নীলফামারী প্রতিনিধি: মানসম্মত ও পরীক্ষিত বীজ, আধুনিক চাষাবাদ এবং বিজ্ঞানসম্মত পরামর্শ তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় রোপা আমন পরবর্তী সময়ে পতিত জমিতে সরিষা চাষে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।সাধারণত রোপা আমন কিংবা বোনা আমন কাঁটার পর দুই থেকে আড়াই মাস জমি পতিত থাকে। তারপর জানুয়ারির শেষের দিকে বোরো মৌসুমের চারা রোপণ শুরু হয়। এই সময়টিকে অনাবাদি না রাখতেই এই কৌশল অবলম্বন করেই প্রকল্পটি গ্রহণ করেছে উপজেলা কৃষি বিভাগ। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছর উপজেলার ৮২০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল। চলতি মৌসুমে উপজেলার ১০ ইউনিয়নে ৯৬০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর আগের বছর তুলনামূলক ভাবে সরিষার আবাদ কম ছিল, সেই হিসেবে চলতি মৌসুমে এবার সরিষার আবাদ অনেক বেড়েছে। অন্যদিকে অনুকূল আবহাওয়ায় চলতি মৌসুমে ডিমলা উপজেলায় সরিষার আবাদ ভালো হয়েছে। দামও ভালো থাকায় কৃষকেরা এবার সরিষা চাষে আগ্রহ বাড়িয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছর সরিষা চাষিগণ অধিক লাভবান হবেন বলে আশা প্রকাশ করছেন তারা। উপজেলার নাউতারা ইউনিয়নের সাতজন শালহাটি ব্লকের কৃষক হরিদাস চন্দ্র রায়, আব্দুল কাদের ও পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের সুলতান বসুনিয়া, ডিমলা সদর ইউনিয়নের রামগঙ্গা এলাকার কৃষক আব্দুর রশিদ (লেবু) ও পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নের কৃষক শাহাজাহান বলেন, ডিমলা উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের সহায়তায় এই প্রথম আমাদের এলাকায় কৃষি ব্লকের মাধ্যমে ১০-২০ একর জমিতে সরিষা আবাদ করেছি, ফলনও ভালো হয়েছে। ভবিষ্যতে আমরা অনেককেই সরিষার বীজ দিতে পারব। গয়াবাড়ী ইউনিয়ন ব্লকের উকিলপাড়া গ্রামের স্থানীয় কৃষক আলী মিয়া জানান, গত বছর সরিষার ভালো দাম পাওয়ায় চলতি বছরে আরও বেশি জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন তিনি। তিনি বলেন ‘ভালো ফলন হওয়ায় অবশ্যই দাম ভালো পাব বলে আশা করছি।’নাউতারা ইউনিয়ন আকাশকুড়ি ঘাটের পাড় গ্রামের কৃষক মৃত আঃ গফুর মিয়ার ছেলে জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন,গত বছর সরিষার ভালো দাম পাওয়ায় চলতি বছরে ৫/৬ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। এতে বিঘা প্রতি খরচ হচ্ছে ৫ হাজার টাকা বা তারও বেশি। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার সরিষার আবাদ ভালো হবে এ প্রত্যাশা করেন তিনি। তিনি বলেন, এবার ফলন ভালো হলে বিঘা প্রতি ৫ মন বা তারও বেশি সরিষা ঘরে তুলতে পাব। আর প্রতি বিঘায় সরিষা বিক্রি হবে ১২ হাজার থেকে ১৩ হাজার টাকা পর্যন্ত যা আমাদের আর্থিক ভাবে অনক উপকারে আসবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (কৃষিবিদ) মো. সেকেন্দার আলী বলেন,রোপা আমন ধান কাঁটার পর বোরো ধান রোপণের মাঝে স্বল্পমেয়াদি বারি সরিষা-১৪, ১৫ ও ১৭ জাতগুলো আবাদ করা যায়। এগুলো ৭৫-৮০ দিনের মধ্যেই ফলন এসে যায়। গড় ফলন বিঘা প্রতি ৫-৭ মণ। যা তেল ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করবে এবং পাশাপাশি জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে। ডিমলায় এবার পূর্বের তুলনায় সরিষার আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। আবহাওয়া অনুকুলে তাই ভালো ফলনের আশা করছি। এছাড়া তেল জাতীয় ফসলের বৃদ্ধি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্লট ভিত্তিক প্রদর্শনী করা হয়েছে। একই কৃষক সরিষা চাষের পরে বোরো ধান এবং আমন ধান করার জন্য উপকরণ পাবে। এই প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে ভোজ্য তেল ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করা। দেশে প্রতি বছর ২৪ হাজার ৮ শত কোটি টাকার ভোজ্যতেল আমদানি করা হয়। দেশে তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি হলে, দেশ সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাব। বাঁচবে বৈদেশিক মুদ্রা, দেশ হবে স্বনির্ভর।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]