রেজিঃ নং ডিএ ৬০০৯ | বর্ষ ১৪ | ৪ পৃষ্ঠা ৩ টাকা || সোমবার | ২৫ নভেম্বর ২০২৪ | ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
ফরিদগঞ্জে আইন লঙ্ঘন করে জলমহাল ইজারার অভিযোগ
সোহাঈদ খান জিয়া, চাঁদপুর জেলা প্রতিনিধি,দৈনিক শিরোমণিঃ
চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১৪নং ফরিদগঞ্জ দক্ষিণ ইউনিয়নের পোয়া রনাতলী মৌজার ৯৩.৪০ একর বদ্ধ জলমহাল ইজারা দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে স্থানীয় পোয়া রনাতলী চররামপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিঃ গত ২২ এপ্রিল চাঁদপুর জেলা প্রশাসককে লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনো কাজ হচ্ছে না। পরে আবার গত ১১ মে পুনরায় অভিযোগ করা হয়। তারপরও কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় প্রতিপক্ষের সাথে জলমহালটির নিকটবর্তী স্থানীয় মৎস্যজীবী সমিতির সদস্যদের সাথে যে কোনো সময় বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা করা হচ্ছে।অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ফরিদগঞ্জ উপজেলার তফসিলে বর্ণিত পোয়া রনাতলী মৌজার বিএস ১/১ খতিয়ানে মোট ৯৩.৪০ একর জলমহাল। দীর্ঘদিন ধরে জলমহালটি অবৈধভাবে অন্য এলাকার সাইফুল ইসলাম নামের একজন হর্নি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিঃ-এর পক্ষে ভুয়া তথ্য প্রদানের মাধ্যমে অফিস কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে ইজারা হাসিল করে আসছে। এ বছর আবার পুনরায় স্থানীয় পোয়া রনাতলী চররামপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিঃ-কে জলমহাল ইজারা না দিয়ে জলমহালের দূরবর্তী হর্নি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিঃ-কে মাছ চাষ করতে দেয়। অথচ ২০০৯ সালের জলমহাল নীতিমালা অনুযায়ী ইজারা দেয়ার ক্ষেত্রে জলমহালের নিকটবর্তী মৎস্যজীবী সমবায় সমিতিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।এদিকে ইজারা বাতিলের জন্য গত ২২ এপ্রিল পোয়া রনাতলী চররামপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিঃ-এর পক্ষে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করা হয়। আবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত ৮ মে পোয়া রনাতলী মৌজার বদ্ধ জলাশয়টি ইজারা দেয়ার উদ্দেশ্যে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা বদ্ধ জলাশয় স্থানটি পরিদর্শন করেন এবং ইজারায় আবেদনকৃত দুটি সমিতির কাগজপত্র দেখেন। সেখানে হর্নি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির পক্ষে সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক একটি ভুয়া সদস্য তালিকা উপস্থাপন করেন। সেখানে দেখা যায় ঐ সদস্যদের নামে সমিতির মধ্যে কোনোরকম শেয়ার বই, সঞ্চয় বই ও জমা খরচের ভাউচার ইত্যাদি পরিপূর্ণ নয়। এমনকি ইজারায় অংশগ্রহণ করতে হলে মৎস্য কর্মকর্তার প্রত্যয়নপত্র দাখিল করতে হয়, যা ইজারার নথিতে দাখিল করা হয়নি। অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য যারা, এদের কারো জেলে কার্ড এবং মৎস্য কর্মকর্তার প্রত্যয়নপত্র নেই। ইজারাদার সাইফুল ইসলাম তার নিজের স্বার্থের দিক ও রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে জলমহালটি ইজারা নেয়। এছাড়া সরকারি নিয়ম মোতাবেক জলমহাল ইজারা নিয়ে অন্য কারো কাছে সাব লিজ দিতে পারবে না। কিন্তু সরকারি আইনকে তোয়াক্কা না করে সাইফুল ইসলাম টাকার বিনিময়ে ভাগ ভাগ করে এলাকার বিভিন্ন লোকের কাছে সাব লিজ দিয়ে বিপুল অঙ্কের টাকা কামিয়ে নিচ্ছেন। তাই পরে আবার ১১মে জেলা প্রশাসক বরাবর সুষ্ঠু তদন্তের জন্য অভিযোগ করা হয়। কিন্তু এখনো পর্যন্ত অজ্ঞাত কারণে পুনরায় কোনো তদন্ত করা হয় নি।সরজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল এই জলমহালের এক একরের মতো অংশ আবুল হাজী নামের একজনকে ৭০ হাজার টাকার বিনিময়ে দেয়া হয়। সাইফুল ইসলাম ও মোস্তফা গং ৩ একরের মতো নিয়েছেন ১ লাখ ৫০ হাজার টাকায়, শাহাদাত হোসেন টেলু নামের একজন এক একর নিয়েছেন ৭০ হাজার টাকায়, ফারুক হোসেন ভূঁইয়া নামের একজন তিন একরের মতো নিয়েছেন ১ লাখ ৫০ হাজার টাকায়, জয়নাল চৌকিদার নিয়েছেন এক একর ৭০ হাজার টাকায়, দেলোয়ার হোসেন বাতেন দুই একর নিয়েছেন ১ লাখ ২০ হাজার টাকায়, ফারুক হোসেন নামের একজন দেড় একর নিয়েছেন ৮০ হাজার টাকায়। জলমহালটির বাকি বৃহৎ অংশ এমনিতেই পড়ে আছে। এ সময় স্থানীয় অনেকে অভিযোগ করে বলেন, জলমহালটির অধিকাংশ জায়গায় বাঁধ সৃষ্টি হওয়ার ফলে অতিবৃষ্টি এবং বন্যার সময় পানির প্রবাহ চলমান না থাকার কারণে এ এলাকায় ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়।এ সময় পোয়া রনাতলী চররামপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিঃ-এর সদস্য এবং এলাকাবাসীর পক্ষে শফিকুর রহমান, মোঃ দুলাল, কালু সরদার, মশিউর রহমান, সাইফুল ইসলাম, ফারুক হোসেন, হাবিবুর রহমান, হোসেন জমাদার, আবদুল মান্নানসহ আরো অনেকে এই প্রতিনিধিকে জানান, পোয়া রনাতলী মৌজার এই জলাশয়টি আমাদের মৌজার। সে হিসেবে আমাদের পোয়া রনাতলী চররামপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিঃ ইজারা পাওয়ার কথা। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কোন্ যুক্তিতে দূরের অন্য সমিতিকে (যার কোনো পরিপূর্ণ কাগজপত্র নেই) সেই সমিতিকে ইজারা প্রদান করেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। এছাড়া তারা বলেন, এই জলমহালটি যে সমিতিকে দেয়া হয়েছে সেটি দূরের একটি সমিতি। সেখানে যাদেরকে জেলে হিসেবে দেখানো হয়েছে তারা এই এলাকার নয় এবং আমরা তাদের চিনিও না। আমরা পুনরায় মাননীয় জেলা প্রশাসক কর্তৃক এই জলমহালের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ইজারার দাবি করছি।অভিযোগকারীদের পক্ষে পোয়া রনাতলী চররামপুর মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি মোঃ রফিক সর্দার বলেন, হর্নি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি এই জলমহাল হতে অনেক দূরে। অবৈধ এবং পরিপূর্ণ কাগজপত্র না থাকা সত্ত্বেও আমাদের এই জলমহালটি বারবার তারা কীভাবে লিজ নেয় তা আমাদের বোধগম্য নয়। কীভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, মৎস্য অধিদপ্তর এবং সমবায় অধিদপ্তর নীতিমালা লঙ্ঘন করে আমাদের ইজারা না দিয়ে দূরের সমিতিকে ইজারা দেন? এতে আমাদের এলাকার মৎস্যজীবীরা বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তিনি মাননীয় জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করে বলেন, তিনি যেনো সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে নীতিমালা অনুযায়ী জলমহালটি ইজারা দেয়ার ব্যবস্থা করেন।সদস্য সাইফুল ইসলাম মেম্বার জানান, ওই সমিতির কাগজপত্র দেখার জন্যে যখন উপজেলা থেকে তদন্ত কমিটি আসে আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। তখন আমি দেখেছি হর্নি মৎস্যজীবী সমিতির কর্মকর্তা উপযুক্ত কোনো কাগজপত্র এবং মৎস্যজীবী ও জেলেদের উপযুক্ত কার্ড দেখাতে পারেননি। তারপরেও তারা কীভাবে ইজারা পায় জানি না। আমরা জেলা প্রশাসক থেকে সঠিক তদন্ত চাই।বিষয়টি নিয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা নাজমুন্নাহারের সাথে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তাকে ইজারাপ্রাপ্ত সমিতি হর্নি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির উপরে উল্লেখিত দোষ-ত্রুটিগুলোর বিষয়েy প্রশ্ন করা হলে তিনি সঠিক জবাব দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং বিব্রতবোধ করেন।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা মৎস্য অফিসের ক্ষেত্র সহকারী মোঃ নজরুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনিও ঐ জলমহালটি ইজারার বিষয়ে বিব্রতবোধ করেন। তিনি বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে আমরা যা পেয়েছি আমরা সেই রকমভাবে রিপোর্ট দিয়েছি। যেহেতু ইজারা দেয়ার মালিক জেলা প্রশাসক, সেখানে আর আমাদের কথা থাকে না।উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা আক্তার রুমার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, জেলা প্রশাসক থেকে তদন্তের জন্য আমাকে সময় দিয়েছে একদিন। সেই আলোকে যতটুকু সম্ভব সঠি তদন্তের রিপোর্ট দেয়ার চেষ্টা করেছি।কিন্তু ইজারা কে পান,সেগুলো আমাদের দেখার বিষয় নয়।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]
Copyright © 2024 দৈনিক শিরোমনি | shiromoni.com. All rights reserved.