লিগ টেবিলের এক ও তিন নম্বরে থাকা অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার মধ্যকার লড়াইটা ড্র হওয়ায় লা লিগার শিরোপা ভাগ্য চলে গিয়েছিল দ্বিতীয় স্থানে থাকা রিয়াল মাদ্রিদের হাতে। তবে শীর্ষে ওঠার হাতছানিতে এদিন মাঠে নেমে উল্টো হারতে বসেছিল রিয়াল মাদ্রিদ। তবে ঘটনাবহুল ম্যাচে দুবার পিছিয়ে পড়েও দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়াল দলটি। শেষের আগের মিনিটে সৌভাগ্যও হয় সঙ্গী। তাতে জয় না মিললেও উজ্জীবিত সেভিয়ার বিপক্ষে স্বস্তির এক পয়েন্ট পেল জিনেদিন জিদানের দল।
রবিবার (০৯ মে) রাতে আলফ্রেডো ডি স্টেফানো স্টেডিয়ামে মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটি ২-২ গোলে ড্র হয়েছে। জিতলেই লা লিগার শিরোপা ভাগ্য হাতে নিতে পারত রিয়াল। উল্টো আগের মতোই নির্ভর করতে হবে আতলেতিকো মাদ্রিদের হোঁচট খাওয়ার ওপর। সঙ্গে জিততে হবে নিজেদের বাকি সব ম্যাচ।
শীর্ষস্থানে ওঠার লক্ষ্যে এদিন মাঠে শুরুতেই পিছিয়ে পড়ে রিয়াল। ফের্নান্দোর গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় সেভিয়া। মার্কো আসেনসিও বদলি নেমে সমতা টানার পর ইভান রাকিতিচের স্পট কিকে আবারও পিছিয়ে পড়ে রিয়াল। শেষ পর্যন্ত আত্মঘাতী গোলে হার এড়ায় জিদানের শির্ষ্যরা।
৩৫ রাউন্ড শেষে ৭৭ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আতলেতিকো। রিয়াল ও বার্সেলোনার পয়েন্ট সমান ৭৫। তবে মুখোমুখি লড়াইয়ে এগিয়ে দুইয়ে রিয়াল। ৭১ পয়েন্ট নিয়ে চার নম্বরে সেভিয়াও আছে শিরোপা লড়াইয়ে।
ম্যাচে প্রথম সুযোগেই জালে বল পাঠিয়েছিলেন রিয়ালের করিম বেনজেমা। তবে বেনজেমার গোলে অ্যাসিস্ট করার আগে অফসাইড পজিশনে ছিলেন আলভারো ওদ্রিওজোলা। আর তাতেই ম্যাচের শুরুতেই এগিয়ে যাওয়া হয়নি স্বাগতিকদের। গোল বাতিল হলেও বেশ গোছালো ফুটবল খেলছিল জিদানের দল। তবে প্রতি আক্রমণে রিয়ালের রক্ষণকে বেশ ভুগাচ্ছিল সেভিয়া। যার ফল মিলল হাতেনাতেই। ম্যাচের ২২তম মিনিটে ডান দিক থেকে সতীর্থের ক্রসে ইভান রাকিটিচ হেডে জটলার মধ্যে খুঁজে নেন ফার্নান্দোকে। ছয় গজ বক্সের বাইরে ঠাণ্ডা মাথায় এক ঝটকায় ক্যাসেমিরোকে ছিটকে ওদ্রিওজোলার দুই পায়ের ফাঁক দিয়ে বল জালে জড়ান ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার।
এরপর ম্যাচের প্রথমার্ধে দুই পক্ষের কেউই আর গোলের তেমন সুযোগ তৈরি করতে না পারলে সেভিয়া ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায়।
বিরতি থেকে ফিরে এ এক অন্য রিয়ালেরই যেন দেখা মিলল। দ্বিতীয়ার্ধের ষষ্ঠ মিনিটে অনেক দূর থেকে চেষ্টা করেন লুকা মদ্রিচ। সোজাসুজি থাকলেও বোনো বল হাতে জমাতে পারেননি, কর্নার পায় রিয়াল। ওই কর্নারেই ডি বক্সে সেভিয়ার একজনের হাতে বল লাগলে পেনাল্টি আবেদন জানায় স্বাগতিকরা, তবে সাড়া দেননি রেফারি। খেলার ৬৫তম মিনিটে সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেন ভিনিসিয়াস জুনিয়র। মদ্রিচের পাস ধরে টনি ক্রুস বাড়ান গোলমুখে। কিন্তু শট নিতে পারেননি ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। তার হাঁটুতে লেগে বল যায় বাইরে। তবে গোলের জন্য আর বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়নি লস ব্ল্যাঙ্কোসদের। ৬৭তম মিনিটে ক্রুসের পাস ডি বক্সে ডান দিকে পেয়ে কাছের পোস্ট দিয়ে গোলটি করেন মার্কো অ্যাসেন্সিও।
তবে নাটকের জন্ম হয় ম্যাচের ৭৫তম মিনিটে। দারুণ এক প্রতি আক্রমণে সেভিয়ার ডি বক্সে ফাউলের শিকার হন বেনজেমা। পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। তবে ভিএআরে পাল্টে যায় সিদ্ধান্ত; আক্রমণের শুরুতে রিয়ালের ডি বক্সে এডার মিলিতাওয়ের হাতে বল লেগেছিল। আর তাতেই সিদ্ধান্ত বদলে সেভিয়াকে উল্টো পেনাল্টি উপহার দেন রেফারি। স্পট কিক থেকে বল জালে জড়িয়ে দলকে দ্বিতীয়বারের মতো লিড এনে দেন সাবেক বার্সা মিডফিল্ডার ইভান রাকিটিচ।
এরপর মরিয়া হয়ে গোলের পেছনে ছুটতে থাকে রিয়াল। গোল হজম করার পরেই ভিনিসিয়াসকে তুলে এডেন হ্যাজার্ডকে মাঠে নামার জিদান। তবে কোনোভাবেই গোলের দেখা মিলছিল না রিয়ালের। খেলার নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষ যোগ করা অতিরিক্ত সময়ের ৪র্থ মিনিটে এডেন হ্যাজার্ড দুর্দান্ত শট নেন আর তাতেই বল জড়ায় জালে। তবে জালে জড়ানোর আগে সেভিয়ার এক খেলোয়াড়ের গায়ে লেগে দিক পাল্টে যায়। এতেই শেষ পর্যন্ত ২-২ গোলে ড্র’তে এক পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ে রিয়াল মাদ্রিদ।