ফেনী প্রতিনিধিঃ- পূর্বের সেই ভয়ানক রুপ নিচ্ছে আবারও ফেনীর রাজনীতি। 'সন্ত্রাসের জনপদ' হিসেবে পরিচিত ছিল ফেনী। কিন্তু বেশ করে দিন এটার কলংক থেকে রেহাই পেয়েছিল ফেনীবাসি। স্বস্তিও ফিরে এসেছিল জনমনে।
ফের আবার উত্তপ্ত হয়ে পড়েছে ফেনীর রাজনীতি। বন্যার্তদের মধ্যে বিএনপির ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচি ঘিরে আবার পুরোনো চেহারায় ফিরছে জেলাটি। দুস্থদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণে হামলা, বাধা, ঘরে ঘরে তল্লাশি ও পথে পথে ব্যারিকেড বসানোকে ভালো চোখে দেখছেন না ফেনীর সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক বিশ্নেষকরা।
বিশ্লেষকদের মতে, যেখানে জাতীয় দুর্যোগে অসহায় মানুষের পাশে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সবার দাঁড়ানোর কথা; সেখানে অসহায় মানুষকে সামান্য সহায়তা দেওয়ার কর্মসূচিকে রাজনীতির মারপ্যাঁচে স্তব্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত অনেক সজ্জন নেতাকর্মীও বাঁকা চোখে দেখছেন এই তৎপরতাকে। অবশ্য আওয়ামী লীগের জেলার শীর্ষ নেতাদের দাবি- এ ঘটনার জন্য বিএনপিই দায়ী।
স্থানীয় কয়েকজন রাজনৈতিক বিশ্নেষক নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, ফেনীর রাজনৈতিক পরিস্থিতি মতপ্রকাশের অনুকূলে নয়। জেলার বর্তমান রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে হতাশা ব্যক্ত করে তাঁরা বলেন, এখানে রাজনৈতিক সহনশীলতার বড় অভাব। সুস্থ ও স্বাভাবিক রাজনীতি বন্ধ। ছোট ছোট কর্মসূচি পালন করাও অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ফেনীর রাজনীতি পুনরায় অন্ধগলিতে নিমজ্জিত হচ্ছে বলেও মন্তব্য এই বিশ্নেষকদের।
ফেনীর কয়েকজন রাজনীতিবীদের সাথে কথা হলে জানা যায়, জেলা আওয়ামী লীগ নেতারা হরহামেশা বলে থাকেন- ফেনীকে 'শান্তির নগরী'তে রূপ দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য নিজামউদ্দিন হাজারী। এক সময় ফেনী ছিল 'লেবানন কিংবা 'মৃত্যুপুরী' হিসেবে খ্যাত। এখন সে অপবাদ শোনা যায় না। এই বদনাম আওয়ামী রাজনীতির সুবাদে বন্ধ হয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতারা ফেনীকে এখন 'শান্তির জনপদ' হিসেবে দাবি করে আসছেন। অথচ দলটির নেতাদের এই আত্মবিশ্নেষণ ত্রাণের মতো একটি অরাজনৈতিক কার্যক্রমে বিঘ্ন সৃষ্টি করে ম্লান করে দেওয়া হয়েছে। এতে একদিকে বানভাসি, দুস্থ মানুষ সাহায্য থেকে বঞ্চিত হয়েছে; অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ফেনী কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি বিমল শীল বলেন, দূর্যোগে যে কোনো তরফ থেকে মানবিক সাহায্য যথার্থ। এতে বাধা সৃষ্টি করা সমীচীন নয়। ফেনীর সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে আর বেশি মন্তব্য করতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। একই বক্তব্য দিয়েছেন ফেনী কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মিলকী।
ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর আসনের এমপি নিজাম উদ্দিন হাজারী বলেন, যে কোনো দল ফুলগাজীর দৌলতপুরে বানভাসি মানুষকে ত্রাণ দিতে চাইলে তিনি প্রয়োজনে সাহায্য করবেন। এখনও দিতে পারবে; কেউ কিছু বলবে না। তিনি দাবি করেন, শুক্রবারের হামলা ঘটনার প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন। ফুলগাজী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদককে মারধর করার ঘটনা নিয়ে বিএনপির সঙ্গে স্থানীয় যুবলীগের সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে। এ কারণে বিএনপি ত্রাণ দিতে পারেনি।
জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাফেজ আহাম্মদ বলেন, ত্রাণ দেওয়া বন্ধ করার জন্য যুবলীগ-ছাত্রলীগ হামলা করেছে- এ কথা তিনি শোনেননি। ত্রাণ দেওয়া বাধাগ্রস্ত করা কোনো অর্থেই সমীচীন নয়।
অন্যদিকে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ফেনী সদর আসনের বিএনপিদলীয় সাবেক এমপি জয়নাল আবেদীন বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতি দেউলিয়া হয়ে পড়েছে। অন্য দলের ছোট ছোট কর্মসূচিকেও তারা এখন ভয় পায়। ত্রাণের মতো জনস্বার্থমূলক কর্মকাণ্ড সহ্য করতে পারছে না। তিনি আরো বলেন, শনিবার বিএনপির ত্রাণ কর্মসূচি থাকলেও তাঁর ফুলগাজী সড়কে অবস্থিত ফলেশ্বর গ্রামের বাড়িতে কয়েক দিন আগ থেকে পাহারা বসিয়ে রেখেছিল আওয়ামী লীগ। রাতে এদিক-সেদিক বোমা বর্ষণ করে আতংক সৃষ্টি করে। ত্রাণ কর্মসূচি ব্যর্থ করতেই আওয়ামী লীগ প্রস্তুতি সভায় হামলা করেছে।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, ত্রাণকার্যে বাধার প্রতিবাদে জেলা বিএনপির দুই দিনের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভাকেও বানচাল করতে এখন যুবলীগ-ছাত্রলীগ এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে। শুক্রবার ফুলগাজীতে বিএনপির কর্মিসভায় হামলা ও শনিবার পথে পথে ব্যারিকেড বসানো হয়। ফুলগাজীতে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অঘোষিত কারফিউ চলছে। বিএনপি সমর্থক সব নেতাকর্মী এখন এলাকাছাড়া।
ঘটনার শুরু গত শুক্রবার বিকেল থেকেই। শনিবার ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার দৌলতপুরে বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি ছিল। ঢাকা মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে দেওয়া ত্রাণসামগ্রী বিতরণ কর্মসূচিতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিত থাকার কথা ছিল।
আগের দিন শুক্রবার প্রস্তুতি সভায় যুবলীগ-ছাত্রলীগের কর্মীরা হামলা চালিয়ে ১৫ জন বিএনপি নেতাকর্মীকে আহত করে। একই স্থানে আওয়ামী লীগও ত্রাণ বিতরণের কর্মসূচি ঘোষণা করে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে। পরদিন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা ঢাকা থেকে ত্রাণ দিয়ে গেলেও ফেনী থেকে ফুলগাজী যেতে পারেননি। পথে পথে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও পুলিশ ব্যারিকেড বসিয়ে বাধা দেয়।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]