জানা গেছে, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে বদলগাছী সরকারি মডেল পাইলট হাইস্কুলে ষষ্ঠ শ্রেনীতে ১২০ আসনে ছাত্র-ছাত্রীদের ভর্তির জন্য গত বছরের ১৬ নভেম্বর অনলাইনে আবেদন করতে বলা হয়। আবেদনের শেষ সময় ছিল ৬ ডিসেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে ২৪৭ জন ছাত্র-ছাত্রী আবেদন করে। আবেদনের প্রেক্ষিতে ১০ ডিসেম্বর লটারির মাধ্যমে ১২০ জনের মেধা তালিকাসহ অপেক্ষমান তালিকা প্রকাশ করা হয়।
এরপর গত ৮ জানুয়ারি মেধা অনুযায়ী রোল নম্বর নির্ধারণের জন্য প ম শ্রেণির সিলেবাস অনুযায়ী একটি পরীক্ষা হয়। সেখানে ১৫১ জন শিক্ষার্থীর একটি তালিকা প্রকাশ করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। এছাড়া লটারির বাহিরে থাকা আরো ১৫-২০ জন ছাত্র-ছাত্রীর কাছ থেকে ভর্তি করানো হবে মর্মে টাকা নিয়ে রাখা হয়েছে। অর্থাৎ শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশিত তালিকার বাইরেও প্রধান শিক্ষক অনৈতিক সুবিধা নিয়ে ভর্তি করিয়েছে যা এই তালিকায় নেই।
আরো জানা যায়- ২০১৬ সালে সারাদেশে ৩২৮টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথম ধাপে নওগাঁর দুইটি বিদ্যালয় তালিকা ভুক্ত হয়। যার একটি বদলগাছী মডেল পাইলট হাইস্কুল এবং অপরটি আত্রাই উপজেলার আহসানগঞ্জ মেমোরিয়াল একাডেমি উচ্চ বিদ্যালয়। এরপর ২০১৮ সালে ২১ মে সরকারি ঘোষণা করা হয়। এরপর বিদ্যালয়ের সঙ্গে সরকারি শব্দটি যোগ হয়ে বদলগাছী সরকারি মডেল পাইলট হাইস্কুল।
ওই স্কুলের সাবেক ছাত্র ও উপজেলার গাবনা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা জমসত আলী বলেন, এখন যদি এক কক্ষে ১৫০ জনের অধিক ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করা হয় তাহলে কিভাবে ভাল পড়াশুনা হবে। বর্তমানে দেখা যায় ছাত্র-ছাত্রী বেশি প্রাইভেট পড়ছে। তাহলে কেন প্রাইভেট পড়ছে? আর এতোগুলো ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করানো আসলে ঠিক হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক জানান, নতুন ক্যারিকুলামে বিষয়ভিত্তিক একজন করে ট্রেনিংপ্রাপ্ত শিক্ষক রয়েছেন এই বিদ্যালয়ে। এত বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি নেওয়ার ফলে দুটি শাখা এক ক্লাসে করেও ক্লাস নেওয়া সম্ভব হবে না। ফলে যে আশা নিয়ে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের এই বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছেন তা পূরণ করা সম্ভব হবে না। এবং মান সম্মত শিক্ষা প্রদানে ব্যাঘাত ঘটবে।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক সুরেশ সিংহ বলেন, বিদ্যালয়টি এখনো শিক্ষক আত্তীকরণ হয়নি। একারণে অতিরিক্ত ভর্তি করানো হয়েছে। শিক্ষক আত্তীকরণ হয়ে গেলে তখন আর ১২০ আসনের বেশি ভর্তি করানো যাবে না। উপজেলায় ভাল আর কোন স্কুল নাই। কিছু ভাল ছাত্র-ছাত্রীর জন্য লটারিতে বেশি নাম উঠানো হয়েছে। একারণেও কিছু বেশি ভর্তি করাতে হয়েছে। তবে অর্থের বিনিময়ে ভর্তি করানোর অভিযোগটি সঠিক নয়। কারো হয়ত স্বার্থসিদ্ধ হচ্ছে না এ কারণে অভিযোগ করতেই পারে।
এ বিষয়ে বদলগাছী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, নিয়মের অতিরিক্ত ভর্তি করানো যাবে না। সরকারি বিধি-নিষেধ আছে তার মধ্যে ভর্তি করতে হবে। তবে প্রধান শিক্ষকের সাথে এ ব্যাপারে কথা বলবো।
বদলগাছী সরকারি মডেল পাইলট হাইস্কুলের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলপনা ইয়াসমিন বলেন, ১২০ আসনের বিপরীতে অতিরিক্ত ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করানোর নির্দেশনা নাই। তবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারি সন্তানরা যদি দু-এক জন আসেন তাদের ভর্তি করানো যাবে। অতিরিক্ত ভর্তি করানো সম্ভব না। কিন্তু তিনি (প্রধান শিক্ষক) আমার অনুমতি ছাড়াই নিজের মতো অতিরিক্ত ভর্তি করিয়েছেন।