জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে আজ শনিবার (২৭ মার্চ) ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গোপালগঞ্জ যাবেন। তাকে সেখানে স্বাগত জানাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দুই প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে গোপালগঞ্জ জেলাজুড়ে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। টুঙ্গিপাড়া সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স ও কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দি ঠাকুর বাড়িকে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির আগমনের খবরে মতুয়াদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে। টুঙ্গিপাড়া ও কাশিয়ানীর ওড়াকান্দিতে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। মোদিকে উলুধ্বনি, শঙ্খ ও ডঙ্কা-কাঁসা বাজিয়ে বরণ করে নেবেন ঠাকুর বাড়ির মতুয়ারা।
২৫ মার্চ জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার-১ মোহাম্মদ শামীম মুসফিক স্বাক্ষরিত এক ফ্যাক্স বার্তায় জানানো হয়, সকাল ৮ টা ৫০ মিনিটে গণভবন থেকে রওনা হয়ে সকাল ৯টায় বিমানবন্দরে উপস্থিত হয়ে টুঙ্গিপাড়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল ৯ টা ৪০ মিনিটে টুঙ্গিপাড়া হেলিপ্যাডে অবতরণ করে ১০ টা ৪৫ মিনিটে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অভ্যর্থনা জানাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
১০ টা ৫০ মিনেটে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সঙ্গে নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ বেদিতে পুস্পমাল্য অর্পণ করে গভীর শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর দুই প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স পরিদর্শন করবেন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী গাছের চারা রোপণ করার সময় তিনি সঙ্গে থাকবেন। বেলা ১১ টা ২৫ মিনেট নরেন্দ্র মোদি টুঙ্গিপাড়া থেকে কাশিয়ানীর ওড়াকান্দির উদ্দেশ্যে রওনা হবেন এবং ১১ টা ৩৫ মিনিটে মতুয়া সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান হরিচাঁদের ঠাকুরের বাড়িতে পৌঁছাবেন।
এরপর তিনি সেখানে পূজা আর্চনা করবেন। পরে তিনি ঠাকুর বাড়ির সদস্য ও মতুয়া নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। পরে বেলা ১১ টা ৫০ মিনিটে নরেন্দ্র মোদি হেলিকপ্টারযোগে কাশিয়ানী উপজেলার ওড়াকান্দির ঠাকুর বাড়ি ত্যাগ করবেন বলে জানা গেছে। দুপুর ১২টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারযোগে ঢাকার উদ্দেশ্যে টুঙ্গিপাড়া ত্যাগ করবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নিরাপত্তা নিশ্চিতে তৎপর রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঠাকুরবাড়ি ও আশপাশের চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নেওয়া হয়েছে চারস্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী। গোটা এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। ঠাকুরবাড়ির চারপাশ বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে।
গোপালগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী এহসানুল হক বলেন, টুঙ্গিপাড়া বঙ্গবন্ধুর সমাধি কমপ্লেক্স সংস্কার ও শোভাবর্ধন এবং কাশিয়ানীর ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়িতে জরুরি ভিত্তিতে চারটি হেলিপ্যাড ও হেলিপ্যাড থেকে ঠাকুর বাড়িতে যেতে সড়ক নির্মাণ, ঠাকুরবাড়ির অভিমুখী সংযোগ সড়কগুলো সংস্কার ও শোভাবর্ধন করা হয়েছে।
এ ছাড়া ভিআইপি গেস্ট হাউজ, বিশ্রামাগার, পাবলিক টয়লেট ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা করেছে জেলা জনস্বাস্থ্য ও প্রকৌশল বিভাগ। প্রস্তুত রাখা হয়েছে হাসপাতাল, অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস।
মতুয়া ভক্ত সাথী বিশ্বাস বলেন, ঠাকুর বাড়ি মতুয়া সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান। প্রতি বছর লাখ লাখ মতুয়া ভক্ত স্নানোৎসবে অংশ নিতে ঠাকুর বাড়িতে আসেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ঠাকুর বাড়ি আসার খবরে আমরা খুবই আনন্দিত। তার আগমনে আমরা মতুয়া সম্প্রদায় ধন্য হবো। এতে দুই দেশের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে।
ঠাকুর পরিবারের সদস্য ও সেবায়েত পদ্মনাভ ঠাকুর বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টার থেকে নামার পর হরিচাঁদ-গুরুচাঁদ ঠাকুরের মন্দিরে আসবেন। সেখানে তিনি পূজা শেষে মন্দিরের সামনেই ঠাকুরবাড়ির সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। এতে প্রায় সাড়ে ৩শ মতুয়া ভক্ত অংশ নেবেন।
হরিচাঁদ ঠাকুরের ষষ্ঠ পুরুষ ও কাশিয়ানী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সুব্রত হিল্টু ঠাকুর বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী ঠাকুরবাড়ির পক্ষ থেকে বরণ করে নিতে সাধ্যমতো প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ মতুয়া মহাসংঘের সভাপতি সীমা দেবী ঠাকুর বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী আমাদের এই ঠাকুরবাড়িতে আসছেন, এটা শুধু ঠাকুরবাড়ির গর্বের বিষয় নয়, সকল মতুয়ার কাছে গর্বের বিষয়। তিনি এলে আমরা হিন্দুধর্মীয় মতে উলুধ্বনি, শঙ্খ ও ডঙ্কা-কাঁসা বাজিয়ে তাকে স্বাগত জানানোর সব আয়োজন করে রেখেছি।
টুঙ্গিপাড়া পৌরসভার মেয়র শেখ তোজাম্মেল হক টুটুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির সফরকে ঘিরে টুঙ্গিপাড়ায় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সসহ পৌর এলাকা সর্বত্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, শোভাবর্ধন ও বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. বাবুল শেখ বলেন, দলীয় কর্মসূচির পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বরণ করে নিতে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রস্তুত রয়েছে।
গোপালগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী কাশিয়ানীর ওড়াকান্দি ঠাকুর বাড়ি সফর করবেন। এ সফরকে ঘিরে গোটা এলাকা নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে। গোয়েন্দা নজরদারি করা হচ্ছে। সফরকে সুষ্ঠু ও সফল করতে গোপালগঞ্জ জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী টুঙ্গিপাড়া এবং কাশিয়ানীর ওড়াকান্দি ঠাকুর বাড়ি সফর করবেন। এ সফরকে ঘিরে আমরা সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। এখন আমরা সফরের অপেক্ষা করছি। আশা করছি এই সফর সুন্দর ও সফল হবে।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]