রাশেদুজ্জামান,নওগাঁ জেলা প্রতিনিধিঃ যতদূর চোখ যায় এ যেন বেগুনি রঙের ফুল বাগান। প্রথম দেখায় মনে হবে কোন বড় বাগানে প্রবেশ করেছেন। এমন চোখ ধাঁধানো দৃশ্য নওগাঁর শীমক্ষেত গুলোতে। কৃষি প্রধান জেলা নওগাঁয় চাষ হচ্ছে আগাম জাতের শিম। আর এ শীম চাষ করে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। শীতের মৌসম শুরুর আগেই বাজারে উঠতে শুরু করেছে আগাম জাতের ভাদ্রা ও বুলবুলি জাতের শিম।জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, নওগাঁয় ১২০ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের শীমের চাষ করা হয়েছে। জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে সদর এবার বদলগাছী ও মহাদেবপুর উপজেলাতে বেশি পরিমানে শীমের চাষ হয়েছে।জেলার বিভিন্ন এলাকার মাঠে দেয়া যায়, মাঠজুড়ে সবুজের সমারোহ। মাঝে হালকা বেগুনি ফুল। পরিচর্যায় ব্যস্ত চাষিরা। কেউ শিম তুলছেন, আবার কেউ শিম ক্ষেত পরিচর্চা করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। মাথার উপর তীব্র রোদ ও তাপদহ, তবুও যেন একটুকু ক্লান্তি নেই চাষিদের মাঝে। কারন শীতের আগেই শীতের সবজি শিমের চাষ ভালো হওয়াতে খুশি তারা। অন্যদিকে বাজারে দাম মিলছে আশানূরুপ।নওগাঁ সদর উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামে ক্ষেত থেকে শিম তুলছেন বাবুল আক্তার নামের এক চাষি। এসময় কথা হলে বাবুল বলেন, আমি ৫বিঘা জমিতে শিমের চাষ করেছি। ইতিমধ্যে ক্ষেত থেকে শিম উঠানো শুরু করেছি। বর্তমানে ১২০টাকা কেজি দরে শিম বিক্রি করছি। যা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।একই এলাকার বর্ষাইল গ্রামের শিম চাষি মমতাজুল ইসলাম বলেন, আমি দুই বিঘা জমিতে শিমের চাষ করেছি। শিমের বীজ জমিতে রোপন করার ৩ মাসের মধ্যেই শিম পাওয়া যায়। বর্তমানে শোষক পোকার কিছুটা উপদ্রপ হয়েছে। স্থানীয় কৃষি অফিসারের পরামর্শে ওষুধ প্রয়োগ করছি। অতিরিক্ত খরার কারনে এমনটা হচ্ছে।বদলগাছী উপজেলার চাকরাইল গ্রামের শিম চাষি আউজুল হক বলেন, আমি ৭বিঘা জমিতে আগাম বুলবুলি জাতের শিমের চাষ করেছি। কয়েকদিনের মধ্যেই শিম উঠানো শুরু করবো ক্ষেত থেকে। বর্তমানে শিমের বাজার ভালো। প্রতি বিঘায় সার,সেচ, ওষুধ, শ্রমিকসহ মোট খরচ হয় প্রায় ২৫থেকে ৩০হাজার টাকার মত। মে মাসের দিকে শিমের বীজ রোপন করা হয়েছে। আগামী ৬ মাস পর্যন্ত ক্ষেত থেকে শিম উঠানো যাবে। আশা করছি বাজারদর ভালো থাকলে সব খরচ বাদ দিয়ে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার মত লাভ করতে পারবো।মহাদেবপুর উপজেলার ভালাইন গ্রামের চাষি ইয়াকুব আলী বলেন, শিমের বাজার এবার ভালো। তবে আগামী দুই -এক মাস পর দাম অনেকটাই কমে যাবে। যদি তেমন রোগ- বালাই না হয় শিম ক্ষেতে তাহলে উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে মোটামুটি ভালোই লাভ থাকবে বলে আশা করছি।স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি অফিসার রতন আলী জানান, আমরা মাঠ পর্যায়ে শিম চাষিদের পরামর্শ ও সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। তীব্র খরার কারনে শিমক্ষেতে কিছুটা শোষক পোকার আক্রমন দেখা দিয়েছে। চাষি ভাইদের ওষুধ ব্যবহারের পরাশর্ম দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বর্তমানে আর তেমন কোন রোগ-বালাই নেই। বাজারে এখন শিমের দামও বেশ ভালো।নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আবু হোসেন বলেন, চলতি মৌসুমে জেলার ৮হাজার হেক্টর জমিতে নানা জাতের সবজির চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ১২০ হেক্টর জমিতে আগাম জাতের শিমের চাষ হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে চাষি ভাইদের সমস্যা ও সমাধানে উপ-সহাকারী কৃষি অফিসাররা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এছাড়া যদি কোন কৃষক ভাই তার উৎপাদিত ফসলের গুরুত্বর সমস্যায় পড়েন সেখানে আমরা গিয়ে সরাসরি পরিদর্শন করে সমাধানের চেষ্টা করে থাকি। আগাম জাতের শিমের আবাদ এবার ভালো হয়েছে। দামও বেশ ভালো।গুরুত্বর তেমন কোন রোগ-বালাই নেই। বাজারে ১১৫ থেকে ১২৫টাকা কেজিতে চাষিরা শিম বিক্রি করতে পারছেন। আগামী ৬মাস পর্যন্ত ক্ষেত থেকে শিম উঠাতে পারবেন।