অপরিকল্পিতভাবে যেভাবে নদী থেকে বালু তোলা হচ্ছে তাতে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প, ফসলি জমি, মসজিদ, বিদ্যুতিক খুঁটি হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা ও আশ্রয়ণ প্রকল্পের বসবাসকারীরা। এছাড়াও উত্তোলনকৃত বালু বিক্রির জন্য পরিবহনকৃত ট্রাকগুলো ব্যবহারের ফলে সরকারি রাস্তা ও জনগণের চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এবিষয়ে বালু উত্তোলন বন্ধে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন স্থানীয়রা ও আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারীরা।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আত্রাই উপজেলার পাচুঁপুর ইউনিয়নের সাহেবগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা সায়েমসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিরা আত্রাই নদীর মধুগুড়নই এলাকা হতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। ফলে সাহেবগঞ্জ মধুগুড়নই গুচ্ছগ্রাম, গ্রামের মসজিদ, ৩৩ হাজার ভোল্টের বিদ্যুতি খুঁটিগুলো নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এছাড়াও ভোঁপাড়া ও পাচুঁপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসসহ এলাকাবাসীর আবাদের ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হতে যাচ্ছে। এভাবে বালু উত্তোলন চলমান থাকলে গ্রামবাসী অনেক বড় ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এছাড়াও উত্তোলনকৃত বালু বিক্রির জন্য পরিবহনকৃত ট্রাকগুলো ব্যবহারের ফলে সরকারি রাস্তা ও জনগণের চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
অভিযোগ সূত্রে আরও জানা যায়, বালু উত্তোলনের চুক্তিনামায় উল্লেখ ছিল গুচ্ছগ্রাম হতে কমপক্ষে ১ কিলোমিটার দূর থেকে বালু উত্তোলন করতে হবে। কিন্তু তা না করে এলাকাবাসীকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কথা বলে কমপক্ষে ৮ লক্ষ ঘনফুট বালু মজুদ করে বিক্রয় করছেন। তাই তদন্ত করে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করে এলাকাবাসীর বৃহৎ স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়।
প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের বসবাসকারী সাগর খন্দকার, সরকার আমাদেরকে থাকার জন্য বাড়িঘর করে দিয়েছে। এই আশ্রয় প্রকল্পে ৮৪টি পরিবার জীবন যাপন করছি। কিন্তু বেশ কিছুদিন থেকে কিছু অবৈধ মহল কিভাবে, কোন কারণে গুচ্ছগ্রামের নিচ (নদী) থেকে বালু উত্তোলন করছেন; যা আমাদের এই আশ্রয়ন প্রকল্প খুবই হুমকি স্বরূপ। এইভাবে যদি এই গুচ্ছগ্রামের নিচ (নদী) থেকে বালু উত্তোলন করা হয় কোন এক সময় এসব ঘর ধসে যেতে পারে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করি খুব তাড়াতাড়ি এই অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ হবে।
স্থানীয় বাসিন্দা হামিদ বলেন, এখানে আমাদের প্রায় দেড়বিঘা জমি আছে। এসব জমিতে আগে ভুট্টা আলু, সরিষা হতো। কিন্তু বালু তোলার কারনে এখন আর এসব চাষ করা যাচ্ছে না। এছাড়াও নদীর ওপারে ভূমি অফিস ও হাট আছে। এক সময় দেখা যাবে বালু তোলার কারনে ফসলি জমিসহ এগুলো নদীতে ভেঙ্গে চলে যাবে। তাই আমরা চাই বালু তোলা যেন বন্ধ করা হয়।
আরেক স্থায়ী বাসিন্দা শামীম বলেন, নদীতে নামার জন্য এখানে একটি সরকারি রাস্তা ছিল, বালু তোলার কারনে সেটিও বন্ধ হয়েছে। নদীর ধারসহ এর আশেপাশের ফসলি জমি আগে অনেক উঁচু ছিল। এমনিতেই ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে নদীতে চলে যাচ্ছে। আবার বালু তোলা হচ্ছে। তাহলে এসব ফসলি জমি তো আর থাকবে না। নদীর মধ্যে চলে যাবে। এছাড়াও এসব বালু যখন বিক্রি করা হচ্ছে তখন অনেক অনেক বড় বড় গাড়ি এইসব রাস্তায় আনা হচ্ছে। ফলে রাস্তাগুলোর ক্ষতি হচ্ছে। আমাদের চলাচলের সমস্যা হচ্ছে। আমরা চাই দ্রুত বালু তোলা বন্ধ করা হোক।
এই বিষয়ে বালু উত্তোলনকারী সায়েম বলেন, সরকারিভাবে যখন বালু উত্তোলনের জন্য ওই নদী ইজারা দেওয়া হয় সেখানে বালু উত্তোলনের ওই জায়গা মৌজায় ছিল। সেই মোতাবেক আমরা বালু উত্তোলন করছিলাম। একদিন হঠাত করে ইউএনও স্যার বলছেন আশ্রয়ণ প্রকল্প থাকায় বালু উত্তোলন করা যাবে না। আপাতত বালু উত্তোলন বন্ধ আছে।
এ বিষয়ে আত্রাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, স্থানীয়দের একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ পাওয়ার পর বালু উত্তোলন বন্ধ রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যদিও সরকারিভাবে ইজারায় মৌজার মধ্যে পড়েছে বালু উত্তোলনের ওই স্থান। জনস্বার্থের কথা চিন্তা করে বালু উত্তোলন করতে নিষেধ করা হয়েছে। এছাড়াও জনস্বার্থের কথা চিন্তা করে ভবিষ্যতে সরকারিভাবে বালু তোলার জন্য পুরো এলাকা ইজারা যেন না দেওয়া হয় সেই চিন্তা করা হয়েছে।