রেদোয়ান হাসান সাভার সাভার প্রতিনিধি দৈনিক শিরোমণিঃ ভোরের আলো ফুটতেই যে ভবনে বাড়তো মানুষের কোলাহল। ফ্লোরে ফ্লোরে ছড়িয়ে পড়তো কর্মব্যস্ততা। ভয়াবহ এক অগ্নিকাণ্ডে সেই ভবন এখন জনমানবশূন্য, ভূতুড়ে। মানুষ পোড়ার বিভৎস স্মৃতি বয়ে ৮ বছর ধরেই ভবনটি পড়ে আছে পরিত্যক্ত অবস্থায়। ২০১২ সালের ২৪ নভেম্বরে আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরের তাজরীন ফ্যাশনের ভবনে অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন ১১৪ জন শ্রমিক। সেই থেকে পুড়ে যাওয়া হতদরিদ্র শ্রমিকদের স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছে ৮ তলা ভবনটি। সেদিন ভবনে আটকে থাকা মানুষের আর্তচিৎকার, আগুনের লেলিহান শিখার রাক্ষুসে চেহারা চোখে ভাসে বলে জানালেন স্থানীয়রা। ভবনটিতে গিয়ে দেখা গেল আজও সেদিনের স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছে। প্রচণ্ড তাপে বেঁকে যাওয়া জানালার গ্রিল ও এডজাস্ট ফ্যানের পাখা, সাথে পুড়ে যাওয়া দেওয়ালের সূক্ষ্ম চিহ্নে শরীর শিউরে উঠাবে নতুন আগতদের। পরিপাটি বিল্ডিংয়ের চারপাশে বিরাজ করছে ভূতুড়ে অবস্থা। ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকা ভবনটি জানান দিচ্ছে এক নির্মম ইতিহাসের। এলাকাবাসী জানান, ভবনটির কিছু অংশ ঠিক করা হয়েছে। ভেতরে মালিকের লোকজন আসে। মাঝে মাঝে দেখা যায় একটি দুইটি বড় কাভার্ড ভ্যানও। বর্তমানে ভবনের দেখভালের দায়িত্বে আছেন বয়স্ক এক ব্যক্তি। তবে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে বেশ নারাজ তিনি। তাজরীনের সেই ভবনের পাশের বাসিন্দারা ৮ বছর আগের স্মৃতিচারণ করে জানান, সন্ধ্যার দিকে পোশাক কারখানাটির নিচ তলার তুলার গুদাম থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল। মুহূর্তের মধ্যে আগুনের লেলিহান শিখা পুরো ৮ তলা কারখানায় ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় কারখানাটির সহস্রাধিক শ্রমিক জীবন বাঁচাতে ভবন থেকে নামার চেষ্টা করেন। সেদিন জীবন বাঁচাতে শ্রমিকরা চিৎকার করছিলেন। আজও কানে বাজে শ্রমিকদের ‘বাঁচাও বাঁচাও’ আর্তনাদ। তারা জানান, একসময় সকাল হলেই যে কারখানাটি কর্মব্যস্ততায় মুখরিত থাকতো। অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে এখন অব্দি এটি বন্ধ রয়েছে। তেমন কেউ না আসায় সব সময় এখানে সুনশান নীরবতা বিরাজ করে। এতো বড় ভবনটি এখন ভূতের বাড়ির মতো হয়ে গেছে। এদিকে তাজরীন ফ্যাশন কারখানার স্থানে সরকারিভাবে শ্রমিকদের চিকিৎসার জন্য একটি হাসপাতাল ও ডরমিটরি নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা। বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র সাভার-আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক খাইরুল মামুন মিন্টু দাবি জানিয়ে বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যখন জীবন বাঁচাতে শ্রমিকরা চিৎকার করছিলেন। তখনও খুনি মালিক দেলোয়ার হোসেন কারখানা থেকে বের হওয়ার সব গেটে তালা লাগিয়ে রাখেন। প্রাণে বাঁচতে অনেক শ্রমিক ভবনটির বিভিন্ন তলা থেকে লাফিয়ে পড়েন। তাই এই ঘটনাকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বর্ণনা করে আইএলও কনভেনশন-১২১ অনুসারে শ্রমিকদের সারাজীবনের আয়ের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ প্রদান, পুনর্বাসনসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা ও সন্তানদের লেখাপড়া নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি। এছাড়া তাজরীন ফ্যাশন কারখানার স্থানে সরকারিভাবে শ্রমিকদের চিকিৎসার জন্য একটি হাসপাতাল ও ডরমিটরি নির্মাণ করার দাবি জানান এই শ্রমিক নেতা।