রেজিঃ নং ডিএ ৬০০৯ | বর্ষ ১৪ | ৪ পৃষ্ঠা ৩ টাকা || শনিবার | ২৩ নভেম্বর ২০২৪ | ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
পাহাড় হোক ‘শিক্ষার তীর্থস্থান’ মংমংসিং মারমা
সিংথোয়াং ওয়াং মার্মা বান্দরবান প্রতিনিধি দৈনিক শিরোমণিঃ বান্দরবান পার্বত্য জেলায় নভেম্বর-ডিসম্বের মাস এলেই দূর-দূরান্ত থেকে অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদেরকে ভর্তির জন্য বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হোষ্টেল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করতে দেখা যায়। বেশিরভাগ অভিভাবকগণ নিরাশ মনে বাড়িতে ফিরে যান। কারণ হলো চাহিদার তুলনায় আসন সংখ্যা খুব কম। তবে, দূর-দূরান্ত থেকে নিরক্ষর এই অভিভাবকদের শিক্ষার প্রতি এই আগ্রহ আমাদেরকে আশান্বিত করে। শিক্ষার প্রতি তাদের এই আগ্রহ, আকাঙ্খা একদিনে গড়ে ওঠেনি। বলা যায় এটি একটি ‘বিপ্লব’। যার এ‘বিপ্লব’ ঘটাতে প্রায় ২০ বছর সময় লেগেছে। সরকারী, বেসরকারী, এনজিও, জনপ্রতিনিধি, ধর্মীয় ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ, মিডিয়া সংগঠকসহ বিভিন্ন পর্যায়ে মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে এই আগ্রহ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। শূন্যদের জন্য ‘শিক্ষা’‘শিক্ষা-ই জাতির মেরুদন্ড’- এটি আমাদের সবারই জানার কথা। আর এই কথা আবারও জোরালোভাবে আলোকপাত করেছেন ডঃ মঞ্জরে খোদাঃ (শিক্ষা উন্নয়ন গবেষক)। গত ৬ জানুয়ারী ২০২২ ডেইলি ষ্টার পত্রিকায় শিক্ষার গুরুত্বতা নিয়ে তাঁর একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। এখানে তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের গবেষণার ফলাফল, বিভিন্ন দেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি ইত্যাদি নিয়ে গভীরভাবে আলোকপাত করেছেন। প্রাকৃতিক সম্পদে বদলে ‘মানবসম্পদ উন্নয়ন’ কে অগ্রাধিকার দিয়ে পৃথিবীর কোনো কোনো দেশ উন্নতি সাধন করেছে। জাপান তার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ।ডঃ মঞ্জুরে খোদা ‘গবেষণামূলক, কারিগরি ও প্রযুক্তিগত শিক্ষাকেন্দ্রকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, চীন তার শিক্ষা ও কারিগরি দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে মানবসম্পদ উন্নয়ন ঘটিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে জাপান, আমেরিকাকে পিছনে ফেলেছে। অর্থাৎ কোনো কোনো ব্যক্তি, দেশ শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে শূন্য থেকে শিখরে পৌঁছেছে।‘শিলং’ শিক্ষার তীর্থস্থান বিশাল ভারতে ‘মেঘালয় রাজে শিলং’ খুব ছোট্ট একটি শহর । পাহাড়ি এই শহর টি দেখতে অনেকটা বান্দরবানের থানচির মতো। কিন্তু ‘শিক্ষা ব্যবস্থা’ এর কারণে এই ছোট্ট পাহাড়ি শহর টি ভারতের ‘শিক্ষার তীর্থস্থান’ হিসেবে পরিচিত। ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে, বিভিন্ন দেশ থেকে এখানে পড়তে আসে। বিশেষ করে, ইংরেজী শিক্ষার ক্ষেত্রে অতুলনীয়। খরচও খুবকম। বান্দরবান সদরে একজন শিক্ষার্থীর পিছনে যে খরচ শিলং-এও সে পরিমাণ খরচ হয়। এর চাইতে বেশি নয়। পাহাড় হোক ‘শিক্ষার তীর্থস্থান’ পার্বত্য জেলা গুলোতে সমতল ভূমি খুব কম। নেই বললেই চলে। এখানে পাহাড়ের পর পাহাড়। যা সমতল ভূমি ছিল কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প গিলে ফেলেছে আগে। ‘শিক্ষা’-ই এখানে মানবসম্পদ উন্নয়নের একমাত্র চাবিকাঠি। ডঃ খোদার মতে, ‘‘মানবসম্পদ ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত জ্ঞান-বিজ্ঞান-শিক্ষা ও গবেষণা। শিক্ষা হচ্ছে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য একটি পরিকল্পিত প্রক্রিয়া’’। সেক্ষেত্রে আমরা ‘শিলং’ এর শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে কারিগরি, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী শিক্ষাকে সংযুক্ত করতে পারি। অর্থাৎ ‘ইংরেজী, গণিত, বিজ্ঞান, কারিগরি, প্রযুক্তি শিক্ষা’ সমন্বয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা শুরু যায় কিনা? অন্তত: কয়েকটি জায়গায়। অন্ধকার জনপদে শিক্ষার প্রতি আগ্রহী হতে ২০ বছর সময় লেগেছে, শিক্ষার তীর্থস্থান হিসেবে গড়ে তুলতে হয়তো আরো কয়েকবছর সময় লেগে যেতে পারে। লাগুক সময়। যদি কেউ কোনো প্রতিষ্ঠান শুরু করে তাতে ক্ষতি কী? ভারতের ছোট্ট শহর ‘শিলং’ কিন্তু আমাদেরকে অনুপ্রেরণা ও সাহস দিচ্ছে ! লেখা সমাপ্ত করার আগে আমি পুনরায় একটি লাইন লিখে সমাপ্ত করছি, ‘‘ শিক্ষা হচ্ছে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য একটি পরিকল্পিত প্রক্রিয়া’’।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]
Copyright © 2024 দৈনিক শিরোমনি | shiromoni.com. All rights reserved.