শরণখোলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি,দৈনিক প্রতিনিধিঃ
বাগেরহাট জেলার পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের কর্মকর্তা (এসিএফ) জয়নাল আবেদীনের বিরুদ্ধে সুন্দরবনের অভয়ারণ্যের গোলপাতা কাটার সুযোগ দিয়ে লাখ টাকা ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সুন্দরবনের নিষিদ্ধ ঘোষিত শরণখোলা রেঞ্জ হতে টাকার বিনিময়ে যেসব বাওয়ালী গোলপাতা সংগ্রহ করেছেন তারাই পরবর্তীতে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ করেছেন।এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে জেলে, মেীয়াল সহ বনের উপরে নির্ভরশীল গোষ্ঠীর কাছ থেকে বিভিন্ন অযুহাতে ঘুষ বানিজ্য চালানোর অভিযোগ রয়েছে।তার এই বানিজ্যে অর্থ আদায়ের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে বন-জুড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তারই পৃষ্টপোষক (বোর্ড ম্যান) শামীম ও আনিসুর রহমান।তথ্য সুত্রে জানা যায়, সরকার কয়েক বছর ধরে সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জে বাওয়ালীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে এলাকাটিকে অভয়ারণ্য ঘোষণা করে । ফলে বাওয়ালীরা চাদপাঁই রেঞ্জে গোলপাতা কাটার পারমিট নেন। কিন্তু চাঁদপাই রেঞ্জে গোলপাতার অপ্রতুলতা, আকারে ছোট হওয়ায় বাওয়ালীদের টার্গেট থাকে অভয়ারণ্যের গোলপাতার দিকে। এসিএফ জয়নাল আবেদীনকে নৌকা প্রতি প্রায় ৪০,০০০/ টাকা দিয়ে এই সুযোগ নেয় বাওয়ালীরা । জয়নাল আবেদীন প্রায় শতাধিক নৌকা হতে সরাসরি এ টাকা গ্রহণ করেন বলে জানা গেছে। তাদের অভিযোগ এত বেশি টাকা দিয়ে গোলপাতা সংগ্রহ করে তাদের পোষায় না বলে গোলঝাড়ের ঠেকাপাতা ও জ্বালানী কেটে উজাড় করতে হয় অভয়ারণ্য। অভয়ারণ্য পরিদর্শণ করলে বন উজাড়ের প্রমাণ পাওয়া যাবে বলে সাউথখালীর বাওয়ালি শাহ আলম মোল্লা (৫৫) ও মান্নান হাওলাদার ( ৬০), খুড়িয়াখালীর রফিক হাওলাদার (৪৫), শরণখোলার নজরুল হাওলাদার (৬০) দাবি করেন ।এছাড়া এসিএফ জয়নাল আবেদীনের নেতৃত্বে জেলেদের কাছ থেকে নৌকা প্রতি পাঁচশত টাকা করে আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সুন্দরবনের বিশেষ বাহিনী স্মার্ট এর কর্মী ওয়েলম্যান দিলীপ ও বোর্টম্যান আনিস এই টাকা আদায়ের কাজে নিয়োজিত । শরণখোলা গ্রামের জেলে কামরুল ইসলাম, আব্দুস সালাম, আব্দুল মালেকসহ অনেকে বলেন, “স্মার্ট বাহিনীকে কমপক্ষে পাঁচশত টাকা দিতে হয় অনুমতি থাকা এলাকার মাছ ধরতে গেলে এবং তিন চার হাজার টাকা দিলে নিষিদ্ধ অভয়ারণ্যেও মাছ ধরা যায়।রণখোলা বাজারের ডিপো মালিক মিজান খান ও রিয়াদুল পহলানও একই অভিযোগ করেন ।মৌয়ালদের কাছ থেকে অন্যান্য বছর পাঁচ শ’ গ্রাম করে মধু নিলেও এবার দুই কেজি করে দিতে হচ্ছে । শরণখোলা এলাকার সোনাতলা গ্রামের মৌয়াল শহীদ হাওলাদার ও ইব্রাহিম ব্যাপারী বলেন, “অন্যান্য বছর আধা কেজি করে মধু নিলেও কোকিল মনির ক্যাম্প কর্মকর্তা আবুল হোসেন এ বছর দুই কেজি করে মধু দিতে বাধ্য করেন।সুন্দরবন সংশ্লিষ্টদের দাবী এসিএফ জয়নাল আবেদীনসহ অন্যান্যরা দীর্ঘদিন একই এলাকায় থাকার কারণে এ ধরনের অনিয়ম ঘটছে । জানা যায়, এসিএফ জয়নাল আবেদীন দুই বছর, ইঞ্জিনম্যান শামীম দশ বছর, বোর্টম্যান আনিস দশ বছর, বোর্টম্যান তৈয়ব পাটোয়ারী পচিশ বছর, বিএম বোর্টম্যান মাহবুব বিশ বছর শরণখোলা রেঞ্জে চাকরি করছেন ।জানতে চাইলে এসিএফ জয়নাল আবেদীন বলেন, “আমার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ ভিত্তিহীন, অভয়ারণ্যে গোলপাতা কাটার সুযোগ নেই। জেলে বা মৌয়ালদের কাছ থেকে কেউ টাকা নিয়ে থাকলে সে দায়িত্ব আমার না, আমি কোন টাকা নেয়নি তবে শুনেছি শরণখোলার সাংবাদিকরা দশ হাজার করে নেয়।সুন্দরবন পূর্ব বিভাগীয় বন কর্মকতা (ডিএফও) বেলায়েত হোসেনের কাছে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।তবে খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মোঃ মঈনুদ্দিন খান বলেন, “সাথে সাথে অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নিতে সুবিধা হয় । এরপরও তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]