প্রিন্স মোল্যা, তেরখাদা উপজেলা প্রতিনিধি: তেরখাদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের বেশিরভাগ পদই শুন্য। ফলে রোগিরা কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেনা। হাসপাতালটিতে এনেস্থেশিয়া থাকলেও সার্জারি চিকিৎসক না থাকায় অপারেশন থিয়েটারে ঝুলছে তালা। ফলে জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে উপজেলার লাখো মানুষের স্বাস্থ্যসেবা। বাধ্য হয়ে রোগীদের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হচ্ছে খুলনা সদরে। উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির ওপর নির্ভরশীল। এছাড়া প্রতিদিন গড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ জনের অধিক রোগী চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে। তবে বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, আগের ৩১ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি বর্তমানে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। বর্তমানে সেখানে ২৯ জন চিকিৎসকের বিপরীতে রয়েছেন মাত্র ৭ জন চিকিৎসক। স্থানীয়রা জানান, কথিত হলুদ সাংবাদিক সুযোগ সুবিধা ও স্বার্থসিদ্ধি করতে ব্যর্থ হয়ে স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তিন দুর্নীতি পরায়ন কর্মচারির নাম ব্যবহার করে ফেসবুক সহ বিভিন্ন দপ্তরে ভূয়া দরখাস্ত করে অভিযোগ তুলেছে। আদমপুর এলাকার বাসীন্দা সেলিম বলেন, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. তানিয়া রহমান যোগদানের পর ডাক্তার সংকটেও অনেক ভালো পরিবেশে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে এবং রোগিদের উন্নত মানের খাবার দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসা সেবায় গতি এসেছে। জানা গেছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে জুনিয়র কনসালটেন্ট মেডিসিন, জুনিয়র কনসালটেন্ট গাইনি, জুনিয়র কনসালটেন্ট সার্জারী, ইএনটি বিশেষজ্ঞ, শিশু বিশেষজ্ঞ, অর্থোপেডিকস, কার্ডিওলজি, চক্ষু, চর্ম, রেডিওগ্রাফি, ফিজিওথেরাপিসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের চিকিৎসক নেই। ফলে চাহিদা অনুযায়ী চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না উপজেলাবাসী। “অনেকে ঝামেলার কারণে খুলনা গিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে সেখানেই পরীক্ষা নিরীক্ষা করায়। এতে আর্থিকভাবে মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।” স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির সিনিয়র স্টাফ নার্স মীনা খানম বলেন, অপারেশন থিয়েটারটিতে সব ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত যন্ত্রপাতি থাকা সত্তে¡ও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের অভাবে এটি চালু করা যাচ্ছে না। সার্জারি চিকিৎসক না থাকায় এনেস্থেশিয়া চিকিৎসক থাকলেও অপারেশন হয়না। ফলে সামান্য সার্জারির জন্যও রোগীদের খুলনায় যেতে হয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন জাহিদুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির সব বিভাগে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া দরকার। অন্যথায় সবার পক্ষে খরচ দিয়ে খুলনায় গিয়ে চিকিৎসা করানো সম্ভব না। আরেক রোগী কালাম বলেন, এখানে সব রোগের চিকিৎসা হয় না। এমনকি পরীক্ষা নিরীক্ষাও হয় না। যেসব চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয় তার পরিক্ষা নিরিক্ষা করতে আবার খুলনায় যেতে হয়। ফলে অনেকে ঝামেলার কারণে খুলনায় গিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে সেখানেই পরীক্ষা নিরীক্ষা করায়। এতে আর্থিকভাবে মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। তেরখাদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তানিয়া রহমান বলেন, ৩০ শয্যার হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও প্রয়োজনীয় জনবল বাড়ানো হয়নি। আমাদের এখানে ২৯ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ৭ জন। ফলে আশানুরূপ চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তারা ব্যবস্থা নিলে এ সংকট দূর হবে।