শিরোমণি ডেস্ক : পৃথিবীর সকল মানুষের যদি একটি ধর্ম থাকত তাহলে পৃথিবীতে এত ধর্মে ধর্মে যুদ্ধ, এত জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদিতা আর হত্যার মতো নির্মম জিনিস থাকত না।
আমেরিকায় কিছুদিন পরপর শুনি একজন আত্মঘাতী গুলি করে ২০ থেকে ৩০ জন মানুষ হত্যা করেছে। যে মানুষটি নিউজিল্যান্ডের মসজিদে হামলা করে ৪৯ জন মুসলমানকে হত্যা করেছে সে একজন খ্রিস্টান। আর সারাবিশ্ব জুড়ে যে আইএস তালেবান জঙ্গি আছে তারা মুসলমান। কিন্তু এই আইএস আর তালেবানদের যারা পরিচালনা করছে তারা ইহুদি বা খ্রিস্টান। বৌদ্ধরা হাজার হাজার রোহিঙ্গা হত্যা করে। অশোক লক্ষ লক্ষ মানুষ হত্যা করেছে, সে একজন হিন্দু। এমন অনেক উদাহরণ আছে সারা বিশ্বে যারা বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী হয়ে জঙ্গিবাদের ঝাণ্ডা উড়িয়েছে, হত্যা করেছে লক্ষ লক্ষ মানুষ।
এই বিশ্বের সকল মানুষের ধর্ম যদি মানবিকতা হত তাহলে কোন মানুষ আরেকজন মানুষকে হত্যা করতে পারতো না। মানুষ হয়ে মানবিকতাই সবচেয়ে বড় ধর্ম হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু সবচেয়ে দুঃখজনক যে মানুষ আজকে ধর্মের কারণে বিভক্ত, ধর্মের কারণে তার মানবিক গুণাবলী আজ প্রশ্নবিদ্ধ। এই কথাটি চিন্তা করলে বুঝতে পারবেন। মৌলবাদ আর গোঁড়ামি থাকলে এটা আপনার কাছে অর্থহীন মনে হবে।
মানুষের ধর্ম যদি মানবিকতা হতো, তাহলে ক্ষমতার জন্য, দম্ভের জন্য মানুষে মানুষে যুদ্ধ হতো না। পৃথিবীর প্রতিটি রাষ্ট্র যদি একটি করে মানবিক রাষ্ট্র হতো তাহলে একটি রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের অধিকার হরণ করত না, একটি রাষ্ট্র মানবিক হলে সে তার নিজের দেশের নাগরিকদের অধিকারও হরণ করে না। মানুষের মধ্যে যদি মানবিকতা থাকত তাহলে পৃথিবী আর স্বর্গের মধ্যে তফাৎ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হতো। পৃথিবীর এক অংশে দুর্ভিক্ষ আর অন্য অংশে প্রাচুর্যের পাহাড় থাকত না। সাম্য আর মানবতার বাণী সারা বিশ্বে একসাথে ধ্বনিত হতো।
মানুষ জন্মগতভাবে একটি ধর্মে বিশ্বাসী হয়, কিন্তু সে যখন পরিপূর্ণ, বিবেকবান আর সভ্য মানুষ হয় তখন মানবিক ধর্মটাকে প্রাধান্য দেওয়া যৌক্তিক বলে আমি মনে করি।
বৈষম্যহীন, ভালোবাসাপূর্ণ একটা মানবিক পৃথিবী চাই যেখানে জঙ্গিবাদের ভয়ে মানুষের জীবন দুর্বিষহ হবে না, যেখানে উপাসনালয়ে মানুষ স্রষ্টার কাছে নিজেকে সঁপে দেয় সেখানে মৃত্যু তাড়া করবে না। স্বাভাবিক বা প্রাকৃতিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা থাকবে। যেখানে মেয়ে হত্যার প্রতিশোধ নিতে আরেকজন জঙ্গি হয়ে নিরীহ মানুষকে শিকার হিসেবে বেছে নেবে না।