এ ঘটনায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ এলাকাবাসী ওই কবিরাজকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ না দেওয়ায় মুচলেকা নিয়ে ওই কবিরাজকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।এলাকায় জিনের বাদশা হিসেবে পরিচিত ওই কবিরাজ। রাসেদ, আশ্রাফসহ বিভিন্ন নামে পরিচিত ওই কবিরাজ।
গৃহবধূর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, জিনে ধরেছে ভেবে পরিবার গৃহবধূকে কবিরাজ রাসেদের কাছে নিয়ে যায়। জিন তাড়ানোর জন্য ৬৫ হাজার টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয় শ্বশুরবাড়ির লোকজন। চুক্তি অনুযায়ী এক বছর ধরে ওই কবিরাজ প্রবাসীর স্ত্রীকে ঝাড়ফুঁক দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু রোগী ভালো হচ্ছে না বলে জানান ওই গৃহবধূর মা। সম্প্রতি ওই গৃহবধূর অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাচ্ছিল। গত বুধবার (২ নভেম্বর) হঠাৎ বাবার বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন। খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে কবিরাজের শরণাপন্ন হন তাঁরা। কবিরাজ তাঁকে উদ্ধার করে দিয়ে ৩৫ হাজার টাকা আদায় করেন। পরদিন বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) রাত ৩টায় ঝাড়ফুঁক করে ওই প্রবাসীর স্ত্রীকে উদ্ধার করে দেন বলে জানান এলাকাবাসী। বলা হয়, কবিরাজের দেখানো মতো গৃহবধূর পরিবারের লোকজন তাঁকে বাড়ির পেছনে একটি ছোট গাছ থেকে উদ্ধার করেন। ঘটনার পর গত শুক্রবার (৪ নভেম্বর) অসুস্থ হয়ে পড়লে আবারও ডাকা হয় কবিরাজকে। কবিরাজ রাতে এসে ঘরের আলো নিভিয়ে সবাইকে সরে যেতে বলে ঝাড়ফুঁক শুরু করেন। এ সময় কবিরাজকে টাকা দেওয়া নিয়ে গৃহবধূর পরিবার ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। গৃহবধূর পরিবার স্থানীয় গ্রামবাসীকে খবর দিলে সবাই হাজির হয়।একপর্যায়ে এলাকাবাসীর সন্দেহ হলে কবিরাজকে আটক করে মারধর করা হয়। রাত ২টার দিকে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের উপস্থিতিতে কবিরাজকে পরশুরাম থানা-পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়।
এদিকে ওই গৃহবধূর প্রবাসী বাবা দুবাই থেকে টেলিফোনে জানান, ঝাড়ফুঁক করার নামে ওই কবিরাজ তাঁর কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, ওই কবিরাজ তাঁর মেয়েকে জিনে নিয়েছে বলে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যান। আবার টাকা দিলে দু-এক দিন পর দিয়ে যান। কবিরাজ শুধু টাকা নেননি তাঁর মেয়ের সঙ্গে অনৈতিক কার্যকলাপও করে যাচ্ছেন বলে গৃহবধূর বাবা অভিযোগ করেন।
গৃহবধূর শ্বশুর জানান, কবিরাজ রাসেদ তাঁর কাছ থেকে শুধু সিগারেট কিনতেই ৩ লাখ টাকা নিয়েছেন। দিন তারিখসহ তাঁর কাছে লেখা রয়েছে সেসব। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় আরও ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন কবিরাজ। তিনি দাবি করেন তাঁর কাছে সবকিছুর প্রমাণ আছে।
তিনি আরো জানান, এক বছর ধরে ঝাড়ফুঁক করলেও রোগীর কোনো উন্নতি হয়নি। দুই তিন-দিন পর আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে কবিরাজ গিয়ে ঝাড়ফুঁক করলে আবার সুস্থ হয়ে যান। কবিরাজ চলে গেলে দুই দিন পর আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন তাঁর পুত্রবধূ।
চিথলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন জানান, ওই কবিরাজের আসল ঠিকানা চিথলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ শালধর গ্রামে। তবে বর্তমানে রামপুর শ্বশুর বাড়িতে বসবাস করেন। ওই কবিরাজ একেক সময় একেক নামে পরিচয় দেন। তিনি একজন প্রতারক। চারটি বিয়ে করেছেন। বর্তমানে তিনি রামপুর শ্বশুরবাড়িতে এক স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন।
অভিযোগের বিষয়ে ‘জিনের বাদশা’ রাসেদ বলেন, ‘আমি একজন কবিরাজ। নারীদের জিনে আছর করলে আমি ঝাড়ফুঁক দিয়ে ঠিক করে দিতে পারি। ওই প্রবাসীর স্ত্রীকে ১২টি জিন আছর করেছে। তাঁর শরীরে বর্তমানে ১২টি জিন রয়েছে। সবচেয়ে খারাপ জিন হচ্ছে ওয়াশিম। সে নিয়মিত তাকে (গৃহবধূ) তুলে নিয়ে তাদের রাজ্যে নিয়ে যায়। সেখানে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করে। আমি জিন হাজিরার মাধ্যমে ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করে দিয়েছি।’ ৬৫ হাজার টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে রাসেদ জানান, এক বছরের চুক্তি শেষ হওয়ার পর তাঁদের কাছ থেকে আরও কিছু টাকা বাড়তি নিয়েছেন। তবে ২০ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন।
এদিকে কবিরাজের প্রশংসা করে ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূ বলেন, আমাকে জিন উড়াই অন্যত্র নিয়ে যায়। সেখানে আমাকে দুই-তিন দিন আটক রাখে এবং জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক করে। জিনের বাদশা আবার ঝাড়ফুঁক দিয়ে আমাকে উদ্ধার করে দেন। জিনের বাদশা রাসেদ খুবই ভালো মানুষ। সে না থাকলে জিনেরা আমাকে মেরেই ফেলত।
পরশুরাম মডেল থানার পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মনির আহাম্মদ বলেন, এটা কোনো জিনের আছরের ঘটনা নয়। এটা একটা প্রতারণা। কৌশলে টাকা নেওয়ার একটা কৌশল মাত্র। জিনের বাদশা নামে পরিচিত রাসেদ ঝাড়ফুঁকের নামে শুধু টাকা হাতিয়ে নেননি, ওই প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে জিনের কথা বলে নিজেই অনৈতিক কাজ করে যাচ্ছেন। তবে দুই পরিবারের কেউ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতেও রাজি না হওয়া মুচলেকা দিয়ে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
কবিরাজের বিরুদ্ধে থানায় কেন লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলো না এমন প্রশ্নের উত্তরে গৃহবধূর শ্বশুর বলেন, ওই কবিরাজ অনেক কিছু জানে। যেকোনো সময় পরিবারের ক্ষতি করতে পারে। এই ভয়ে কবিরাজের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করা হয়নি।