রেজিঃ নং ডিএ ৬০০৯ | বর্ষ ১৪ | ৪ পৃষ্ঠা ৩ টাকা || মঙ্গলবার | ২৬ নভেম্বর ২০২৪ | ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
চিংথোয়াই অং মার্মা,থানচি (বান্দরবান) প্রতিনিধিঃ বান্দরবানে থানচির সাংঙ্গু নদীর দুইপাড় চরের জমিগুলোতে চীনা বাদাম ব্যাপকভাবে চাষাবাদ ঘটে। একসময় এসব জমিতে পুরোটা দখল করে রেখেছিল তামাক। বিগত এক যুগ ধরে যেসব জমিতে তামাকে দাপট দেখা গেছে, সেসব জমিতে নেই তামাকের অস্তিত্ব। বর্তমানে তামাকের জায়গা দখলে নিচ্ছে চীনা বাদাম। এই সাঙ্গু নদীর দুই পাড়ে জমিগুলোতে স্থানীয় চাষিরা চীনা বাদাম চাষ করে ভালো ফলনের সফলতা পাওয়ায় দিন দিন অনেকেই বাদাম চাষের লিপ্ত হচ্ছে। এবছরে ইতিমধ্যে অনেকেই জমি থেকে বাদাম তুলেছেন এবং বাকীগুলোও তোলা হবে।
থানচি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সূত্রে জানা যায়, এবার থানচি উপজেলায় সাংঙ্গু নদীর দুইপাড়ে ২শত হেক্টর জমিতে চীনা বাদাম চাষ হচ্ছে। এসব জমিতে দুই দানা ও তিন দানা চীনা বাদাম ভালো ফলনের কৃষকেরাও এই বাদামের চাষাবাদ বেশি করে থাকে।
আরো জানা গেছে, বর্ষা মৌসুমে পাহাড় থেকে নেমে আসা মাটিসহ বালু জমে নদীর দুইপাড় চরের জমির উর্বরতা বাড়ে। সেসব জমিতে চীনা বাদাম চাষের ভালো ফলন ঘটে। বিশ্বের অন্যতম প্রধান তেলবীজ ফসল হচ্ছে চীনা বাদাম। বর্তমানে যে পরিমাণ চীনা বাদাম দেশে উৎপাদিত হচ্ছে, তা দেশের মোট চাহিদার এক তৃতীয়াংশ। তাই চাহিদা পূরণে চীনা বাদাম চাষাবাদের গুরুত্ব প্রদানে প্রয়োজন রয়েছে।
এদিকে কৃষকেরা জানিয়েছেন, থানচি উপজেলায় সাঙ্গু নদীর দুইপাড়ে জেগে ওঠা চর ও নদীর পার্শ্ববর্তী জমিগুলোতে একসময় তামাক চাষ করে আসছে। এবার কয়েক বছর যাবত ধরে তামাকের জায়গা দখলে চীনা বাদাম চাষ করা হচ্ছে। এসব জমিতে চীনা বাদামের চাষের গত বছরে তুলনা এবছরেও বাদামের ভালো ফলন হয়েছে। এ জন্য অনেকেই বাদাম চাষের দিকে ঝুঁকছেন।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা গেছে, সাঙ্গু নদীর তীরবর্তী বলিপাড়া বাজার ঘাট, আইলমারা পাড়া, বাগান পাড়া, বলিপাড়া, ডাকছৈ পাড়া, মনাই পাড়া, ক্রংক্ষ্যং পাড়া, ঙাইক্ষ্যংপাড়া, ক্যোয়াইজৈ পাড়া, ছান্দাক পাড়া, জিনিঅং পাড়া, নাইন্দারী পাড়া, আপ্রুমং পাড়া, নারিকেল পাড়া, থানচি বাজার ঘাট এলাকাসহ বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ব্যাপকহারে চীনা বাদাম চাষ করা হয়েছে। বাদাম আবাদ চাষের কৃষকের অনেকেই জমি থেকে বাদাম তুলা হচ্ছে এবং বাকিগুলোও তোলা হবে।
এদিকে সরেজমিনে চীনা বাদাম চাষ করার বহুজনে চাষিদের সাথে কথা হয়। তাঁরা বলেন, আমরা বিগত এক যুগ ধরে তামাক চাষ করে আসছিলাম। কয়েক বছর আগেও জমির অর্ধেক অংশে তামাক চাষ করলে অনেকেই কমবেশি লোকসানের তামাক ছেড়ে চীনা বাদাম আবাদ চাষের শুরু করেছে।
তারা আরো বলেন, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তাদের পরামর্শে এলাকার স্থানীয়দের আলাদা আলাদা মালিকানায় জমিগুলোতে কমবেশি দুই দানা ও তিন দানা চীনা বাদাম চাষ করছি। বাদাম চাষের প্রতিবছর লাভবান হচ্ছে চাষিরা। তামাক চাষের পরিশ্রমও বেশি। তবে সে তুলনায় বাদাম চাষ সহজ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকিও নেই।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, ফেব্রুয়ারী ও মার্চ মাসে বাজারে বাদাম বিক্রি হয়। এবছরে কেজিপ্রতি ৮০ থেকে ১১০ টাকায় কেনেন তাঁরা। তবে মার্চের প্রথম সপ্তাহে বিক্রি করলে দাম বেশি পাওয়া যায়। এপ্রিলের শেষ দিকে বৃষ্টির পানি লাগলে ফলনে কালো দাগ হয়। ফলে বাজারজাত সুবিধা হয় না।
তাঁরা আরো বলেন, বহিঃরাগত ব্যবসায়ীদের কাছে চাষির অনেকেই জমির হেক্টরের হিসাবে বাদাম বিক্রি করেছে। এতে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ কমবেশি বাদাম মজুদ পান।
উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিপ্লব মারমা জানান, এখন তামাক চাষের সঙ্গে যুক্ত এমন কৃষক নেই বললে চলে। এবার প্রায় ৫শত চাষির ২শত হেক্টর জমিতে চীনা বাদাম আবাদ চাষ করছেন। এসব বাদাম বিক্রি করে চাষিরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে অনেকেই।
তিনি আরো বলেন, সাংঙ্গু নদীর দুইপাড় চরের চীনা বাদাম চাষের হেক্টরপ্রতি বাদাম দ্বিগুন ভালো ফলন হচ্ছে, যা অনেক চাষিদের দুই বছর আগের তুলনায় দ্বিগুণ উৎপাদন বাদাম পাচ্ছে ও লাভবান হচ্ছে।