রেজিঃ নং ডিএ ৬০০৯ | বর্ষ ১৪ | ৪ পৃষ্ঠা ৩ টাকা || বুধবার | ২৭ নভেম্বর ২০২৪ | ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
নষ্ট হচ্ছে ৪’শ বছরের পুরনো স্থাপত্য
উজ্জ্বল কুমার দাস (কচুয়া,বাগেরহাট)প্রতিনিধি দৈনিক শিরোমণিঃ
বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার মঘিয়াতে প্রায় ৪'শ বছরের পুরনো স্থাপত্য নিদর্শন দিনের পর দিন পড়ে আছে অযত্ন আর অবহেলায়।সময়ের পরিক্রমায় খসে পড়ছে পলেস্তর। বিভিন্ন সময় সংরক্ষণ আর দেখভালের অভাবে কোটি টাকা মূল্যমানের কষ্টি পাথরের দক্ষিণা-কালী মূর্তি ও শিব লিঙ্গ চুরি হয়েছে বিগত দিনে।এখন অবশিষ্ট যা আছে তাও সময়ের পরিক্রমায় বিনষ্ট হচ্ছে।এখানে আসলে এখনো নজর কাড়বে রয়ে যাওয়া চতুর্ভূজ আকৃতির ইট ও কারুকাজ খচিত মন্দিরের ভবন ২টি।তবে এবিষয়ে যতদুর জানাযায় জমিদারী আমলের শুরুর দিকে শিব মন্দির ও দক্ষিণা-কালী মন্দির সহ অন্যান্য স্থাপনা তৈরী করেন জমিদারগন।বাগেরহাটে আউলিয়া সম্রাট খাঁজা খাঁনহাজান আলীর আগমন ও তার স্থাপনা সমূহ নির্মাণের সমসাময়িককালে এখানে এই শিব ও দক্ষিণা-কালী মন্দির,জমিদার বা রাজবাড়িসহ অন্যান্য স্থাপনা নির্মিত হয়।সম্ভবত গন্ধর্ব নারায়ণ চৌধুরীর জমিদারি সময়ে ওই মন্দির নির্মিত হয়।সরেজমিনে গিয়ে,কালী মন্দিরে কোন ফলকের অস্তিত্ব দেখা না গেলেও শিব মন্দিরটির ফলকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায়,১৯৪৭ সালে মন্দিরটি সংস্কার করেন সুকুমারী চৌধুরানী ও সরজবালা চৌধুরানীর মেজ ছেলে বীরেন্দ্র কুমার রায় চৌধুরী। শিব মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা মহেন্দ্র নারায়ণ রায় চৌধুরীর সহধর্মীনি ব্রহ্মময়ী ও শশ্রুমান কাদম্বিনী রায় চৌধুরানী।তাদেরসহ অসংখ্য স্মৃতি বহন করছে এই মন্দিরে।যা বর্তমানে অনেকের কাছেই অজানা।এই মন্দির আর মন্দিরকে ঘিরে মঘিয়া বিলিন প্রায় ছোট রাজ বাড়ি ও বড় রাজবাড়ীর তখকার নানা ইতিবৃত্ত আজকের প্রজন্মের কাছে নেহাৎ গল্পের মতো। সংরক্ষণের অভাবে হাজারো স্মৃতিময় ইতিহাস আজ বিলিন প্রায়।দিঘির পারে পরিদের আনাগোনা, পানশী নৌকায় চরে রাজবাড়ী রাজকন্যা।রাজার হাকে প্রজারা কাপে বিচার শালায়।মহল সাজানো রাজকীয়তায় এগুলো এখন গল্পের মতো তবে এমনটিয় ছিল বলে পূর্ব পুরুষের কাছে সুনেছেন এলাকার অনেকে।পরে থাকা কালের সাক্ষী মন্দির দুটি জমিদারগন তৈরি করলেও কালের পরিক্রমায় এখন তা সার্বজনীন রূপ নিয়েছে।সরেজমিনে গিয়ে দেখতে পাবেন সাইনবোর্ড হয়ে কচুয়া-চিতলমারী সড়কের গাঘেঁষে মঘিয়া ইউনিয়ন পরিষদের নিকটেই অরক্ষিত মন্দির ২টি দিনেরপর দিন জরাজীর্ণ অবস্থায় পরে আছে।মন্দিরের সামনের মাঠে এখনো দৃশ্যমান আছে অন্য কোনো স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ এর পূর্ব দিকে রয়েছে পুকুর।শুধু তাই নয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শীতলা দেবীর পূজার স্থানে রয়েছে বিশালাকার বটবৃক্ষ এর চারি পাশে ফাঁকা মাঠ উত্তরে ছোট রাজবাড়ি।জরাজীর্ণ হয়ে পরে থাকলেও সৌন্দর্যের কমতি নেই এখনো।রাস্তা থেকে যাওয়ার পথে সকলের মনকারে এ দৃষ্টিনন্দন পুরাতন স্থাপত্যটি।এ মন্দির সম্পর্কে কথা হয়েছিল বর্তমান মন্দির কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সাধন কুমার দাসের সাথে তিনি বলেন,এখনো প্রতি বছরের বৈশাখ মাসে এখানে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।তাছাড়া শিব চতুর্দশীকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করা হয়।তাছাড়া এলাকা ও দূরদূরান্তের অনেক মানুষ তাদের মানত দিতে পূজা অর্চনা করে থাকেন।জাগ্রত এই মন্দিরকে ঘিরে রয়েছে অনেক অনেক ইতিহাস যা বলে শেষ করা কঠিন।কচুয়া উপজেলায় আর কোথাও এমন নিদর্শন খুজে পাওয়া যাবে না।এত কিছুর পরেও তিনি কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতার কথাও উল্লেখ করেন, প্রথম ১৯৭৭ সালে দক্ষিণা-কালী মায়ের কষ্টি পাথরের মূর্তি চুরি হওয়ার মোধ্যদিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সংশয় সৃষ্টি হয়।এর ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সালে চুরি হয় কষ্টি পাথরের শিব লিঙ্গটিও। এরপর নিরাপত্তা ঘারতি জনিত কারনে প্রশাসনের সহায়তায় ১৯৯৬ সালে ভূবনেশ্বরীর কষ্টি পাথরের মূর্তি খুলনা যাদুঘরে নিয়ে যায়।সবশেষ শিব মন্দিরের চূড়ায় অবস্থিত মহামূল্যবান দৃষ্টি নন্দন কলিশাটাও রাতের অন্ধকারে কেটে নেওয়া হয়েছে।এর ফলে হিন্দু সম্প্রদায়ের যেমন ক্ষতি হয়েছে তেমনি রাষ্ট্রের ক্ষতি হয়েছে কোটি-কোটি টাকা নষ্ট হয়েছে ইতিহাসের উপদান।এখন বাকী যে স্থাপত্য আছে তা কালের স্বাক্ষী হয়ে পরে আছে অযত্ন আর অবহেলায়।এখনো পর্যন্ত নষ্ট হচ্ছে ইট,কাঠ,বালু।তৈরি করা যায়নি সীমানা প্রাচীর।সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়নি এর ইতিহাস।মন্দির কমিটির সভাপতি সুব্রত রায় চৌধুরীর তথ্যমতে,এখনো মাটির নিচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অনেক নিদর্শন।দ্রুত সময়ের মধ্যে এই স্থাপত্য সংরক্ষণ করার মাধ্যমে সঠিক পদক্ষেপ নিলে এই এলাকার ইতিহাস যেমন রক্ষিত হবে তেমনি পর্যটনের মাধ্যমে খুলে যেতে পারে সম্ভাবনাময় আয়ের পথ।এ বিষয়ে দৈনিক শিরোমনির প্রতিনিধির সংগ্রহ করা তথ্য বলছে, বর্তমানে মঘিয়া জমিদারের শেষ বংশধর হিসাবে টিকে আছে কচুয়া সরকারি সিএস পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সুব্রত রায় চৌধুরী ও তার ভাই নূপুর রায় চৌধুরী। তবে মন্দিরটি সার্বজনীন হয়ে উঠলেও বহুদিন পর্যন্ত ছিলনা কোন কমিটি।সুব্রত রায় চৌধুরী ও এলাকা বাসির উদ্যগে ২ বছর আগে গঠন করা হয়েছে একটি কমিটি।কমিটি গঠনের প্রথম বছর নতুন কমিটির উদ্যগে কিছুটা জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে কালীপূজার আয়োজন করা হয়েছিল।এর পর করোনা কালীন সংকটে তেমন আয়োজন আর করা হয়ে ওঠেনি তাদের।তবে ধর্মীয় আচার আনুষ্ঠানিকতা চলছে।এ বিষয়ে আরো জানা গেছে, সর্বশেষ জমিদার শিশির রায় চৌধুরী এই বংশের সন্তান থাকার সময় পর্যন্ত এখানে অনেক বেশি জাঁকজমকপূর্ণ অবস্থা বিরাজমান ছিল।জমজমাট চৈত্র, বৈশাখী মেলা এই মন্দিরকে ঘিরে অনুষ্ঠিত হত বলে অনেকে জানিয়েছেন।স্বাধীনতার পরে এ ধরনের আয়োজন তাদের চোখে আর পরেনি।মূলত জমিদার প্রথা বিলোপের পর হতে তাদের আর্থিক সংকট ঘনীভূত হয়।একে একে আর্থিক দৈন্যতা বর্তমানে এমন পর্যায়ে যে, জমিদার বংশের উত্তরসূরী হয়েও শিক্ষকতা,কৃষি সহ সাধারণ পেশায় কাজ করে তারা জীবন ধারণ করছেন।এই অবস্থায় তাদের পক্ষে প্রাচীন স্থাপত্যসমূহ সংস্কার বা সংরক্ষণ করা অনেকটা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।কচুয়া উপজেলার সদ্য বিদায়ী নির্বাহী কর্মকর্তা সুজিৎ দেবনাথ এ নিদর্শন সংরক্ষণ করা দরকার বলে গণমাধ্যমে উল্লেখ্য করেছিলেন।তিনি বলেছিলেন এটি সংরক্ষণ করে পর্যটন উপযোগী করলে একদিকে যেমন এলাকার আয় বাড়বে অপরদিকে দর্শনার্থীরা অতীত সম্পর্কে জানতে পারবে।এলাকাবাসী সহ স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়েরা বলছেন,বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এদিকে যদি দৃষ্টি দেন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন তবে একদিকে যেমন ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষিত হবে তেমনি এটি হয়ে উঠতে পারে দর্শনীয় স্থানের মধ্যে অন্যতম নিদর্শন।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]
Copyright © 2024 দৈনিক শিরোমনি | shiromoni.com. All rights reserved.