পটিয়া প্রতিনিধি,দৈনিক শিরোমণিঃ পটিয়া উপজেলার হাইদগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ে অর্থ আত্বসাতের অভিযুক্ত ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি মাহবুবুল আলমকে বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য করার সিদ্ধান্ত গ্রহনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার দুপুরে বিদ্যালয়টির ১৫ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। এসময় তারা উপজেলা চেয়ারম্যান ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সহ প্রায় ১৫ টি সরকারী শিক্ষক সংশ্লিষ্ট দফতরে অভিযোগের অনুলিপি প্রদান করেন। এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্ঠি হয়েছে। এছাড়াও মাহবুবুল আলমের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষিকাদের নির্যাতনের অভিযোগও রয়েছে। লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালে উপজেলার হাইদগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন মাহববুবুল আলম। ওই সময়ে তিনি বিদ্যালয়ে মামলা পরিচালনার নামের অনিয়ম করে বিদ্যালয় তহবিল থেকে ১ লাখ টাকা উত্তোলন করে। পরে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের তদন্তে অনিয়ম ও দূর্নিতি হিসেবে দায় করে। এ ঘটনায় ২০১৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর শিক্ষা বোর্ডের পরিদর্শক খোরশেদ আলম স্বাক্ষরিত স্বারকমূলে এক চিঠিতে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে মাহবুবুল আলমকে বিদ্যালয় তহবিলের ১ লাখ টাকা ফেরত দিতে বলা হয়। গত ৮ বছর পার হয়ে গেলেও তিনি তহবিলের টাকা ফেরত দেয় নি। এদিকে, বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সাইফুদ্দিন খালেদ বাবুল ও বর্তমান সভাপতি আহমদ নুর যোগসাজস করে মাহবুবুল আলমকে বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য হিসেবে অর্ন্তভূক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। মাহবুবুল আলমও উপজেলা বিএনপির প্রভাবশালী সদস্য। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকে বিদ্যালয়টির অভিভাবক, শিক্ষক ও স্থানীয়দের মাঝে অসন্তোষ ও ক্ষোভ সৃষ্ঠি হয়। বিদ্যালয় পরিচলানা কমিটির বর্তমান শিক্ষানুরাগী সদস্য শহীদুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘একজন দূর্নিতিবাজ ও অনিয়ম দায়ে চিহ্নিত ব্যক্তিকে কোন অবস্থাতে দাতা সদস্য অর্ন্তভূক্ত করতে দেয়া হবে না। তাকে গত সভায় দাতা সদস্য নেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহন করলে আমি তার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছি। সরকারী নির্দেশের বাইরে কোন অগনতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত না নিতে আমি ও কমিটির বর্তমান অভিভাবক সদস্য তাপস গুহ ও শিক্ষক প্রতিনিধিরা প্রতিবাদ করেন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম শরীফ জানিয়েছেন, ‘গত ৩১ মে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির বৈঠকে মাহবুবুল আলমকে বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য হিসেবে অর্ন্তভূক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ‘অর্থ আত্বসাতের সাথে দাতা সদস্যের অর্ন্তভূক্তি করার কোন সম্পৃক্ততা নেই।’ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাঈনুদ্দিন মজুমদার জানিয়েছেন, ‘অর্থ আত্বসাতে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে পূনরায় দাতা সদস্য অর্ন্তভূক্ত করাটা কোনবস্থাতে নিয়ম নীতির মধ্যে পরে না। এ সিদ্ধান্তটা হবে বেআইনী ও আত্বঘাতী।’ পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ জানিয়েছেন, ‘এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক ড. বিপ্লব গাঙ্গুলি জানান, ‘২০১৯ সালের ২১ আগস্টে আমি নিজেও মাহবুবুল আলমকে বিদ্যালয়ের ফান্ডের টাকা ফেরত দেয়ার জন্য একটি আদেশ দিয়েছিলাম। তিনি তাও অমান্য করেছে। বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য কে হবে না হবে সেটা আমাদের বিষয় না। অনিয়ম করে উত্তোলন করা বিদ্যালয়ের অর্থ তহবিলের টাকা মাহবুবুল আলমকে ফেরত দিতে হবে।’ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আহমদ নুর বলেন, ‘কেউ যদি এ ধরনের লিখিত অভিযোগ দিয়ে থাকে তাহলে এটি স্কুলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছে। আমরা মাহবুবুল আলমকে দাতা সদস্য হিসেবে নয়, মূলত আজীবন দাতা হিসেবে অর্ন্তভূক্ত করেছি। যারা বিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ করবে আমরা তাদের জন্য আইনগত ব্যবস্থা নেব।’ এ ব্যাপারে মাহবুবুল আলমের সাথে মুঠোফোনে একাধিবার যোগাযোগ করার চেষ্ঠা করে যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নি।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]