মোঃ ইনছান আলী জেলা প্রতিনিধি ঝিনাইদহ দৈনিক শিরোমনিঃ
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কুমড়াবাড়ীয়া ইউনিয়নে হাজী আমজাদ হোসেন মোড়ল অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ে শিক্ষক/কর্মচারি নিয়োগের নামে ৬৮ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ঐ স্কূলের প্রতিষ্ঠাতা মোঃ রেজাউল করিমের নামে। রেজাউল করিম ঐ ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলামের আপন ভাই এবং আমজাদ হোসেনের ছেলে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঐ অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষিক/কর্মচারী জানান, প্রতিবন্ধী শিশুর বিশেষ শিক্ষা নীতিমালা ২০১৮ অনুযায়ী ৮ জন শিক্ষক কর্মচারী নেওয়ার নিয়ম থাকলেও স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা রেজাউল করিম ২১/২২ জনের কাছ থেকে শিক্ষক/ কর্মচারীর পদে চাকরি দেওয়ার নামে তাদের কাছ থেকে ৬৮ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে । এছাড়াও অনেকের দাবি এই যে, বিধি অনুযায়ী অনেকেরই শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলেও প্রতিজনকে নিয়োগ দেওয়ার নামে ২ লক্ষ থেকে শুরু করে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছে রেজাউল করিম।এই প্রতিষ্ঠানে চাকরীর সুযোগ নিয়ে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষায় থেকে বর্তমানে দেশে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের সার্বিক বিষয়ে খোঁজ নিয়ে চাকরিতে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন তারা। শিক্ষকরা আরও জানান, এই প্রতিবন্ধী স্কুল গুলো আদৌও উপজেলা বা ইউনিয়ন ভিত্তিক হবে কিনা বা তাদের জীবনে দেখে যেতে পারবেন কি না তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। একজন শিক্ষক বলেন, তাকে নিয়োগের নামে ৩ লক্ষ টাকা নেওয়া সহ জানা অজানা অন্তত ২১ থেকে ২২ জন শিক্ষক ও কর্মচারি নিয়োগ দেওয়ার নামে ৬৮ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এই টাকা ফিরিয়ে পাওয়ার বিষয়টি নিয়েও তারা ভীতি সন্ত্রস্ত ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। অন্য শিক্ষক কর্মচারীদের কাছে সংবাদ কর্মিরা খোঁজ নিয়ে দেখেন, কাউকেই এখন পর্যন্ত বিধি মোতাবেক নিয়োগ দেয়া হয়নি। নিয়োগ পত্রের দাবি করলে নানা ভাবে তাদেরকে ভুল বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। একবার শিক্ষক/কর্মচারীদের হাতে নিয়োগ পত্র দিলেও পরবর্তীতে বিপদে পড়ার থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পুনরায় তা ফেরত নিয়েছেন রেজাউল করিম। কয়েকজন শিক্ষকের টাকা জমা দেওয়ার রশিদ যাচাই করতে গেলে তারা বলেন, নিয়োগ পত্র তাদের হাতে দেওয়া হয়নি এবং টাকার রশিদও তাদেরকে দেওয়া হয়নি। কেউ কেউ টাকা দেওয়ার সময় স্থানীয় প্রতিনিধিদের সামনে রেখে টাকা দিয়েছেন, আবার কারো কারো টাকা অভিভাবকরা সাথে থেকে দিয়েছেন। এছাড়া তাদের কাছে এই টাকা লেন দেনের কোন আইনি প্রমান নেই। কয়েকজন শিক্ষকের কাছে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ঐ প্রতিবন্ধী স্কুলে চাকরী দেওয়ার নামে বিভিন্ন পদে যাদের কাছ থেকে নিয়োগ বাণিজ্য করা হয়েছে, তাদের মধ্যে জেলার সদর উপজেলার ধোপাবিলা (আব্দালপুর) গ্রামের মতিয়ার রহমানের ছেলে জামালের কাছ থেকে ৩ লক্ষ ৫০ হাজার, ধোপাবিলা গ্রামের মৃত রাজ্জাকের স্ত্রীর (মালার মা) কাছ থেকে ৫০/৬০ হাজার, আমিরুল ইসলামের ছেলে রফিকুল ইসলাম ওরফে দানেসের কাছ থেকে ৭৫ হাজার, মৃত সামাদ ডাক্তারের মেয়ে ইমা’র কাছ থেকে ৩ লক্ষ, আলাউদ্দিনের ছেলে মাইসুরের কাছ থেকে ৩ লক্ষ এবং জালাল মোল্লার নাতনী’র (সাহিন ডাক্তারের স্ত্রী) কাছ থেকে ২ লক্ষ টাকা সহ নাম না জানা আরও মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে স্কুল শুরু থেকে এ নিয়োগ বানিজ্য করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে রেজাউল করিম।এবিষয়ে আমজাদ হোসেন মোড়ল অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মোঃ রেজাউল করিমের মুঠো ফোনে একাধিক বার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি। তবে এ সমস্ত স্কুলের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানতে জেলা সমাজ সেবা অফিসার (ডিডি) আব্দুল লতিফের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী স্কুল সমাজ কল্যান মন্ত্রণালয়ের অধীনে, মন্ত্রনালয় থেকে উপজেলা বা ইউনিয়ন পর্যায়ে কোন অনুমোদন দিয়েছে বা অনুমোদন দিবে কিনা এ বিষয়ে অফিসিয়াল ভাবে আমাদের কাছে কোন চিঠি আসেনি। তাছাড়া এ বিষয়ে আমাদের কাছে কেউ কোন অভিযোগও জানাতে আসেনি। তিনি বলেন, নিয়মের বাইরে কেউ কিছু করলে তার দায়ভার তাকেই বহন করতে হবে।