দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ছোট-বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মেরূকরণ দিন দিন দৃশ্যমান হচ্ছে। বিশেষ করে ছোট দলগুলোর মধ্যে জোট গড়া নিয়ে আগ্রহ, উদ্যোগ আর দৌড়ঝাঁপ চলছে। বৈরিতা ভুলে কাছাকাছি আসার উদ্যোগ নিয়েছেন দলগুলোর নেতারা। সবগুলো দলই চাইছে তাদের অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে সমমনা ইসলামী দলগুলোকে নিয়ে একটি অভিন্ন প্ল্যাটফরম তৈরি করা এবং এ উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ। এ জন্য সমমনা ইসলামী দলগুলো ইতিমধ্যে নিজেদের মধ্যে সংলাপ শুরু করেছে। মূলত ইসলামী আন্দোলনের পক্ষ থেকে এই সংলাপের উদ্যোগ নেয়া হয়। দলটির মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমদের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়েছে। তারা সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক আলাপ-আলোচনা করছেন। ইতিমধ্যে খেলাফত আন্দোলন ও খেলাফত মজলিসের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা করেছেন। এ ছাড়া শিগগিরই ইসলামী ঐক্যজোট এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সঙ্গে সংলাপ হওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে জাতীয় পার্টির সঙ্গেও আলোচনা হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সম্প্রতি ইসলামী আন্দোলনের আমীরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন জামায়াত ছেড়ে নতুন দল গঠন করা এবি পার্টির নেতারা। এ ছাড়া নতুন দল গণঅধিকার পরিষদ ও এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজের সঙ্গেও অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে। এসব আলোচনায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং আন্দোলনকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। ইসলামী দলগুলোর নেতাদের ভাষ্য, অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে ‘একলা চল’ নীতির ফল ভালো হয়নি ইসলামী দলগুলোর। তাই আগামীতে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে নামার বিষয়ে আলোচনা করছেন তারা। সূত্রের খবর, ইসলামী দলগুলো জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনকে প্রাধান্য দিলেও দলীয় কৌশল প্রণয়ন করছে ভিন্নভাবেই। এদিকে দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনে অংশ না নেয়ার বিষয়ে বলছে অধিকাংশ ইসলামী দল। তারা বলছেন, ক্ষমতার রাজনীতিতে ইসলামী দলগুলোর তেমন গুরুত্ব না থাকলেও ভোটের মাঠে তাদের একটা প্রভাব আছে। সঙ্গত কারণে দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন সময়ে ইসলামী দলগুলোর সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করেছে। তবে অতীতে কোনো জোটে গিয়ে ইসলামী দলগুলোর তেমন লাভ হয়নি। তাই এখন সময় এসেছে নিজেদের মধ্যে ঐক্য তৈরি করা। যে ঐক্যের মধ্যদিয়ে দেশে তৃতীয় একটি রাজনৈতিক শক্তির উত্থান হবে। আর দলীয় সরকারের অধীনে যে কখনো সুষ্ঠু এবং অবাধ নির্বাচন সম্ভব নয় তা গত দুই নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে। তাই নিরপেক্ষ সরকার এবং কমিশনের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের জন্য হলেও ইসলামী দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন।
ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান বলেন, আমরা প্রথমে নিবন্ধিত ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা করছি। বাংলাদেশে যারা দেশ ও ইসলামের পক্ষে কাজ করে তাদের সবার সঙ্গেই কথা বলার চেষ্টা করছি। খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমীর মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদি বলেন, ইসলামী আন্দোলনের নেতারা এসেছিলেন। আমাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে আলোচনা হচ্ছে, তবে এখনই ফলপ্রসু কিছু হয়নি। আমরা পরস্পরের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করছি। কারণ আমাদের মাঝে কিছুটা দূরত্ব রয়েছে। খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের বলেন, ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। এটা সৌজন্য সাক্ষাৎ বলা যায়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে নিজেদের মধ্যে কীভাবে সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি করা যায় এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। জামায়াতের সঙ্গে সংলাপ হবে কিনা তা নিয়েও আলোচনা চলছে। জামায়াতের প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, আমরা যেকোনো ধরনের গণতান্ত্রিক, নিয়মতান্ত্রিক ইসলামিক বিষয় নিয়ে যেকোনো দল ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত। ফরমালি কোনো আলোচনা হয়নি। এমনিতে বিভিন্ন জায়গায় দেখা-সাক্ষাৎ হয়। কুশল বিনিময় হয়। আমাদের দলের আমীর বিভিন্ন সময় আলেমদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। এটা জামায়াতের নিয়মিত কর্মসূচি।