মো. সুলতান রহমান বাপ্পি, ময়মনসিংহ জেলা প্রতিনিধি : দেশে এই প্রথম বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) স্থাপিত দেশীয় মাছের লাইভ জিন ব্যাংক উদ্বোধন করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শ. ম. রেজাউল করিম। এসময় তিনি বলেছেন পরিকল্পিভাবে মৎস্য সেক্টরের উন্নয়নে এগিয়ে যাচ্ছে সরকার। বিদেশে মাছ রপ্তানীর জন্য বিশ্বমানের ল্যাবরেটরী ঢাকায় স্থাপন করা হয়েছে। আমরা আশা করছি অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ বিশ্বের একটি অসাধারণ স্থানে পৌছাবে। বর্তমানে মৎস্য সেক্টরটি শিল্পে পরিণত হয়েছে। এই শিল্প বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ আধুনিক ও উন্নত সোনারবাংলায় পরিণত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আরো বলেন, মৎস্য খামারে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। এই পরিবর্তন এসেছে প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন দূরদর্শী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ফলে। শৈশব কৈশোর ও যৌবনে বেড়ে ওঠার সময় থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রান্তিক পর্যায় থেকে মাছের সাথে সম্পৃক্ত। তাই এই মৎস্য খাতকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে সামনে নিয়ে আসতে চান তিনি । সরকারের পরিকল্পিত ব্যবস্থা গ্রহনের ফলে ইলিশেরও উৎপাদন ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়ে বিশ্বে আমরা প্রথম স্থান লাভ করেছি।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী বলেন, বিএফআরআই মৎস্য বিজ্ঞানীদের মেধা ও দক্ষতায় দেশে বিলুপ্তপ্রায় পুষ্টিসমৃদ্ধ সুস্বাদু দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ উদ্ধার করে তা সংরক্ষণ করছে এবং তা চাষী পর্যায়ে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এর সাফল্যের সম্পর্ণ কৃতিত্বেও দাবীদার বিএফআরআই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএফআরআইকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন।
গত শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় বিএফআরআই অডিটরিয়ামে এক অনুষ্ঠানে বিএফআরআই মহাপরিচালক বিশিষ্ট মৎস্য বিজ্ঞানী ড. ইয়ািহয়া মাহমুদ এর সভাপতিত্বে আলোচনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ সচিব রওনক মাহমুদ, মৎস্য অধিদপ্তরের মহপরিচালক কাজী শামস আফরোজ, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শ্যামল চন্দ্র কর্মকার। বিএফআরআই স্বাদুপানি কেন্দ্রের চলমান গবেষণা কার্যক্রম কৈ মাছ, মনোসেক্স তেলাপিয়া এবং সাদা পাঙ্গাস মাছের জার্মপ্লাজম সম্প্রসারণের লক্ষ্যে মৎস্য অধিদপ্তরের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করবেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শ. ম. রেজাউল করিম। এসব জাতের জার্মপ্লাজম গ্রহন করেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহপরিচালক কাজী শামস আফরোজ।
এছাড়াও বিএফআরআই স্বাদুপানি কেন্দ্রের চলমান গবেষণা কার্যক্রম মাছের জাত উন্নয়ন, বিলুপ্তপ্রায় মাছ সংরক্ষণ ও চাষ, বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষ, অপ্রচলিত মৎস্য সম্পদ কুচিয়া ও মুক্তা চাষ, মহাশোল ও পাঙ্গাস মাছের প্রজনন ও চাষ ইত্যাদি পরিদর্শণ করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী অ্যাডভোকেট, শ. ম. রেজাউল করিম। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শ. ম. রেজাউল করিম আরো বলেন, বর্তমানে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, মৎস্য খাতের উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতি সচল তোলা হবে। প্রত্যেক বেকার মানুষ উদ্যোক্তা হওয়ার মাধ্যমে দারিদ্র্যতা, পুষ্টি, খাদ্য, আর্থিক দৈন্যতা দূর হবে। মৎস্যখাতে যারা বিনিয়োগ করবেন তাদের স্বল্প সূদে সহজ শর্তে আমরা ঋণের ব্যবস্থা করছি। মৎস্যখাতে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের আর্থিক প্রণোদনা দেয়া হবে। যেন তারা ঘুরে দাঁড়াতে পারে। শেখ হাসিনার আমলে যাতে কোনো মানুষ বিপদগ্রস্থ না থাকে। প্রকৃতিক দুর্যোগে যেন চাষীরা হাল ছেড়ে অসহায় অবস্থায় না পড়ে। চাষীাদের স্বাবলম্বী করার জন্য সম্ভব সব ধরণের সহায়তা দেয়া হবে। দেশের কোনো পুকুর মাছ চাষের বাইরে আমরা রাখতে দেব না। পুকুর খনন, আধুনিক জাতের মাছের পোনা সরবরাহ করব, মাছের খাবারের জন্য ভর্তুকি দেয়া হবে। চাষীদের দক্ষ কওে তুলতে বিভিন্ন ট্রেনিংএর ব্যবস্থা দেয়া হচ্ছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের একজন লোকও যাতে অনাহারে না থাকে সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে সরকার। করোনাকালীন একজন লোকও না খেয়ে মারা যায়নি। শেখ হাসিনার সরকার সুপরিকল্পিতভাবে সকলের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। আর্থিক সহায়তা দিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সাবলম্বী করা হচ্ছে। মানুষের খাবারের পাশাপাশি আমিষের চাহিদা পূরণে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় কাজ করছে। এই পুষ্টির যোগান যারা দিচ্ছেন তাদের নানা ধরণের সহায়তা দিচ্ছে সরকার। বিএফআরআই মহাপরিচালক বিশিষ্ট মৎস্য বিজ্ঞানী ড. ইয়ািহয়া মাহমুদ জানান, দেশে মোট ২৬০টি মাছের জাত রয়েছে তন্মধ্যে এই জিনব্যাংকে জীবিত দেশীয় ১৪৩টি ছোট দেশীয় প্রজাতির মাছ। তন্মধ্যে ৬৪টি মঠ বিলুপ্তপ্রায়। বিলুপ্তপ্রায় মাছ সংরক্ষণের জন্য বিএফআরআই গবেষণার মাধ্যমে ইতিমধ্যেই ২৪টি প্রজাতির দেশীয় মাছের প্রজনন ও চাষাবাদ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। উদ্ভাবিত এসব প্রযুক্তি মৎস্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে চাষী সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। ফলে বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় ছোট মাছের উৎপাদন বেড়েছে এবং বাজারে দেশীয় মাছের সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে যা ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]