয়ার গৌরব লাভ করে সত্যি আপনি ধন্য হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে আপনার পরিবারের সাহায্যার্থে আপনার সংশ্লিষ্ট মহকুমা প্রশাসকের নিকট এক হাজার টাকার চেক প্রেরিত হলো"" চেক নং আত্র -০১৩৬৯৮ ।শহীদ বুদ্ধিজীবী ডাক্তার সৈয়দ আব্দুর রব সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার মাঝিয়াড়া গ্রামের সৈয়দ হাফেজ হযরতুল্লাহর পূত্র। তার লাশটি পর্যন্ত পরিবার দেখতে পাইনি পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা সম্ভব হয়নি কপোতাক্ষ নদের কোথায় আছে সকলের অজানা। আব্দুর রব শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসাবে প্রত্যয়ন পত্র দিয়েছেন তালা সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সাংবাদিক এসএম নজরুল ইসলাম তালা উপজেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মফিজ উদ্দিন। বি এল এফ ( মুজিব বাহিনী) লিডার বৃহত্তম খুলনা জেলার শেখ কামরুজ্জামান টুকু ও তালা উপজেলা চেয়ারম্যান সহ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এত কিছুর পরেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া সেই চিঠি নিয়ে তার পুত্র এখন ঘুরছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দরজায়। বাংলা একাডেমি প্রকাশিত শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষ গ্রন্থে বুদ্ধিজীবীদের সংজ্ঞা ও ১৪ ডিসেম্বর ২০২১ সালে শহীদ বুদ্ধিজীবী সর্বশেষ সংজ্ঞা প্রকাশ করা হয়েছে সেখানে উল্লেখ আছে যে, সাহিত্যিক, দার্শনিক, বিজ্ঞানী, চিত্রশিল্পী, শিক্ষক, গবেষক, সাংবাদিক, আইনজীবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, স্থপতি, ভাস্কর, সরকারি-বেসরকারি কর্মচারী, রাজনীতিবিদ, সমাজসেবী, সংস্কৃতিসেবী, চলচ্চিত্র, নাটক-সংগীত ও শিল্পকলার অন্যান্য শাখার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি, যাঁরা বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন এবং পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী কিংবা তাদের সহযোগীদের হাতে শহীদ কিংবা চিরতরে নিখোঁজ হয়েছেন, তাঁরা শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসেবে বিবেচিত হবেন।তালার সৈয়দ আব্দুর রব এর পুত্র আব্দুল্লাহেল কাফী মঞ্জু সর্বশেষ ১৭ জানুয়ারি ২০২২ সালে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জা মু কা )য়, শুধুমাত্র হত্যার পর কপোতাক্ষ নদে ভাসিয়ে দেওয়া (নিখোঁজ কৃত) পিতার নাম শহীদ বুদ্ধিজীবী হিসাবে চুড়ান্ত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রার্থনা করেছেন।শহীদ বুদ্ধিজীবী আব্দুর রবের ছোট ছেলে ডাক্তার সৈয়দ আব্দুল্লাহেল কাফি মঞ্জু জানান, তালা বাজারে মনোয়ারা ফার্মেসিতে বাবা জয় বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন। সেই অপরাধে পয়লা আগস্ট পাকিস্তানি সেনারা বাবাকে দোকান থেকে পার্শ্ববর্তী কপিলমুনি রাজাকার ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যায় দুইদিন আটকে রেখে নির্যাতনের পর ৩ আগস্ট রাতে গুলি করে হত্যা করে তার পিতার শহীদ দেহটি কপোতাক্ষ নদে ভাসিয়ে দেয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান তার মাকে সমবেদনা জানিয়ে চিঠি ও আর্থিক সহায়তা পাঠান। তবে সেই চিঠিটি অক্ষত রয়ে যায় সবার অগোচরে। কিছু দিন আগে বাড়ি থেকে পাওয়া যায় বঙ্গবন্ধুর পাঠানো সেই চিঠিটি। এ বিষয়ে তালা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মফিজ উদ্দীন জানান সাতক্ষীরা জেলা মুক্তিযুদ্ধের শহীদ বইয়ের যে তালিকা আছে সেই তালিকায় ডাক্তার সৈয়দ আব্দুর রবের নাম আছে।সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান এটি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের বিষয়, যদি পরিবার থেকে মুক্তিযোদ্ধারা মন্ত্রণালয়ের আবেদন করেন সেটা আমাদের কাছে আসবে আর আসলেই তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন পাঠানো হবে। এবং যদি সকল তথ্য সঠিক থাকে তাহলে তাকে গেজেট এর আওতাধীন করার সুপারিশ করা হবে। এবং মুক্তিযুদ্ধা মন্ত্রণালয়ের গেজেট প্রকাশ হলে ঐ পরিবার সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা পাবেন।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]
Copyright © 2024 দৈনিক শিরোমনি | shiromoni.com. All rights reserved.