নড়াইলের লোহাগড়ার দিঘলিয়া সাহাপাড়া এলাকায় মহানবীকে (সা:) নিয়ে ফেসবুকে কটূক্তির অভিযোগে কলেজছাত্র আকাশ সাহাকে (২০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার রাতে খুলনা এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।আকাশ সাহা লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া সাহাপাড়ার অশোক সাহার ছেলে।লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ আবু হেনা মিলন রোববার সকালে সমকালকে এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, পরে বিস্তারিত জানানো হবে।পুলিশ জানায়, শুক্রবার দিঘলিয়া সাহাপাড়ার কলেজছাত্র আকাশ সাহার ফেসবুকে মহানবীকে (সা.) নিয়ে কটূক্তির ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি ওইদিন জুমার নামাজের পর বিভিন্ন পেশার মানুষের নজরে আসে। এরপর বিক্ষুব্ধ লোকজন আকাশ সাহার গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে তাদের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ করে। বিকেল থেকে উত্তেজনা আরও বাড়তে থাকে। বিক্ষুব্ধ লোকজন একপর্যায়ে সাহাপাড়ার গোবিন্দ সাহা, তরুণ সাহা, দিলীপ সাহা, পলাশ সাহার বাড়িসহ ৫-৬টি বাড়িঘর ভাংচুর করে। এর মধ্যে গোবিন্দ সাহার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনে দুই রুমের টিনের ঘরটি পুড়ে যায়।পুলিশ আরও জানায়, সাহাপাড়ার মন্দিরের চেয়ার, সাউন্ডবক্স ও আখড়াবাড়ি মন্দিরের টিনের চালা ভাঙচুর এবং ইট ছুঁড়ে বিক্ষুব্ধরা। ওই সময় পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ ও ফাঁকা গুলি করে।ঘটনার পর আকাশের বাবাকে হেফাজতে নেয় পুলিশ।লোহাগড়া থানার ওসি শেখ আবু হেনা মিলন বলেন, ওই এলাকায় পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন রয়েছে।এই ঘটনায় শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার দিঘলিয়া গ্রামের সাহাপাড়ায় পরিদর্শনে যান নড়াইল-২ আসনের সাংসদ মাশরাফি বিন মর্তুজা। এসময় তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলেন এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে দেন মাশরাফি।ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে মাশরাফি বলেন, ‘অনাকাঙ্ক্ষিত এই ঘটনা আমাকে ভীষণভাবে মর্মাহত করেছে এবং প্রতিটি মুহূর্তে পোড়াচ্ছে। সবাইকে বিশেষভাবে অনুরোধ করছি, এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট হয়, এমন কাজ করা থেকে দয়া করে বিরত থাকুন।’তিনি বলেন, ‘এই দেশ আমাদের, এই মাটি আমাদের, এই মাটি যেন কারও জন্য অনিরাপদ না হয়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারীদের ফাঁদে পড়ে নড়াইলের হাজার বছরের ঐতিহ্য আর সম্প্রীতির বন্ধনকে এক নিমিষে ম্লান করে দেবেন না। ছেলেবেলা থেকে যে নড়াইলকে দেখে এসেছি, যে নড়াইলকে নিয়ে আমরা গর্ব করি, সেই নড়াইলের সঙ্গে এই নড়াইলকে আমি মেলাতে পারছি না।এদিকে সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, সংখ্যালঘুদের বেলায় সরকার সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে। এখন সময় হয়েছে তাদের বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার।শনিবার বিকেলে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক সমাবেশ ও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে তারা এসব কথা বলেন। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে সরকারী দলের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবিতে এই বিক্ষোভ কর্মসূচির আয়োজন করেন তারা। শহীদ মিনারের সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবে যান সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ।