রেজিঃ নং ডিএ ৬০০৯ | বর্ষ ১৪ | ৪ পৃষ্ঠা ৩ টাকা || শনিবার | ১৬ নভেম্বর ২০২৪ | ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
শাকিল হোসেন, নিয়ামতপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধিঃ নওগাঁর নিয়ামতপুরে পাড়ইল ইউনিয়নের বনগাঁ চান্দইল খালের ওপড় ব্রিজ আছে কিন্তু দুপাশে কোনো সড়ক নেই। সড়কবিহীন ব্রিজটি অকেজো হয়ে পড়ে আছে।
সংশ্লিষ্ট বিভাগের বিরুদ্ধে অনর্থক সরকারি টাকা অপচয়ের অভিযোগ উঠেছে। শুধুমাত্র একটি গ্রামের শ্বশানে যাওয়ার জন্যই খালের উপর নির্মিত হয়েছে এই ব্রীজ।
বুধবার ৩ ফেব্রুয়ারী বিকেলে সরেজমিন জানা গেছে, উপজেলার পাড়ইল ইউনিয়নের বনগাঁ চান্দইল গ্রামের দক্ষিন পাশে সিংড়া জামাইপাড়া খালে ৩২ ফুট দৈর্ঘ্য ব্রিজ নির্মাণ হয়। গাংগোর-বাঘরাইল রাস্তার বনগাঁ চান্দইল গ্রামের দক্ষিন পূর্ব দিকে যাওয়ার পথে রাস্তার পাশেই চোখে পড়বে এই সংযোগ সড়ক বিহীন ব্রিজটি। ব্রিজটির মূল অংশের কাজ শেষ হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো পরিকল্পনা ছিল না দুই পাশের সংযোগ গাইড অংশের কাজ শেষ করার। সম্প্রতি অত্র ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ মুজিব গ্যান্দা নিজ অর্থায়নে বনগাঁ চন্দইল হতে সিংড়া যাওয়ার গ্রাম্য সড়ক হতে ব্রীজ পর্যন্ত প্রায় ৪শ ফিট দৈর্ঘ্য ৮ফিট প্রস্থ সংযোগ সড়ক নির্মানের জন্য জায়গা ক্রয় করে, এবং তাতে সরকারী অর্থায়নে মাটি ভরাটের কাজ চলছে।
নিয়ামতপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর নিয়ন্ত্রণাধীন সেতু-কালভার্ট নির্মাণ কর্মসূচির ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের কাজ ২০১৯-২০ অর্থ বছরে ২৪ লাখ ৪৮ হাজার ৭শ ৪৬ টাকা ব্যয়ে উপজেলার পাড়ইল ইউনিয়নের সিংড়া জামাইপাড়া খালের উপর ৩২ ফিট দীর্ঘ একটি আরসিসি সেতু নির্মাণ করা হয়। এই সেতু নির্মাণের দায়িত্বে ছিল মেসার্স তোহতোবা এন্টারপ্রাইজ।
প্রায় সাড়ে ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ব্রিজ নির্মাণ করলেও দুপাশে কোন সংযোগ সড়ক না থাকায় তা কোনো কাজে আসছে না। এতে আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের জনগণকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ভুক্তভোগীরা অবিলম্বে ব্রীজের দুপাশে সংযোগ সড়ক তৈরী করতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
ব্রিজের দিয়ে বনগাঁ চন্দইল, সিংড়া অপর অংশে নাচোল উপজেলার ভালুকুড়ি, পিরপুর গ্রামসহ কয়েকটি গ্রামের মানুষ চলাচল করে প্রতিনিয়ত। বর্ষার সময় এখানকার মানুষের একমাত্র উপায় বাঁশের তৈরী আঁড়। বছরের পর বছর এই গ্রামের মানুষকে অপেক্ষা করতে হয়েছে এই একটি ব্রিজের জন্য।
ব্রীজের এই সংযোগ সড়ক না থাকার কারণে কয়েকটি গ্রামের মানুষ এই ব্রিজটি ব্যবহার করতে পারছেন না। এতে প্রতিদিনই চরম দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে কয়েকটি গ্রামের শত শত মানুষের।
এদিকে কৃষক তাদের উৎপাদিত পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে অনেক পথপাড়ি দিয়ে তবেই গ্রামসহ বিভিন্ন বাজারে নিয়ে যেতে পারছেন অথচ এই ব্রিজটি ব্যবহারের উপযোগী হলে বনগাঁ চান্দইল, সিংড়া অপর অংশে ভালুকুড়ি, পিরপুর গ্রামের মানুষের যোগাযোগ সহজ হতো।
নাচোল উপজেলার ভালুকুড়ি পিরপুর গ্রামের সুতরা মুর্মুর ছেলে মহন, মৃত লেদু বাসকির ছেলে বেশম বাসকিসহ আরও অনেকেই জানান, আমরা এই কয়েকটি গ্রামের মানুষ খুবই অবহেলিত। আমাদের গ্রামে নেই উন্নত মানের যোগাযোগ ব্যবস্থা। এই পথ দিয়ে আমাদের গ্রামের কিছু ছেলে মেয়ে বনগাঁ চান্দইল এনজিও স্কুলে যায়। এছাড়া সিংড়া গ্রামের মানুষ মারা গেলে শুধুমাত্র লাশ শ্বশানে নেওয়ার জন্য এই খাল পার হতে হয়। সিংড়া গ্রামের লোকেরা অনেক কষ্টে স্থানীয় চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করে এই স্থানে একটি ব্রিজের অনুমোদন নিয়ে এসেছে। কিন্তু ব্রিজটির মূল অংশের কাজ শেষ হলেও দুই পাশের সংযোগ গাইডলাইনের কাজ এখনো পর্যন্ত না হওয়ায় আমরা এই ব্রিজটি ব্যবহার করতে পারছি না। এতে আমাদের যে চরম দুর্ভোগের মধ্যে চলাচল করতে হচ্ছে।
পাড়ইল ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য মইনুল ইসলাম বলেন, ব্রীজের কোন রাস্তা ছিল না। আমাদের ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নিজ অর্থ ব্যয় করে ব্রীজের এক অংশে রাস্তা নির্মান করে দিচ্ছেন।
পাড়ইল ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সৈয়দ মুজিব গ্যান্দা বলেন, ঐখানের কয়েক গ্রামের মানুষ অনেক কষ্টে খাল পার হতো। আমি চেষ্টা করে এই ব্রীজ নির্মান করাই। কিন্তু ব্রীজে কোন সংযোগ সড়ক না থাকায় আমি নিজের অর্থ ব্যয় করে রাস্তার জন্য জায়গা ক্রয় করে দেই। সরকারী প্রকল্পের মাধ্যমে বর্তমানে ঐ জায়গায় মাটি ভরাটের কাজ চলছে।
নিয়ামতপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম জানান, প্রায় সাড়ে ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের অর্থায়নে ওই স্থানে ব্রিজ নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। খালে ঐপারে সিংড়া গ্রামের শ্বশান রয়েছে। শ্বশানে যাওয়ার জন্য ব্রীজটির খুব প্রয়োজন ছিল। তাই ব্রীজটি নির্মান করা হয়েছে এবং জনগণের স্বার্থে নতুন রাস্তা নির্মানে মাটি ভরাটের কাজ চলছে।