জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান সমবায়। এই সমবায় কিছু অসাধু, দুর্নীতিবাজ ও অর্থলোভী কর্মকর্তাদের কারণে আজ হুমকির মুখে। তেমনি ফরিদপুর সমবায় ব্যাংক যার বর্তমান নাম ফরিদপুর সেন্ট্রাল কো অপারেটিড ব্যাংক লিমিটেড। এই ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ ফয়েজ আহমেদের বিরুদ্ধে এফডিআর, ডিপিএসসহ অন্যান্য আমানতের লাভের টাকা ও মুল টাকা ফেরত না দিয়ে গড়িমসি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগকারী জেলা সমবায় অফিসার বরাবর এ অভিযোগ করেন এবং এর অনুলিপি যুগ্ম নিবন্ধক, ঢাকা সমবায় বিভাগ অফিস, জেলা প্রশাসক, ফরিদপুর, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ফরিদপুর, সভাপতি ফরিদপুর প্রেসক্লাব, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ফরিদপুর, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান, ফরিদপুর, পুলিশ সুপার, ফরিদপুর ও ওসি, কোতোয়ালি থানা, ফরিদপুর বরাবরও দিয়েছে বলে জানা গেছে।
অভিযোগকারী তার লিখিত অভিযোগ পত্রে জানান, আমি একজন ব্যবসায়ী। সমবায় ব্যাংকের ম্যানেজার শেখ ফয়েজ আহমেদের অনুরোধে ফরিদপুর সেন্ট্রাল কো অপারেটিভ ব্যাংকে ২০১৮ সালে মাসিক দুই হাজার টাকা করে তিন বছর মেয়াদী একটি ডিপিএস যার হিসাব নম্বর ২/৩৭৮ ও তিন বছর মেয়াদী ১,০০,০০০ (এক লক্ষ) টাকার একটি এক কালীন এফডিআর যার হিসাব নম্বর ১১০, রশিদ বই নং ৯ শুরু করি। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে আরও একটি ডিপিএস মাসিক এক হাজার টাকা হারে তিন বছর মেয়াদী যার হিসাব নং ২/৩২০ শুরু করি। বর্তমানে করোনায় ব্যবসা বানিজ্য মন্দা হওয়ায় আমার টাকার প্রয়োজন হয়। ব্যাংকে গিয়ে শেখ ফয়েজ আহমেদের কাছে টাকা চাইলে তিনি টাকা ফেরত না দিয়ে বিভিন্ন টাল বাহানা শুরু করেন। ব্যাংকের কর্মচারীরা ইতোমধ্যে আমার বই যাচাই করেছে।
অভিযোগকারী আরও জানান, রানা আহাম্মেদ নামের একজনকে এক লক্ষ টাকা লোন দেওয়ার বিপরীতে আমার নিকট থেকে এক লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকার একটি চেক জামানত হিসেবে আমি দিই। সেই লোন পরিশোধ হয়ে গেলেও জামানত হিসেবে দেওয়া আমার চেকটি তিনি ফেরত দেননি বরং আমাকে না জানিয়ে ঐ লোককে আবারও দুই লক্ষ টাকা লোন দেন। রানা আহাম্মেদ পরবর্তী দুই লক্ষ টাকা লোন পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে আমাকে নোটিশ করা হয়। এই নোটিশ পেয়ে আমি অবাক হই এবং তার প্রতারণা বুঝতে পারি। তখন ব্যাংকে এসে চেক চাইলে তিনি তা দিতে অস্বীকার করেন।
এ বিষয় নিয়ে টেপাখোলা জেলা সমবায় অফিসে এসে জানতে পারি এই ব্যাংকটি সাধারণ তফসিলি ব্যাংকের মত ব্যাক্তির নিকট থেকে কোন টাকা জমা রাখতে পারে না। এই ব্যাংকের সদস্য একেক টি প্রাথমিক সমিতি। এটা জানার পর আমার মাথায় বাজ পরে। আমি বুঝতে পারি যে, শেখ ফয়েজ আহমেদের দ্বারা কত বড় প্রতারণার শিকার হয়েছি। ব্যাংকে আসা যাওয়ার সুবাদে আমি অনেককেই দেখেছি এমন হয়রানি হতে। কাজী ওমর আলী নামের একজনের ৮৬ লক্ষ টাকা এখানে রয়েছে। মিজানুর রহমান নামের একজনের ৬/৭ লক্ষ টাকা রয়েছে। এরকম আরও লোক নিয়মিত টাকার জন্য আসা যাওয়া করছেন। তাদের সাথে কথা বলে জেনেছি দীর্ঘদিন যাবৎ তারা তাদের টাকার জন্য ঘুরছেন কিন্তু টাকা পাচ্ছেন না। তারা তাদের টাকার জন্য আইনের আশ্রয় না নিয়ে কোন ভাবে বুঝিয়ে সুজিয়ে যদি টাকাগুলো তুলতে পারেন সে আশায় আছেন। কিন্তু আমি নিরুপায় হয়ে শেখ ফয়েজ আহমেদের খারাপ আচরণ ও প্রতারণার বিষয়ে আইনের আশ্রয় নিতে এই আবেদনের মাধ্যমে অনুরোধ করছি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সমবায় আইন অনুযায়ী এই ব্যাংকে একটি পরিচালনা কমিটি থাকে। যে কমিটির সভাপতি ব্যাংকের চেয়ারম্যান বা ম্যানেজার হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। এবং পর পর তিন টার্ম বা ৯ বছর একই ব্যাক্তি এই কমিটিতে থাকতে পারবেন। ৪র্থ টার্ম তাকে কমিটি থেকে অবসরে থাকতে হবে। সে নিয়ম অনুযায়ী বর্তমান কমিটিতে শেখ ফয়েজ আহমেদের নাম না থাকলেও তিনি নতুন এই কমিটিকে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দিয়ে অবৈধভাবে এই ব্যাংকের চেয়ারম্যান/ম্যানেজারের পদ দখল করে বসে আছেন। কোথায় পাচ্ছেন তিনি এই ক্ষমতা? আবার মাঝে মাঝে তিনি এই ব্যাংকের নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবেও দাবী করেন অথচ ঢাকার কেন্দ্রীয় সমবায় ব্যাংক থেকে সাইফুল ইসলাম নামে একজনকে নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া আছে, যিনি ফয়েজের হুমকি ধামকির কারণে ব্যাংকে আসেন না।
এ বিষয়ে সাইফুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ফরিদপুর সেন্ট্রাল কো অপারেটিভ ব্যাংকের নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আগে অফিস করতাম কিন্তু শেখ ফয়েজের হুমকি ধমকিতে এখন আর ওখানে যাই না। আমার মুল যে অফিসের দায়িত্ব সেখানেই কাজ করি। এ বিষয়ে তিনি তার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, চিঠির মাধ্যমে আমি আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি।
জেলা সমবায় কর্মকর্তা আঃ রাজ্জাক এর সাথে মুঠো ফোনে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযোগ সম্পর্কে জানতে পেরেছি। লকডাউনের কারণে অফিস বন্ধ থাকায় বিষয়টি নিয়ে কাজ করতে পারিনি। যে অভিযোগ হয়েছে অফিস শুরু হলে তার ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি করা হবে। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মিললে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এই প্রতিবেদক ব্যাংকের সাবেক এই চেয়ারম্যান শেখ ফয়েজ আহমেদের কাছে মুঠোফোনে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথমত আমি ব্যাংকের ম্যানেজার নই, সে আমার সাথে কোন দিন কোন লেন দেন করে নাই, সে যে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে, সে সেই প্রতিষ্ঠানের পলাতক লোনের জামিনদার, উনার যাবতীয় লেনদেন ব্যাংক স্থগিত করছে। এটা আইনগত বিষয়ে, উনি হুমকি ধমকি দিয়ে টাকা নিতে পারবে না।