এম.সোহেল রানা, মেহেরপুর-
নিরব ঘাতক মহামারি করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) এর প্রাদূর্ভাবে সারা বিশ্ব যেন স্থবির, সারা জগৎ যেন হাহাকার বিরাজ করছে। প্রতিদিন সারা বিশ্বে মহামারি করোনাতে সংক্রমণ ও মৃত্যুর মিছিলের প্রতিযোগীতা চলছে। কেহ যেন কারো নয়, মানুষ যেন মানবতাহীন হিংস্র প্রাণীর ন্যায়। সত্য-ন্যায়ের পথে জীবন জীবিকা নির্বাহের তাগিদে মধ্যবৃত্ত-নিম্নবৃত্ত লোকেদের উপার্জনের পথ যেন সংকীর্ণ, ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হওয়ার উপক্রম বা অচলপ্রায়। এগুলো স্ব-চোখে দেখেও কিছু মানুষ রূপি জানোয়ার মানুষের মুখোশ পরিধান করে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের রাজত্ব থেমে নেই অসাধু লোকের দূর্নীতি, ঘুষ, ধর্ষণ-খুনের মত অপকর্মগুলো।
করোনা ভাইরাস অন্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশেও তার ব্যতিক্রম নয়, এই করোনা ভাইরাসটার কতদিন তার স্থিতি থাকবে, না আদৌ কোনদিনই এর প্রভাব কমলেও বিস্তৃতি কমবেনা, না বাকিটা কাল আমাদের জীবন ঝুকি নিয়েই কাটাতে হবে! এর প্রকৃত গবেষণা এখন পর্যন্ত সঠিক ভাবে সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি গবেষকরা।
২০২০সালের মার্চ মাসের ১৭তারিখ থেকে নিরব ঘাতক করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) এর প্রাদূর্ভাবে একটানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এ বছরে প্রাথমিক সমাপনী পরিক্ষা (পিইসি), জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট-জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেএসসি-জেডিসি)’র পাশাপাশি বাতিল করা হয়েছে এইচএসসি/সমমান পরিক্ষাও। আগামী বছরের সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি)/সমমান পরিক্ষাও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সব শ্রেণির শিক্ষার্থীয় অটোপ্রমোশন পেয়ে পরবর্তি শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কি ভাবে (শিক্ষার্থীদের) তাদের মানোন্নয়নের সঠিক মুল্যায়ন করা হচ্ছে/হবে তা নিয়েও বিভিন্ন মহল বা শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের নিকট থেকে প্রশ্ন করা হচ্ছে বা হতেই পারে।
কোন একদিন কোন এক কবি বলেছিলেন- “ছাত্র জীবন সুখের জীবন যদি না থাকতো পরিক্ষা” ধরি কবি সেদিন জেনে কিংবা না জেনে লিখেছিলেন নিজের উক্তিটি তিনার উপলব্ধি থেকে কিন্তু কবি কি জানতেন, এ কথা বা উক্তিটির একদিন বাস্তবে রূপ নিবে/ আসবে? কথাটি একদিন স্বার্থকতা লাভ করেবে? কবির উপলব্ধি থেকে তিনি যা লিখেছিলেন, বর্তমানে কবির সেই জানা না জানা উক্তিটি আজ স্বার্থকতা লাভ করেছে, বাস্তবে রূপ নিয়েছে। কোন এক পরিস্থিতির কারণে।
বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাধ্যমিকের অ্যাসাইনমেন্ট/নির্ধারিত কাজ নিয়ে কিছু কথা বলতে না চাইলেও বলতে হচ্ছে- করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতে ২০২০ শিক্ষাক্রম পুনর্বিন্যাসকৃত পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে অ্যাসাইনমেন্ট/নির্ধারিত কাজ ও মূল্যায়ন নির্দেশনা প্রদান করেছে শিক্ষা মন্ত্রনালয় কর্তৃক। আসলে এ নির্দেশনায় কি ছাত্র/ছাত্রীরা উপকৃত হচ্ছে? বাস্তবে শিক্ষার মানোন্নয়ন কতটুকু উন্নত বা উন্নয়ন হচ্ছে? এটা শিক্ষা খাতে ধস কিনা? সত্যিই কি মেধাবি বা ভালো শিক্ষার্থীরা কিঞ্চিত পরিমাণে উপকার হচ্ছে? এ প্রশ্নগুলো শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের।
করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) এর ফলে দেশের প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়া কিন্তু বন্ধ নেই। প্রত্যেক শিক্ষার্থীরা তাদের বিষয় ভিত্তিক শিক্ষকদের কাছে সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব না থেকে, স্বাস্থ্যবিধি না মেনে, মুখে মাস্ক না ব্যবহার করে পূর্বের ন্যায় গাদাগাদি করে প্রাইভেট পড়া চলমান রেখেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্দেশনায় অ্যাসাইনমেন্ট/নির্দেশিত কাজ দিয়ে থাকলেও আমরা দেখতে পাচ্ছি- আসলে শিক্ষকরা পরিক্ষার্থী হিসাবে অ্যাসাইনমেন্টের উত্তর লিখে সিট তৈরি করে বা সামাজিক মাধ্যম নেট থেকে নামিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে আর শিক্ষার্থীরা শুধু মাত্র ফটোকপি/অনুলিপির মেশিন হিসাবে কাজ করে চলেছে। অনেকে আবার অন্যকে দিয়েও অনুলিপি করে বিদ্যালয়ে গিয়ে জমা দিচ্ছে। এর দ্বারা আমরা (অভিভাবক) কি পরিমান শিক্ষার মানোন্নয়ন হচ্ছে বলে মনে করবো?
অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের ধোঁয়াশা নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু মুল্যায়নের ক্ষেত্রে নম্বর দেওয়ার কোন নিয়ম রাখা হয়নি। তবে অ্যাসাইনমেন্টের মূল্যায়ন হিসাবে চারটি প্রত্যাশিত ফলাফল বা সূচক রাখা হয়েছে- “অতি উত্তম, উত্তম, ভালো, ও অগ্রগতি প্রয়োজন”। এ ক্ষেত্রে শিক্ষকরা এক ধরনের বিপাকে পড়তে পারে যেহেতু ছাত্র/ছাত্রীদের এক শ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণিতে উত্তীর্ণের ক্ষেত্রে রোল নম্বর হিসাবে বিবেচনা করতে হয়। শিক্ষার্থীদের কি ভাবে রোল নম্বর নির্ধারণ করা হবে সে ব্যাপারে কোন নির্দেশনা নেই বলে জানতে পারা যায়। তাই এটা ধোঁয়াশা নির্দেশনা হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকদের কাছে।
রচনাকাল- ২৫ নভেম্বর-২০ইং