নাম বদলের পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে বহুজাতিক কোম্পানি ইউনিলিভার কনজুমার কেয়ার লিমিটেডের শেয়ারের দাম বেড়েই চলেছে। ‘গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন বা জিএসকে’ থেকে নাম বদলে ‘ইউনিলিভার কনজুমার কেয়ার’ নাম গত ২৬ নভেম্বর থেকে কোম্পানিটির শেয়ার পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু হয়েছে। এরপর প্রতি কার্যদিবসেই কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েছে। মাত্র ছয় কার্যদিবসে প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ১ হাজার ৩৫১ টাকা।
হরলিক্স, মালটোভা, গ্ল্যাক্সোজ-ডি, সেনসোডাইন’র মতো পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে দাপটের সঙ্গে ব্যবসা করা গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন ১৯৭৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কনজিউমার হেলথকেয়ার ও ফার্মাসিটিক্যালস দুই ইউনিটের মাধ্যমে দাপটের সঙ্গে ব্যবসা করলেও লোকসান দেখিয়ে ২০১৮ সালে ওষুধ উৎপাদন কারখানা এবং ফার্মাসিউটিক্যাল বিজনেস ইউনিটের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় বহুজাতিক কোম্পানি।
এরপরই ইউনিলিভারের কাছে শেয়ার বিক্রির ঘোষণা আসে। এ সংক্রান্ত প্রথম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় ২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর। সে সময় ইউনিলিভার ও জিএসকের পক্ষ থেকে দুটি পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ভারত, বাংলাদেশ ও এশিয়ার অন্য ২০টি দেশের বাজারে জিএসকের চলমান কনজিউমার হেলথ ড্রিংকস ব্যবসা কিনে নিচ্ছে অ্যাংলো-ডাচ জায়ান্ট ইউনিলিভার।
প্রথমে সেটফার্স্টের কাছে থাকা জিএসকে বাংলাদেশের সব শেয়ার ইউনিলিভারের মূল কোম্পানি ইউনিলিভার এনভির কাছে বিক্রি করার কথা ছিল। কিন্তু চলতি বছরের ২২ মার্চ এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ইউনিলিভারের মূল কোম্পানির পরিবর্তে এর সাবসিডিয়ারি ইউনিলিভার ওভারসিজ হোল্ডিংস বিভির কাছে সেটফার্স্টের সব শেয়ার বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এর অংশ হিসেবে গত ২৮ জুন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্লক মার্কেটের মাধ্যমে জিএসকের শেয়ার কিনে নেয় ইউনিলিভার। ৯৮ লাখ ৭৫ হাজার ১৪৪টি শেয়ারের প্রতিটি কেনা হয় ২ হাজার ৪৬ টাকা ৩০ পয়সা করে। শেয়ার কিনে নেয়ায় দুদিনের মধ্যে নতুন এমডি নিয়োগ দেয়া হয় প্রতিষ্ঠানটিতে। সেই সঙ্গে ‘গ্লাক্সোস্মিথক্লাইন বা জিএসকে’ নাম বাদ দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির নতুন নাম দেয়া হয় ‘ইউনিলিভার কনজুমার কেয়ার’।
নাম বদল হলেও ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত শেয়ারবাজারে আগের নামেই কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হচ্ছিল। তবে ২৬ নভেম্বর থেকে নতুন নামে লেনদেন শুরু হওয়ার পাশাপাশি ক্যাটাগরিও বদলে যায় কোম্পানিটির। ওষুধ ও রসায়ন খাত থেকে কোম্পানিটি খাদ্য খাতের আওতাভুক্ত হয়। নতুন নামে ও নতুন ক্যাটাগরিতে লেনদেন শুরু হতেই ইউনিলিভার কনজুমার কেয়ার বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে।
ক্রেতাদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসায় গত সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েছে ২৭ দশমিক ৬২ শতাংশ। টাকার অঙ্কে বেড়েছে ৭৫৭ টাকা ৪০ পয়সা। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৫০০ টাকা, যা আগের সপ্তাহের শেষে ছিল ২ হাজার ৭৪২ টাকা ৬০ পয়সা। আগের সপ্তাহে দাম বাড়ে ২৭ দশমিক ৬২ শতাংশ বা ৬৯৫ টাকা ৮০ পয়সা।
শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার প্রেক্ষিত্রে গত ৭ ডিসেম্বর বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে তথ্য প্রকাশ করে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। ওই সতর্ক বার্তায় ডিএসই জানায়, শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার কারণ জানতে চেয়ে কোম্পানিটিকে নোটিশ পাঠানো হয়। জবাবে কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সম্প্রতি শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার পিছনে কোন অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ১২ কোটি ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটির মোট শেয়ার সংখ্যা ১ কোটি ১০ লাখ ৪৬ হাজার ৪৪৯ টাকা। এর মধ্যে ৯০ দশমিক ৫১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারী এবং ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে। আর বিদেশিদের কাছে আছে দশমিক ৩৬ শতাংশ।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]