যুক্তরাষ্ট্রে গত বছর কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েডকে হত্যা করে মিনিয়াপোলিস শহরের এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার। ডেরেক চাওভিন নামের ওই পুলিশের কর্মকর্তা হাঁটু দিয়ে ৯ মিনিট জর্জ ফ্লয়েডের ঘাড় চেপে ধরে রাখেন। এ ঘটনার একটি ভিডিও গত বছর যুক্তরাষ্ট্রসহ সারাবিশ্বে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল। নিমর্ম এ হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হয়েছে।
এ চাঞ্চল্যকর হত্যার ঘটনায় চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। তাদের মধ্যে ৪৫ বছর বয়স্ক ডেরেক চাওভিন হলেন প্রধান আসামী। দোষী সাব্যস্ত হলে এই মামলায় তার ৪০ বছর পর্যন্ত সাজা হতে পারে। ইতোমধ্যে পুলিশ বাহিনী থেকে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে চাওভিন তার বিরুদ্ধে আনা হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এই বিচার টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে। যে ১৪ জন জুরি বিচারে অংশ নিচ্ছেন, তাদের পরিচয় গোপন রাখা হচ্ছে। পুলিশ কর্মকর্তা চাওভিন যেভাবে হাঁটু দিয়ে জর্জ ফ্লয়েডকে মাটিতে চেপে ধরে রেখেছিলেন, সেই ভিডিও আদালতে দেখানো হয়।
যখন এই ভিডিওটি দেখানো হচ্ছিল, তখন জুরিরা হাতকড়া পরা অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকা জর্জ ফ্লয়েডের গোঙানি শুনতে পান। তার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল এবং পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজন পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক চাওভিনকে বার বার অনুরোধ করছিলেন তাকে ছেড়ে দেয়ার জন্য।
বাদী পক্ষের কৌশুলি জেরি ব্লাকওয়েল বলেন, ‘নয় মিনিট এবং ২৯ সেকেণ্ড। এত লম্বা সময় ধরেই এই ঘটনা ঘটেছিল।’
আদালতে যখন ভিডিওটি দেখানো হচ্ছে, তখন ডেরেক চাওভিন গ্রে স্যুট এবং নীল টাই পরে আসামীপক্ষের টেবিলে বসে ছিলেন। তাকে একটি হলুদ প্যাডে নোটও নিতে দেখা যাচ্ছিল।
বাদী পক্ষের কৌঁসুলি জেরি ব্লাকওয়েল তার যুক্তিতর্ক শুরু করেন এই বলে যে, ‘৪৪ বছর বয়সী ডেরেক চাওভিন পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে তার ব্যাজের সন্মান রক্ষা করেননি। কারণ তিনি জর্জ ফ্লয়েডের ওপর মাত্রাতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করেছেন, অযৌক্তিক বল প্রয়োগ করেছেন। তিনি তার হাঁটু দিয়ে জর্জ ফ্লয়েডের ঘাড় এবং পিঠ চেপে ধরে রেখেছিলেন, তার শেষ নিঃশ্বাসটি বেরিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত।’
১৪ জন জুরির সবাই যদি সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে আসেন, কেবল তবেই ডেরেক চাওভিনকে দোষী বলে রায় দেয়া যাবে। জুরিদের মধ্যে ছয়জন শ্বেতাঙ্গ নারী, তিনজন কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষ, দুজন শ্বেতাঙ্গ পুরুষ, দুজন মিশ্র বর্ণের নারী এবং একজন কৃষ্ণাঙ্গ নারী।
জর্জ ফ্লয়েডের হত্যার বিচারকে যুক্তরাষ্ট্রে বর্ণবাদ, বিভিন্ন বর্ণের মানুষের মধ্যে সম্পর্ক এবং পুলিশের জবাবদিহিতার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে যখন কোন অভিযোগ আনা হয়, তখন তাদের সাজা পাওয়ার ঘটনা খুবই বিরল।
বিচার শুরু হওয়ার আগে মিনিয়াপোলিস শহরে জর্জ ফ্লয়েডের পরিবারের সদস্যরা প্রার্থনায় অংশ নেন। তার ভাই টেরেন্স ফ্লয়েড বলেন, ‘আমরা ঈশ্বরপ্রেমী মানুষ, আমরা গির্জায় যাওয়া মানুষ। কাজেই আমরা শেষ পর্যন্ত এই কথাটাই বলতে চাই- আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে ন্যায়বিচার চাই।’
জর্জ ফ্লয়েডের আরেক ভাই ফিলোনাইস ফ্লয়েড বলেন, ‘আমার বুকে একটা বিরাট ক্ষত তৈরি হয়েছে। এই ক্ষত আমি সারাতে পারবো না.. এজন্যে দরকার জর্জ ফ্লয়েডের জন্য ন্যায়বিচার। এই মামলায় অপরাধীদের দোষী সাব্যস্ত করতে হবে।’
খবর বিবিসি বাংলা