মোঃ যুবরাজ মৃধা, পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি: চলতি বছরের এপ্রিলের দিকে পায়রা বন্দরের জেটিতে ভিড়তে শুরু করবে বিদেশি জাহাজ। ২০২৩ সাল পায়রা সমুদ্র বন্দরের যৌবনের বছর ধরে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে বন্দরের প্রথম টার্মিনাল ও ডকইয়ার্ড নির্মানের কাজ।
তবে এ বছরের জুনে বন্দরের প্রথম টার্মিনাল সহ বন্দরের অনুসাঙ্গিক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার প্রকল্পটি শেষ করার সময়সীমা নির্ধারিত থাকলেও তা শেষ হচ্ছে না।
মার্চের শেষ বা এপ্রিলে শুরু হবে দেশের একমাত্র গভীর, আধুনিক ও টেকসই তৃতীয় ও স্বাধীন বাংলার প্রথম সমুদ্র বন্দরের টার্মিনালে কন্টেইনার পরিবহন সহ অনান্য পন্য আমদানি রপ্তানির মহা কর্মযজ্ঞ।
সে লক্ষ্যে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার রামনাবাদ পাড়ে চলছে পায়রা বন্দরের উন্নয়নের মহা কর্মযজ্ঞ। তবে টার্মিনালসহ আনুষাঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে এ বছরের জুনে বন্দর প্রকল্প শেষ করার সময়সীমা নির্ধারিত থাকলেও তা এখনো শেষ হয়নি। এছাড়া আন্দারমানিক নদীর ওপর ছয় লেনের সেতু নির্মাণের কাজও দ্রুত সময়ের মধ্যে শুরু হচ্ছে।
একইসঙ্গে ভূমি অধিগ্রহণের ফলে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য ৩ হাজার ৪২৩টি বাড়ি নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর ৪ হাজার ২০০ সদস্যের জন্য বিভিন্ন পেশাগত প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে।
পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য মতে, ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টিয়াখালী ইউনিয়নের ইটবাড়িয়া গ্রামের ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন। তবে ২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট সমুদ্র বন্দরটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। চীনের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এবং কোরিয়ান পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসব উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করছে।
বন্দরের প্রকৌশলীরা জানান, সার্ভিস জেটি এবং জেটি সংলগ্ন সড়কের কাজ ৯৮.৫০ শতাংশ, ইয়ার্ড এবং জেটির কাজ ৬৭ শতাংশ, ৬ লেনের সংযোগ সড়ক ও ব্রিজের কাজ ৩৫ শতাংশ এবং বানতিপাড়া বাজার থেকে সংযোগ সড়ক পর্যন্ত ছয় লেনের সড়কের কাজ ৮৮ শতাংশ শেষ হয়েছে। পাশাপাশি আন্ধারমানিক নদীর ওপর ১.১২ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণের লক্ষ্যে ঠিকাদার নির্বাচনের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এসব কাজ শেষ হলে পদ্মা সেতুর মাধ্যমে রাজধানীর সঙ্গে বন্দরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হতে আর কোনো বাধা থাকবে না।
তিনি আরো জানান, ইতোমধ্যে বন্দরে ২৩৬টি বিদেশি সমুদ্রগামী জাহাজ এবং ৫৭০টি দেশীয় লাইটারেজ জাহাজের পণ্য হ্যান্ডলিং করার মাধ্যমে পায়রা বন্দর প্রায় ১৮ কোটি টাকা এবং সরকার রাজস্বখাতে প্রায় ৫৩০ কোটি টাকা (ভ্যাটসহ) আয় করেছে। জাহাজ চলাচল নিশ্চিত করার জন্য চ্যানেলের গভীরতা -৬.৩ মি: সিডি বজায় রাখার লক্ষ্যে রামনাবাদ চ্যানেলের জরুরি রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিং কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) এস এম ওমর ফারুক বলেন, আমাদের এই প্রকল্পের আওতায় ৬৫০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৬০ মিটার প্রস্থ একটি জেটি নির্মাণ করছি। যার ৪টি ৯০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ২০ মিটার প্রস্থ ট্রেসেল দিয়ে এর পিছনের ইয়ার্ড সংযুক্ত হবে। এই ইয়ার্ড ৬৫০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৫০০ মিটার প্রস্থের। মূল জেটির পাইলিং কাজ চলমান রয়েছে এবং ট্রেসেল ৪টি মধ্যে ৩টির এম আর কাজ সম্পূর্ণ করেছি। এছাড়াও ইয়ার্ডের সাইড ডেভেলপমেন্টের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ সদস্য ক্যাপ্টেন জাহিদ হোসেন তিনি জানান, পদ্মা সেতু চালুর পরিপ্রেক্ষিতে পায়রা বন্দরে রয়েছে সড়কপথে দেশের সকল শহরে পরিবহন ও যাতায়াত সুবিধা। যানজটমুক্ত এই সড়কপথে কম সময়ে, সকল শহরে কার্গো পরিবহনের মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া নদীপথে পরিবহন ও ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। পায়রা বন্দর কাজলা-তেঁতুলিয়া নদীর মাধ্যমে মেঘনা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত। ফলে শিপ-টু-শিপ ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে কম খরচে ও কম সময়ে ঢাকাসহ দেশের সকল শহরে (জোয়ার ভাটার অপেক্ষা না করে) কার্গো পরিবহনের সুবিধা কাজে লাগিয়ে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়া যাবে। একই সঙ্গে এই বন্দর থেকে নৌ রুটে পার্শ্ববর্তী দেশসমূহে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধায় পণ্য পরিবহন করা যাবে।
পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল বলেন, স্বাধীন-বাংলাদেশে এই প্রথম সমুদ্র বন্দরের প্রথম টার্মিনাল উদ্বোধন করব। প্রথম টার্মিনালের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। টার্মিনালে ৪টি জাহাজ আমরা রাখতে পারব। এই টার্মিনালকে কেন্দ্র করে ইয়ার্ড তৈরি করা হয়েছে, মালামাল রাখার জন্য ওয়ার হাউস তৈরি করা হচ্ছে, টার্মিনালের অফিস, কার্যালয়, জাহাজ আসলে ক্রু ও ওয়ার্কারদের থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বন্দরটি চালু হলে চট্টগ্রামের কুতুবদিয়ার আদলে দক্ষিণাঞ্চলের সিমেন্ট, ক্লিঙ্কার, গম, সারসহ বিভিন্ন মালামাল এই বন্দরে খালাশ করা যাবে। সেই সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিকভাবে ভাগ্যোন্নয়ন ঘটবে। চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরে পণ্যজটের চাপ কমবে।