জেমস আব্দুর রহিম রানা যশোর জেলা প্রতিনিধি দৈনিক শিরোমণিঃ সম্প্রতি একটা বিষয় আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে চরমভাবে। তা হচ্ছে, দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতি। এ অস্বাভাবিক ও আকস্মিক মূল্য বৃদ্ধির ফলে জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। ফলে সমাজে নেমে এসেছে অপ্রত্যাশিত দুর্ভোগ। এর নেপথ্যের কারণ অনুসন্ধান করবেন অর্থনীতিবিদগণ। অভিজ্ঞ মহলের মতে, এ আকস্মিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ একাধিক। প্রথমত, এমন নৈরাজ্য এদেশে চিরন্তন যে, মুনাফালোভী মজুতদাররা প্রায়ই অধিক মুনাফা অর্জনের মানসিকতায় দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। দ্বিতীয়ত, সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা বৃদ্ধি। দেশের একটি ক্ষুদ্রতম অংশ এরূপ ভাতা পেলেও অসুবিধার দায়ভার বহন করে সমাজের বৃহত্তম অংশ। লক্ষণীয় ব্যাপার এই যে, সরকার কর্তৃক মহার্ঘ ভাতা ঘোষণার পরক্ষণেই অজ্ঞাত কারণে বাজারে দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেতে থাকে। সরকারি কর্মচারীগণ যে হারে মহার্ঘ ভাতা পেয়েছে, দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি। ফলত সরকারি কর্মচারীরাও সমস্যামুক্ত হতে পারেনি। তাই অবিলম্বে এ অনাকাঙ্ক্ষিত দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিকে জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে এর প্রতিরোধকল্পে যথাযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণ একান্ত আবশ্যক বলে সচেতন মহল মনে করছেন।মূল্যবৃদ্ধি এদেশে এটাই যে প্রথম, তা নয়। এদেশে এটি একটি অনিবার্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পৃথিবীর কোনো দেশেই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিজনিত এমন নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টির ঘটনা বিরল। অন্য দেশে এমনটি ঘটলে বিক্ষোভ দানা বাঁধে, সরকারকে জবাবদিহি করতে হয় জনগণের কাছে। কিন্তু এদেশের সরলপ্রাণ মানুষ এরূপ কোনো ঘটনা নিয়ে বেশি মাতামাতি পছন্দ করে না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, এ জাতীয় সমস্যা তারা এদেশে স্বতঃসিদ্ধ বলে ধরে নিয়েছে এবং জনগণ এটাও মনে করে যে, এ বিষয়ে তাদের কোনো দায় নেই।এ রকম পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস হলেও দুর্নীতিবাজ কর্মচারী ও মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের পোয়াবারো। এছাড়াও আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে বারবার। আমাদের উৎপাদিত পণ্য বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। এসব ঘটনায় কেউ কেউ রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ফায়দা লুটে নিচ্ছে। দেশের বৃহত্তম জনগোষ্ঠীকে এমন অমানবিক সমস্যাপীড়িত করে যারা নিজেদের সুখ-সম্পদ আহরণের চেষ্টায় মত্ত, তারা দেশের শত্রু, জনগণের শত্রু। এসব অসৎ ও দুর্নীতিবাজ লোকদের উৎখাত এখন সময়েরই দাবি। এ বিষয়ে সরকারি-বেসরকারি অভিজ্ঞ মহলের মনোযোগ দেয়া খুবই জরুরি বলে মনে করে সাধারণ জনগণ।বর্তমানে তেল, গ্যাস, চাল, ডাল, মাংস, পেঁয়াজসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যর বৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ মানুষের। গত দুমাসের ব্যবধানে সব ধরণের নিত্য পণ্যর দাম সর্বনিম্ন ১০ থেকে সর্বোচ্চ ২৮০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের লোকেরা পড়েছেন চরম বিপাকে। দিশেহারা অনেককেই বাধ্য হয়ে নামতে হয়েছে শটকার্ট লিস্টে। তারপরও বড় অংশের সাধারণ মানুষ হিমশিম খাচ্ছেন চাহিদা মেটাতে।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খাবার মানে তারতম্যর কারণে পুষ্টিহীনতা পেয়ে বসতে পারে নিম্ন ও মধ্যবিত্তকে। আদতে যা দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিকসহ সার্বিক বিষয়ের ওপর বিরুপ প্রভাব ফেলবে। ক্রেতারা জানান, করোনার রেশ কাটতে না কাটতেই যশোরের নিত্য পণ্যর বাজার দরে তাপ ছড়াতে শুরু করে।সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে ক্রমেই তা বাড়ছে। এসময়ে ন্যুনতম ১০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে টমেটো, গাজর, লাউ, বেগুন, পটল, উচ্ছে, মরিচ, শশা, বরবটি, আলু, ঢেঁড়শ, কচুরমুখী, কুমড়া, লাল, সবুজ, লাউ, পুঁই, পালং শাকের দাম।একই সময়ে মুসুর, বুটসহ সব ধরণের ডালের দাম বেড়েছে ৬ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত। প্রকারভেদে রুই, কাতলা, টাকি, শিং, শোল, তেলপিয়াসহ সব ধরণের কার্প জাতীয় মাছের দাম ২০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে মৌসুম শুরু হলেও কমেনি ইলিশের দাম।
যশোরের বাজারে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৩শ’ থেকে ১৪শ’ টাকা। তবে বিভিন্ন ছোট সাইজের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ৪শ’ থেকে ১ হাজার টাকায়।স্বস্থি নেই মাংসের বাজারেও। হাঁস, মুরগী, গরু, খাসী, মহিষসহ সব ধরণের মাসেং ৬০ থেকে ৩শ’ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সর্বোচ্চ ৩শ’ টাকা বেড়েছে রাজ হাঁসের দাম। প্রকারভেদে চালের দাম পাইকারীতে বেড়েছে ২টাকা। আর প্রকারভেদে খুচরা বাজারে বেড়েছে ৪ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত। তবে সুগন্ধি ও পোলাওয়ের চালের দাম কেজিতে ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।এসময়ে জিরা, এলাচ, দারচিনি, আদাসহ সব ধরণের মসলার দামও কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা থেকে ১হাজার টাকা পর্যন্ত। এরইমাঝে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে গ্যাসের দাম। গত প্রায় দেড় মাসের ব্যবধানে ১ হাজার ২৫৯ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩১৩ টাকা। অর্থাৎ ১২ কেজির সিলিন্ডার প্রতি এসময়ে গ্যাসের দাম বেড়েছে ২৮০ টাকা। সর্বশেষ গত শুক্রবার সিলিন্ডারে ৫৪ টাকা বৃদ্ধি করায় এ দাম দাঁড়িয়েছে। রিকশা চালক মতিয়ার রহমান জানান, সর্বশেষ কোরবানীর সময় গরুর মাংস খেয়েছিলাম। পরিবারের লোক মাংস খেতে চাইলে মাঝে মাঝে পোল্ট্রি কিনে খাওয়াতাম। সেই পোল্ট্রি কেজিতে প্রায় ৭০ টাকা বেড়েছে। পরিস্থিতি এখন এমন দাঁড়িয়েছে সবজি কিনে মাছ কেনার টাকাই থাকছে না। সেখানে অন্য কিছুর মাংসতো আমাদের কপালেই জোটে না।ব্যবসায়ী আদনান সিদ্দিকী বলেন, ৪ জনের সংসারে আগে পাঁচ, সাড়ে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকার মাছ, মাংস, মসলা, সবজি কিনে খাওয়া যেতো। তিন হাজার টাকার চালের সাথে এক সিলিন্ডার গ্যাস আর ৪ লিটার তেলে মোটামুটি হয়ে যেতো। অর্থাৎ ১২-১৩ হাজার টাকায় ৪ জনের মধ্যবিত্ত একটি শহুরে সংসার চলে যেতো। সেখানে এখন অতিরিক্ত প্রায় ৪-৫ হাজার টাকা লাগছে। তারপরও আগের পরিমাণের মত বাজার ঘরে তোলা যাচ্ছে না। কেননা শিশু পণ্য, ওষুধসহ সব কিছুর দামই বেশী।চাকুরীজীবী নাজমুল হোসেন বলেন, এমন কোন নিত্য পণ্য নেই, যার দাম বাড়েনি। কিন্তু করোনায় যে বেতন কমেছে, তা আগের মতই স্থিতিশীল রয়েছে। অর্থ্যাৎ করোনার আগে যে বেতন পেতাম সেটাও পাচ্ছি না। সংসার চালাতে হিমশিম খাওয়ায় স্ত্রী-সন্তানকে বাধ্য হয়ে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি।সবজি বিক্রেতা আব্দুর রহমান বলেন, আমরা যেমন দামে কিনি, তেমন দামেই বিক্রি করি। সেখানে হয়ত ৩-৪ টাকা লাভ রাখা হয়। অনুরুপ মন্তব্য পাইকারী বিক্রেতা ইলিয়াস হোসেন। তিনি বলেন, তবে তৃণমূল থেকে ক্রেতা পর্যন্ত দাম বৃদ্ধির জন্য একাধিক মধ্যসত্তাভোগী আর সিন্ডিকেট দায়ী। এছাড়া সম্প্রতি ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে পন্য সরবরাহে খরচও বেড়েছে অনেক। যা নিত্য পণ্যর মূল্য বৃদ্ধির আরেকটি কারণ বলে দাবি তার।যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আশরাফুজ্জামান জাহিদ বলেন, একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের এক দিনে (তিন বেলা) অন্তত ২ হাজার থেকে ২২শ’ গ্রাম ক্যালরি প্রয়োজন, নারীর ক্ষেত্রে ১৬শ’ গ্রাম। কিশোর-তরুণদের ১৪শ’ গ্রাম হলেও প্রসূতি নারীদের ক্ষেত্রে ১৬শ’ গ্রাম থেকে শুরু হয়ে তিন মাস অন্তর করে বেড়ে দাঁড়ায় ২২শ’ গ্রাম পর্যন্ত।তিনি বলেন, শরীরের পুষ্টিগুণ ঠিক রাখতে উপরোক্ত ক্যালরী খুবই প্রয়োজন। এ ক্যালরী না মিললে একজন কর্মক্ষম পুরুষ উল্টো পরিবারের বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। শিশু, কিশোর ও নবজাত সন্তান অপরিপক্ক হয়ে গড়ে উঠবে। শারীরিক ও মানসিকভাবে পরিপূর্ণতা আসবে না। ছড়িয়ে পড়বে নানা গুরুতর রোগব্যাধী। আর দীর্ঘ সময় ধরে যদি এ অবস্থা চলতে থাকে তাহলে আমাদের পক্ষে ভবিষ্যতে সুস্থ জাতি পাওয়া খুবই কঠিন হয়ে পড়বে।যশোরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে এক মাসের মধ্যে সবজির দাম বেড়েছে : আগে ও বর্তমান ( প্রতি কেজিতে ) টমেটো-৮০-১০০, গাজর ১০০- ১৪০ , লাউ-৩০-৫০ (একপিস), বেগুন-৬০-৯০, পটল-৩০-৪০, উচ্ছে-৫০-৮০, মুলা-২০-৩০, মরিচ-৯০-১২০, পুঁইশাক-২০-৩০, শশা-৩০-৫০, কচুরমুখী-২০-৩০, ওল-৪০-৬০, আলু-১৮-২৫, বরবটি-৬০-৮০, লালশাক-১০-২০, মিষ্টি কুমড়া-৩০-৪০ (একপিস), ঢেঁড়শ -৪০-৫০। আগাম শীতকালীন সবজি সিম এর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা, ফুল কপি পিস ৭০, বাঁধা কপি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সব ধরণের শাক কেজিতে বেড়েছে কমপক্ষে ১০ টাকা।ডাল ও মসলা একমাসের মধ্যে দাম বেড়েছে : আগে ও বর্তমান ( প্রতি কেজিতে ) জিরা-৩০০-৩৫০, এলাচ- ৩০০০-৪০০০, লবঙ্গ-৮০০-১২০০, দারচিনি-৩০০-৪০০, আদা-১০০-১২০, রসুন-৪০-(৬০-৭০), গোল মরিচ- ৬২০-৬৫০, ধনিয়া-৮০-১১০, মুসুর ডাল- (দেশী-৮০-১১০, ভারতীয়-৭০-৮৫), বুটের ডাল-৩৮-৪৪, মুগ-দেশী-৯০-১২৫, ছোলার ডাল- ৬২-৭৫, খেসারি-৪৫-৫৮। প্রকারভেদে ৩৫-৪০ টাকার পেঁয়াজ এক মাসের মধ্যে বেড়ে ৮০-৯০ টাকা হলেও বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকায়।এদিকে গত দু’মাসের মধ্যে সয়াবিন তেল বোতলজাত ১১০ টাকা থেকে বেড়ে এখন প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। খোলা সয়াবিন ৯৫ থেকে বেড়ে ১৫০ টাকা হয়েছে। পামওয়েল-৮৫-১৪৪, সরিষার তেল ৫৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। আর এক কেজি ছোলা অতিরিক্ত ১০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে ১০৫ টাকায়।মাছ একমাসের মধ্যে দাম বেড়েছে : আগে ও বর্তমান ( প্রতি কেজিতে ) ইলিশের মৌসুম শুরু হলেও এক কেজি ওজনের ইলিশ কিনতে গুনতে হচ্ছে ১৩০০-১৪০০ টাকা। তবে বিভিন্ন সাইজের ছোট ইলিশ ৪শ’ থেকে ৯শ’-১ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। টাকি-৩৫০-৪০০, শিং- (দেশী- ৬০০-৭০০, চাষ-৩০০-৩৫০),পাবদা-(দেশী-৬০০-১০০০, চাষ-৩০০- ৪০০), পুঁটি-(জাপানী-১২০- ১৫০, দেশী-২০০-৪০০), শোল-৬০০-৬৫০, ট্যাংরা-৩৫০-৪০০, বাইন-৫০০-৬০০, রুই-২০০-২৫০, কাতল-২৫০-৩০০, সিলভার-৮০- ১৬০, মৃগেল-১৬০-২৫০, গ্লাস কার্প-১৭০-২২০, তেলাপিয়া-৮০-১২০, পাঙ্গাস-৮০-১০০, কৈ-১২০-১৬০।মাংস একমাসের মধ্যে দাম বেড়েছে : আগে ও বর্তমান ( প্রতি কেজিতে ) পোল্ট্রি-১১০-১৬০, সোনালী-২৩০- ৩০০, দেশী ক্রস-২৮০-৩২০, দেশী-৩৫০-৪৫০, গরু-৪৮০-৫৫০, খাসি-৭০০-৮০০, মহিষ-৪০০-৫০০, হাঁস-২০০-২৬০, রাজ হাঁস (আড়াই কেজি)-৭০০-১০০০।
চাল একমাসের মধ্যে দাম বেড়েছে : আগে ও বর্তমান ( প্রতি কেজিতে ) স্বর্ণ ৪২-৪৮, হাইব্রিডজিএস-৩৫-৪৬, হীরা-৩৬-৪৬, বিরি২৮ জাতের চাল-৪৮-৫৬, বিরি৪৯ চাল-৪৬-৫৫, বিরি৮৭-৪৮-৬০, বিরি৫১-৪৬-৫৬, কাজললতা-৪৮-৫২, হাবু-৪৮-৫৮, বাসমতি-৬০-৬৮, জিরা মিনিকেট-৫২- ৫৮, কাটারিভোগ-৫২-৬২, নাজিরশাল-৭০-৮৫, মৌ-৭০-৮০, বিনা-৭ জাতের চাল-৪৭-৫৬, ক্ষীরকোণ-৮৫-১২০, কালোজিরা – ৯০- ১৩০। বাজারে সব ধরণের চালের পাইকারীতে মূল্য বেড়েছে ন্যুনতম ২ টাকা হারে।গত একমাসের ভেতর দু’দফায় বেড়েছে চালের দাম। এছাড়া চিনি- (খোলা-৫৮-৭৬, প্যাকেটজাত-৭৪-৮৫), ডিম হালি প্রতি (হাঁস-৫২-৬০, পোল্ট্রি-৩২-৪০, সাদা পোল্ট্রি-৩২-৩৫, দেশী ডিম-৪০-৫২, কোয়েল-৮-১০)। এঅবস্থা অব্যাহত থাকার ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে খেতে-খামারে, কল- কারখানায় খেটে খাওয়া শ্রমজীবী, নির্দিষ্ট আয়ের চাকরিজীবী ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ। তারা দিন দিন গরিব থেকে আরও গরিব হচ্ছে। অপরপক্ষে বড় বড় ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের কালো টাকার পাহাড় জমছে। এ আর্থিক বৈষম্য সামাজজীবনে আনছে অশান্তি। দারিদ্র্য ও অভাব অনটনে পড়ে শ্রমিক ও চাকরিজীবী মানুষ বেশি বেতন ও ভাতার দাবিতে হচ্ছে সোচ্চার। দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত ও জীবনসংগ্রামে পর্যুদস্ত মানুষ অসামাজিক কাজ কর্মে লিপ্ত হচ্ছে। ফলে সমাজে অশান্তি ও উচ্ছৃঙ্খলতা বাড়ছে। আজ তাই সময় এসেছে এ দুঃসহ অবস্থার প্রতিকারে সক্রিয় প্রয়াস চালানোর এজন্যে সর্বাগ্রে যেমন সরকারের প্রয়াস-প্রচেষ্টার প্রয়োজন, তেমনই দরকার পণ্যসামগ্রীর চাহিদা ও যোগানের সমতা রক্ষা। জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল রেখে ভোগ্যপণ্যের উৎপাদন অক্ষুণ্ণ রাখতেই হবে। ভোগ্যপণ্যের উৎপাদন হ্রাস পেলে মূল্যস্তরকে বেঁধে রাখা হবে অসম্ভব। মুনাফা শিকারি ব্যবসায়ী ও উৎপাদনকারী আইনের ফাঁক ফোকরে বা সরকারি ঔদাসিন্যে, বাজেট কর প্রস্তাবেফ সুযোগ অথবা যোগানের অপ্রতুলতা হেতু ঘাটতি তৈরি করে যাতে মুনাফা লুটতে না পারে তা দেখতে হবে। কালো টাকার উদ্ধার করতে হবে। পণ্য উৎপাদনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন নোট ছাপাতে হবে সতর্কতা অবলম্বন করে, যাতে মুদ্রস্ফীতি পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ না হয়ে দাঁড়ায়। ঘাটতি বাজেটের ক্ষতিকর দিকটি আমাদের সকলের জন্যে প্রযোজ্য। সরকার এ ব্যাপারে যথাযোগ্য উদ্যোগ গ্রহণ করবে-এটিই সকলের প্রত্যাশা।
৪ views