জেমস রহিম রানা যশোর জেলা প্রতিনিধি দৈনিক শিরোমণিঃ বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে যশোরের বেসরকারি সমাজ উন্নয়ন সংস্থা বাঁচতে শেখার আয়োজনে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা দেয়া হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বাঁচতে শেখা মিলনায়তনে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে এ সম্মাননা দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক ড. অ্যাঞ্জেলা গোমেজ। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে মহান মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনান সম্মাননা প্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের কেন্দ্রীয় সভাপতি অ্যাডভোকেট রবিউল আলম, মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিব বাহিনীর অন্যতম সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অশোক কুমার রায় ও দৈনিক কল্যাণ পত্রিকার উপদেষ্টা সম্পাদক, বিশিষ্ট সাহিত্যিক বীর মুক্তিযোদ্ধা রুকুন উদ দ্দৌলা। এসময় অন্যান্যের মধ্যে আলোচনা করেন বাঁচতে শেখার ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক পলাশ হিউবার্ট গোমেজ, সংস্থার উপদেষ্টা খোন্দকার মোকসুদুল হক, সংস্থার চেয়ারম্যান উম্মে মাকসুদা মাসু, সংস্থার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট যুথিকা বোস, বিজয় দিবস উদযাপন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হাবিবা শেফা প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব দীপক কুমার রায়।মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ গল্পে বীর মুক্তিযোদ্ধাগন বলেন, মানবতার মুক্তির লক্ষেই মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল।এ যুদ্ধ ছিল সমগ্র বাঙালি জাতির গণতান্ত্রিক ও আত্ম নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার যুদ্ধ।আমাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল ধর্ম নিরপেক্ষ স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ে তোলার। দুঃখ, বঞ্চনা, বৈষম্য থেকে মানুষকে বাঁচার পথ দেখানো। কিন্তু বর্তমানে দেশে ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। তাই মহান মুক্তিযুদ্ধকে ধর্মের গন্ডিতে আবদ্ধ রাখা যাবে না। বক্তাগণ বলেন, মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে আমাদের শিশুদেরকে সঠিক শিক্ষা দিতে হবে। পরিবার থেকেই শিশুদের জানাতে হবে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস। এটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আমাদের মনে রাখতে হবে একজন মুক্তিযোদ্ধা আমৃত্যু মুক্তিযোদ্ধা হতে নাও পারে কিন্তু প্রত্যেক রাজাকার আমৃত্যু রাজাকার।আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আমাদের ভৌগোলিক স্বাধীনতা এলেও অর্থনৈতিক মুক্তি এখনো আসে নি। অর্থনৈতিক মুক্তি আসলেই বিজয় দিবসের চেতনা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। আমাদের সকলকে অর্থনৈতিক মুক্তির জন্যে, জাতির কল্যাণের জন্যে একত্রে কাজ করে যেতে হবে। যদিও শোষণমুক্ত গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জিত হয়েছে, তথাপিও আমাদের সেই স্বপ্ন বাস্তবের আঘাতে ছিন্নভিন্ন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনারই অনেক কিছুই এখন চলে গেছে আড়ালে। গণতন্ত্র এখন সংকটের আর্বতে ঘুরপাক খাচ্ছে। অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন এখন স্বপ্ন ও বিলাসিতা। সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ হয়েছে পরিত্যক্ত। আর মুক্তিযুদ্ধের সময় যে জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছিল তা বিভেদ ও সংঘাতে পর্যবসিত। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের ক্ষেত্রে বিজয় দিবস এখনও আমাদের অনুপ্রাণিত করে।বক্তারা বলেন, বিজয় দিবসে মুক্তিযু্দ্েধর চেতনাকে মশাল করে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে হতাশা ঠেলে, প্রত্যয়ে ও সাহসে বুক বেঁধে। পরিস্থিতির কাছে আত্মসমর্পণ না করে প্রগতি ও পরিবর্তনের ধারায় অগ্রসর হতে পারলে আমাদের শ্রষ্ঠ অর্জন স্বাধীনতা আমাদের জীবনে অর্থবহ হয়ে উঠবে। যাদের প্রাণের বিনিময়ে আমরা পরাধীনতার শিকল থেকে মুক্ত হতে পেরেছি, পেয়েছি স্বাধীন দেশ সেই শহীদদের স্বপ্ন পূরণে আমাদের কাজ করতে হবে। তাদের আতœার শান্তির জন্য কাজ করতে হবে। দেশকে ভালোবেসে, দেশের উন্নয়নের দিকে লক্ষ্য রেখে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দেশ ও জাতির কল্যাণে সর্বদা সচল থাকতে হবে। আমাদের জাতীয় জীবনের বিভিন্ন সমস্যা, সংকট, অভাব, অনটন, অশিক্ষা, দারিদ্র্য দূর করে দেশকে একটি আত্মনির্ভরশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই স্বাধীনতাপ্রাপ্তি সকল দিক থেকে অর্থবহ হবে। এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ উন্নয়নের শীর্ষে।অনুষ্ঠানের শেষপর্যায়ে বিজয় ও মুক্তির গান নিয়ে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিশাল আকৃতির কেক কাটার মধ্য দিয়ে মানব জাতির মুক্তিদাতা প্রভু যীশু খ্রীস্টের জন্মদিন শুভ বড়দিন উপলক্ষে প্রাক বড়দিন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।