জানা যায়, জেলার সদর উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের চুনিয়াগাড়ী গ্রামের নকিম উদ্দিন গত ৭ বছর যাবত ওই গ্রামে প্রায় ৩ বিঘা এলাকাজুড়ে পুকুর খনন করে দেশী-বিদেশী জাতের মাছ চাষ করে আসছেন। বর্তমানে তিনি একজন সফল মৎস চাষী হিসেবে পরিচিত। তার সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে এলাকার অনেক বেকার যুবক এখন মাছ চাষ শুরু করেছেন। একজন সফল মাছ চাষী হওয়ার পাশাপাশি সফল ব্যবসায়ী হওয়ায় একদিকে যেমন নকিম উদ্দিনের শুভাকাঙ্খী রয়েছে, অন্যদিকে তৈরী হয়েছে কিছু শত্রু। যারা প্রতিনিয়ত নকিম উদ্দিনের উপর ঈর্ষাণিত হয়ে তার ক্ষতি করার চেষ্টা করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৮ নভেম্বর নকিম উদ্দিনের পুকুর ঘেরাও করে তার উপর হামলা করা হয়। পার্শবর্তী চুনিয়াগাড়ী খাঁপাড়া গ্রামের মৃত মোকছেদ আলী সরদারের ছেলে শাহারিয়ার মোক্তাদির সোহাগ ও একই গ্রামের জনাব আলী খাঁ’র ছেলে সায়েস্তা খান রনি লাঠিসোটা, রডসহ দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে এই হামলা চালালে নকিম উদ্দিনকে স্থানীয়রা উদ্ধার করেন। ওই মুহুর্তে প্রকাশ্যে নকিম উদ্দিনকে মেরে ফেলা এবং পুকুরে বিষ প্রয়োগের হুমকি দিয়ে চলে যান তারা। বিষয়টি নিয়ে পরবর্তীতে ২১ নভেম্বর নিরাপত্তার স্বার্থে নওগাঁ মোকাম নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ওই দুইজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন নকিম উদ্দিন। তবে মাস না পেরোতেই সম্প্রতি রাতের আঁধারে দুর্বৃত্তরা ওই পুকুরে বিষ প্রয়োগ করেন। পরে পুকুরে গিয়ে নকিম উদ্দিন দেখতে পান অসংখ্য মাছ মরে ভেসে উঠছে।
ভুক্তভোগী নকিম উদ্দিন বলেন, আমার পুকুরের পাশেই সায়েস্তা খান রনির ফসলী জমি। মাছ চাষে আমার সফলতায় সে ঈর্ষান্বিত। নানা সময়ে সে আমাকে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিল। সর্বশেষ আমার উপর হামলা চালায়। পরে সেখান থেকে স্থানীয়দের সহযোগীতায় আমি বেঁচে ফিরলেও তারা আমার পুকুরের ক্ষতি করার চেষ্টা শুরু করে। হুমকি দিয়েছিল বিষ প্রয়োগের। সেটাই করে দেখিয়েছে। আমি আমার ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
এবিষয়ে অভিযুক্ত শাহারিয়ার মোক্তাদির সোহাগ বলেন, আমার মামাতো ভাইয়ের জমিতে নকিম উদ্দিন পানি দিয়ে ধান নষ্ট করেছিলো। সেখানে ভাইয়ের সঙ্গে গিয়েছিল। পরে তার পুকুরে বিষ প্রয়োগ হয়েছে, কি না? এমন বিষয়টি আমার জানা নেই। তিনি যে অভিযোগ এনে মামলা করেছেন না সম্পূর্ণ মিথ্যা।
অভিযুক্ত সায়েস্তা খান রনি বলেন, নকিম উদ্দিনের পুকুরের পানি আমার ফসলী জমিতে এসে ধান নষ্ট করেছে। এটা নিয়ে তার সাথে একটা ঝামেলা চলছে। বিষয়টি নিয়ে থানায় অভিযোগও করেছি। উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জমি পরিদর্শন করেছেন। তাই সে আমাকে ফাঁসাতে পুকুরে বিষ প্রয়োগের নাটক করছে। মিথ্যা মামলাও করেছে। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগটি সঠিক নয়।
চন্ডিপুর ইউনিয়নের চুনিয়াগাড়ী উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা গাউছেল আজম বলেন, নকিম উদ্দিনের পুকুরের গরম পানি ফসলী জমিতে দেয়া হচ্ছে এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ফসলী জমিটি দেখতে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে এমন অভিযোগের সত্যতা পাইনি। সেখানে পানির কারণে ফসলের ক্ষতি হওয়ার অভিযোগটি সঠিক নয়।
নওগাঁ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়সাল বিন আহসান বলেন, পুকুরে বিষ প্রয়োগ করে মাছ মেরে ফেলার বিষয়টি জানা নেই। এবিষয়ে কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।