গাজীপুর প্রতিনিধি রাকিব হাসান আকন্দ দৈনিক শিরোমণিঃ গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারী পার্কের ১১ জেব্রা মৃত্যুর খবর নিতে এসে বাঘ মৃত্যুর খবর বেরিয়ে পড়েছে। গাজীপুর-৩ আসনের সাংসদ মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজ পার্কের প্রকল্প পরিচালক জাহিদুল কবিরের কাছে জেব্রা মৃত্যুর কারণ জানতে চান। এসময় সাংসদ তাদের অবহেলা ও অভ্যন্তরীন কোন্দল থাকার সন্দেহ পোষন করে জেব্রা হত্যা করা হয়েছে বলে দাবী করেন। তিনি এসময় চলতি মাসে একটি বাঘ মৃত্যুর খবর জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক তা স্বীকার করেন।সাংসদ পার্কের ঐরাবতী বিশ্রামাগারে রোববার দুপুর ১টায় জেব্রা মৃত্যু নিয়ে গঠিত বন পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির সদস্যদের সাথে আলাপশেষে সাংবাদিকদের বলেন, পার্কে জেব্রাগুলো মারা যায়নি, হত্যা করা হয়েছে। নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ থাকায় একে অপরকে ফাঁসানোর জন্য জ্রেবা গুলোকে হত্যা করা হয়েছে বলে তার ধারণা।সংসদ সদস্য বলেন, জানুয়ারী মাসে সাফারি পার্কে একটি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এটা কেউ জানে না। এতো মূলবান প্রাণীগুলো মারা যাচ্ছে অথচ পার্ক কর্তৃপক্ষ তা গোপন করে যাচ্ছে। তিনি তদন্ত কমিটির সদস্যদের কাছে বলেন,যাদের তত্বাবধানে জেব্রা মারা গেছে তাদেরকে স্বপদে বহাল রেখে সুষ্ঠু তদন্ত সম্ভব নয়। এতে পার্কের অন্যান্য কর্মচারীরা মুখ খুলতে সাহস পাবে না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের সীমানা প্রাচীরের ভেতর থেকে হাতির খাবার পাচার করা হয়ে থাকে। বিশেষ সোর্সের মাধ্যমে তিনি বাঘ মৃত্যুর খবর পান। তিনি পার্কের প্রকল্প পরিচালক জাহিদুল কবির ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তবিবুর রহমানকে তাদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য তদন্ত কমিটির সদস্যদেরকে বলেন। সাংসদ বলেন এটি একটি হত্যার ঘটনা এবং ক্রিমিনাল অফেন্স। এজন্য সাংসদ বাদী হয়ে থানায় মামলা করবেন।পার্কে গত ১২ জানুয়ারী একটি পুরুষ বাঘ মারা যাওয়ার ঘটনাটি নিশ্চিত করে পার্কের প্রকল্প পরিচালক জাহিদুল কবির জানান, ওই বাঘের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাব পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখনো প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। তাই কাউকে জানানো হয়নি। পার্কে ১০টি বাঘের মধ্যে একটি পুরুষ বাঘ মারা যাওয়ায় এখন মোট বাঘের সংখ্যা ৯টি।এসময় পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সঞ্জয় কুমার ভৌমিক বলেন, তদন্ত শেষ হওয়ার আগে এবিষয়ে কিছু বলা যাবে না। কর্মকর্তাদের পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। এটি প্রসানের ব্যাপার।তদন্ত কমিটির যেসব সদস্য ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসেছিলেন তারা হলেন-বন পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সঞ্জয় কুমার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ড. মোহাম্মদ মনিরুল হাসান খান।প্রসঙ্গত, গত ২ জানুয়ারি থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে ৯টি জেব্রাা মারা যায়। ওই ঘটনায় প্রাণি বিশেষজ্ঞ দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং দেশের বিভিন্ন ল্যাবে নমুনা পাঠিয়ে প্রতিবেদন সংগ্রহ করেন। পরীক্ষায় প্রাপ্ত ২৩টি প্রতিবেদন নিয়ে বিশেষজ্ঞ দল সোমবার পার্কের ঐরাবতী বিশ্রামগারে বৈঠক করেন। বৈঠকশেষে বিশেষজ্ঞ বিশেষ মেডিক্যাল বোর্ড মারামারি করে চারটি এবং অন্যান্য পাঁচটি জেব্রা ইনফেকশনাল ডিজিজে মারা গেছে বলে জানায়। আর জেব্রাগুলোর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটন এবং করণীয় বিষয়ে মতামত দেওয়ার লক্ষ্যে ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। পরে শনিবার আরও দুটি জেব্রা মারা যায়।দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আমদানি করা জেব্রা নানা সময়ে বংশ বিস্তারের পর পার্কটিতে এর সংখ্যা বেড়ে প্রায় তিনগুণ তথা ৩১টিতে দাঁড়ায়। ১১টি মৃত্যুর পর পার্কে এখন জেব্রা রয়েছে ২০টি।