মনসুর আলম খোকন, সাঁথিয়া (পাবন) প্রতিনিধি:
আইন লংঘন করে পাবনার সাঁথিয়ায় জনবসতি এলাকায়, আবাদি জমিতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশে অবৈধভাবে ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। ইটভাটার কালো ধোঁয়ার দূষণে স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি গাছগাছালি, ফলফলাদি ও ফসলের মারাত্মক ক্ষতিসহ কৃষিজমি হ্রাস পাচ্ছে।এদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়েও বন্ধ করা যাচ্ছে না এসব অবৈধ ইটভাটা। অপরদিকে এসব ইট ভাটায় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ফলে পরিবেশ হারাচ্ছে বৈচিত্র্য, বিপর্যস্ত হচ্ছে জনজীবন।
জানা যায়, সাঁথিয়া উপজেলার সেলন্দা,ধুলাউড়ি,পাটগাড়ী,কাশিনাথপুর,আতাইকুলা,সামান্যপাড়াসহ বিভিন্নস্থানে কৃষিজমিতে, জনবসতি এলাকায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বাজারের পাশে স্থাপন করা হয়েছে ইটভাটা। সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার সামান্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে মেসার্স সাফারী সরদার ব্রিকফিল্ড নামে একটি ইটভাটা। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফসার আলী জানান, ইটভাটার চিমনির কালো ধোঁয়া ও ধুলাবালি বাতাসে উড়ে আসায় শিশুরা শ^াসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ ব্যাপারে উধর্¦তন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোন প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে ভাট্ াসংলগ্ন আবাসিক এলাকায় বসবাসকারীরা জানান, ইট পোড়ানের কালো ধোয়ায় বাড়িতে শিশুরাসহ নিজেরাও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এমনকি গাছের ফলমুল সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কৃষক ছোহরাব হোসেন জানান, আগে ফসলি জমি ছিল। তিনি ওই জমিগুলো জমির মালিকের নিকট থেকে বাৎসরিক লীজ নিয়ে আবাদ করতেন। কিন্তু বর্তমানে ইটভাটার মালিক অধিক টাকা দিয়ে জমির মালিকের নিকট লীজ নেয়ায় তাদের আবাদ করার মতো তেমন জমি নাই। অন্যদিকে ইটভাটার চিমনির পাশেই বৈদ্যুতিক খুঁটিতে ৩টি ট্রান্সফরমার বসানো রয়েছে। এতে যেকোন সময় দুর্ঘটনার আশংকা করছে ইটভাটার শ্রমিকসহ স্থানীয়রা। মেসার্স সাফারী সরদার ব্রিকফিল্ড ইটভাটার মালিক আব্দুল হালিম জানান, বিধি মোতাবেক তার সকল কাগজপত্র জমা দেয়া আছে। তবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে খোঁজ নিয়ে তার সত্যতা পাওয়া যায়নি। উপজেলাতে স্থাপিত এসব ইটভাটার কোন বৈধ কাগজপত্র নেই।সাঁথিয়া স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা ডাঃ সুজয় সাহা বলেন, ইটভাটার কালো ধোয়া ও ধুলাবালিতে মানুষের ফুসফুসে ক্যানসার, শ^াসনালীর এলার্জিক, রাইসাইটিকসসহ নানা রোগে আক্রান্ত হতে পার্।েউপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জিব কুমার গোস্বামী বলেন, কৃষিজমিতে ইটভাটা স্থাপনের কারণে যেমন আবাদী জমি কমতে শুরু করেছে অপরদিকে জমি হারাচ্ছে তার উর্বরতা। পাবনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাশ্যপি বিকাশ চন্দ্র বলেন, ইটভাটায় কাঠ পোড়ানোর বিষয়টা শুনেছি। এ ব্যাপারে উপজেলা পর্যায়ে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে অভিযান পরিচালনা করার জন্য।পাবনা পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক নজরুল ইসলাম বলেন, পাবনা জেলায় কোন ইটভাটাকেই বর্তমানে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয় নাই। এ ব্যাপারে সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ হোসেন জানান, ইতোমধ্যে ইটভাটায় কাঠ পোড়ানোসহ শর্ত ভঙ্গের কারণে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করা হচ্ছে এবং তাদেরকে শর্ত মেনে ইটভাটা পরিচালনা করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এরপরও যদি নিয়ম না মেনে ইটভাটা পরিচালনা করেন,তবে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।