পদ্মার এমন সম্ভাবনার হাতছানির মধ্যেও নতুন এক ভয় জাগছে রাজধানীর মানুষের মনে। দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত যানজটের আগুনে পদ্মার গাড়ির স্রোত নতুন করে ঘি ঢেলে দিতে পারে বলে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা আভাস দিয়েছেন। বলা হচ্ছে, এতদিন ফেরির ভোগান্তির কারণে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অনেক যানবাহন পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবহার করে গন্তব্যে যেতো। পদ্মা সেতু চালু হলে এই রুটে যাওয়া যানবাহন মুখ ফিরিয়ে নেবে। বিশেষজ্ঞদের একটি পরিসংখ্যান বলছে, সেতু চালুর পর পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুট ৪০ শতাংশের মতো আকর্ষন হারাবে। তার মানে এই রুটের ৪০ শতাংশ যানবাহন পদ্মা সেতু ব্যবহার করবে। একইসঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ায় দেশের অন্যান্য জেলার সঙ্গেও সরাসরি যোগাযোগ বেড়ে যাবে দক্ষিণের জেলার সঙ্গে।পদ্মা সেতু হয়ে দিনে ২৫ হাজারের বেশি যানবাহন চলবে। বছর বছর গাড়ি চলাচলের এই সংখ্যা বাড়তে থাকবে। এই যানবাহন পুরোটাই আসা যাওয়া করবে রাজধানীর উপর দিয়ে। বিশেষ করে রাজধানীর দুটি সড়ক ব্যবহার করে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে এসব যানবাহন যাবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে। এই দু’টি সড়কের একটি বাবুবাজার ব্রিজ হয়ে গেছে। অন্যটি জুরাইন-পোস্তাগোলা হয়ে গেছে। এই দুই সড়কে এমননিতে যানজট নিত্যদিনের চিত্র। সেতু চালু হলে এই যানজট নতুন রূপে দেখা যেতে পারে। তখন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কোনো জেলা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে দ্রুত ঢাকায় পৌঁছার পর নির্ধারিত গন্তব্যে যেতে নতুন ভোগান্তির কারণ হতে পারে ঢাকার যানজট। পদ্মা সেতু প্রকল্প হাতে নেয়ার পরই এই যানজটের বিষয়টি সামনে এসেছিল। তখন বলা হচ্ছিল রাজধানীর যানজট এড়াতে আউটারে এক্সপ্রেসওয়ের মতো চার লেনের রিং রোড করা হবে। এমন সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনাও নেয়া হয়। যদিও এই প্রকল্পের এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো কিছু দেখা যাচ্ছে না।যানজটের কারণে রাজধানী এখন অনেকের কাছে অভিশাপের মতো। বিশৃঙ্খল ট্রাফিক ব্যবস্থা। অনিয়ন্ত্রিত যানবাহন আর সেবা সংস্থাগুলোর স্বেচ্ছাচারিতা দিনে দিনে নগরের ট্রাফিক ব্যবস্থাকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। জীবন জীবিকার তাগিদে বসবাস করা এখানকার বাসিন্দাদের প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ সঙ্গী করে পথ চলতে হচ্ছে। যানজট কমাতে একের পর এক উড়াল সেতু, ওভার পাস নির্মাণ করা হলেও এর প্রভাব খুব একটা পড়ছে না। নতুন করে তৈরি হচ্ছে মেট্রোরেল ও এক্সপ্রেসওয়ে। চলছে বিআরটি প্রকল্পের কাজ। এসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফলে ভবিষ্যতে নগরীর যানজট কমবে এমনটি আশা করা হচ্ছে। যদিও নগরবিদরা বলছেন, ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন না হলে এমন বড় প্রকল্প দিয়ে রাজধানীর যানজট কমানো অসম্ভব।