রেজিঃ নং ডিএ ৬০০৯ | বর্ষ ১৪ | ৪ পৃষ্ঠা ৩ টাকা || সোমবার | ২৫ নভেম্বর ২০২৪ | ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
মো. সাখাওয়াত হোসেন,ফরিদপুর জেলা প্রতিনিধি :
ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান এমন এক গৃহহীন, নিঃসন্তান, বিধবা এক অসহায় বৃদ্ধা মহিলার দায়িত্ব নিলেন যার সহায় সম্বল কিছুই নেই। এমনকি তার স্বামীর যে ভিটা ছিলো তাও অন্যেরা দখল করে নিয়েছে।
অসহায় বৃদ্ধা গোলাপজান বেগম (৭৫) ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার কালামৃধা ইউনিয়নের ভরিলহাট গ্রামের মৃত্যু মুনসুর বেপারী ওরফে গেদার স্ত্রী। স্বামী অনেক আগেই মৃত্যুবরণ করায় তার উপর নেমে আসে ঘোর অন্ধকার সন্তান- সন্ততি বলতে কিছুই নাই তার। এক টুকরা (১.৭৫ শতাংশ) জমি থাকলেও চুন্নু খলিফা দখল করে রাখেন বলে গোলাপজান জানান।
মাটির সঙ্গে নুয়ে পড়া একটি ছাপড়ায় মানবেতর ভাবে জীবন যাপন করেন। সেটিও অন্যের সিমানায় পড়ে থাকায় তার ছাপড়াটি দাঁড় করাতে দিচ্ছে না প্রতিবেশী আক্তার খলিফা। গোলাপজান মানবেতর জীবন যাপন করছেন একটি ভেঙ্গে পড়া ছাপড়ার নিচে।
বৃহস্পতিবার (১০ আগষ্ট) বিকেলে ওই এলাকায় খাস জমি পরিদর্শনে গিয়ে চোখে পড়ে ভাঙ্গা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তা মাসুদুর রহমানের চোখে।
তিনি ওই অসহায় বৃদ্ধা মহিলাকে দেখে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। তাকে জড়িয়ে ধরেন, সান্তনা দেন। দ্বায়িত্ব নেন তার।
তিনি গোলাপজান বেগমের মানবেতর জীবনযাপনের লোমহর্ষ বর্ণনা প্রত্যক্ষভাবে শুনে তিনি (এসিল্যান্ড মাসুদুর রহমান) দায়িত্ব নেন তার পোনে দুই শতাংশ জমি দখল মুক্ত করে একটু মাথা গোজার ঠাই নির্মাণ করে দেওয়ার। গোলাপজানের ভরণ পোষণের জন্য দায়িত্ব দেন স্থানীয় চেয়ারম্যান মো. রেজাউল মাতুব্বরের ওপর।
গোলাপজান বলেন, আপনারা একটু আওগিয়া দেখেন পায়খানা প্রসাব-খানা নাই কি অবস্থা? কেদায় পানিতে ওইভাবেই রাতভর বসে থাহি। মশারি- কয়েল কিছুই নাই জানান তিনি।
গোলাপজান আরো বলেন, আমারে ওই ঘরের চুন্নু বলেছিল তোমার ভিটা আমাকে দলিল করে দাও আমি তোমাকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত খাওয়াবো পরাবো। আমি দেখলাম আমার কেউ নাই আমি যেন স্বামীর ভিটায় থাইহা মরতে পারি তাই আমি রাজি হইলাম। তারা ঢাহা থাহে আমারে ৪ মাস পর্যন্ত তিন আজার করে টাহা দেছে আমি পাক সাক করে খাইছি। গেছে বছর আমার ভিটায় ওরা ঘর উডাইল। ভিডাও দখল হয়ে গেল এরপর আমারে আর খাবার দেলো না, আমি ৮ দিন পর্যন্ত কান্দাকাটি কইরা না খাইয়া না নাইয়া মাইনষের দুয়ারে দুয়ারে গেলে কেউ একমুঠ খাবার দেলো না, তারা কয়, কেন তোমারে খাবার দেবো? তোমার জায়গা দিয়া দিছো খলিফার ছাওয়াল গো তারাই তোমারে খাবার দেবে। এভাবেই আমি খাইয়া না খাইয়া দিন কাটাইতেছি। পরে কান্দাকাটি কইরা বেড়াইলে গ্রামের লোকজন টাকা পয়সা ও খাবার দিয়া বহু দেখছে। আমার শরীর ব্যথা, পা ব্যথা নড়াচড়া করা পারিনা, হাতে পায়ে ঘা হয়ে গেছে, বহু ওষুধ খেতে হয়।
পরিদর্শন কালে সে সময় অন্যান্য দের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন, কালমৃধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রেজাউল ইসলাম, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের সদস্য, ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা দেবাংশু সহ এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
সংশ্লিষ্ট (কালামৃধা) ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. রেজাউল মাতুব্বর বলেন, অসহায় বৃদ্ধা মহিলার জন্য আমি সকল সুযোগ-সুবিধা করে দিব।
এবিষয়ে ভাঙ্গা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাসুদুর রহমান বলেন, হটাৎ আমি জানতে পারি গোলাপজান বেগম নামে নিঃসন্তান, বিধবা, ও এক অসহায় বৃদ্ধা নারী, তিনি এক মানবেতর জীবনযাপন করছেন। জানতে পেরে আমি
ছুটে যাই তার বাড়িতে। তার সাথে কথা বললে বিপন্ন মানবতার ভয়ানক দূর্দশা দৃষ্টিগোচর হয়। শক্তিশালী বিত্তবান প্রতিবেশী বিধবার স্বামীর ভিটায় তাকেই স্থান দিচ্ছেন না। বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে, রাতের কুয়াশা ও দিনের তাপদাহ কোনকিছুই আটকাতে পারে না তার এই জীর্ণ ঘরখানা। তার ঘরের মেরামত পর্যন্ত করতে দিচ্ছে না।
তিনি আরো বলেন, আমি খুবই মর্মাহত হয়েছি। বৃদ্ধা মহিলার জমি বের করে বুঝিয়ে দেওয়া হবে এবং তার সুন্দর করে বাঁচার জন্য ডিসি স্যারের সঙ্গে আলাপ করে একখানা ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে। তার তদারকির জন্য সরকারি সকল সুবিধা তাকে দেয়া হবেও বলে জানান তিনি।