1. [email protected] : admin :
  2. [email protected] : বরিশাল ব্যুরো প্রধান : বরিশাল ব্যুরো প্রধান
  3. [email protected] : cmlbru :
  4. [email protected] : চট্রগ্রাম ব্যুরো প্রধান : চট্রগ্রাম ব্যুরো প্রধান
  5. [email protected] : ঢাকা ব্যুরো প্রধান : ঢাকা ব্যুরো প্রধান
  6. [email protected] : স্টাফ রিপোর্টারঃ : স্টাফ রিপোর্টারঃ
  7. [email protected] : ফরিদপুর ব্যুরো প্রধান : ফরিদপুর ব্যুরো প্রধান
  8. [email protected] : সম্রাট শাহ খুলনা ব্যুরো প্রধান : সম্রাট শাহ খুলনা ব্যুরো প্রধান
  9. [email protected] : ময়মনসিংহ ব্যুরো প্রধান : ময়মনসিংহ ব্যুরো প্রধান
  10. [email protected] : আমজাদ হোসেন রাজশাহী ব্যুরো প্রধান : রাজশাহী ব্যুরো প্রধান
  11. [email protected] : রংপুর ব্যুরো প্রধান : রংপুর ব্যুরো প্রধান
  12. [email protected] : রুবেল আহমেদ : রুবেল আহমেদ
সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:০০ অপরাহ্ন

বদলে গেছে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার

জেমস আব্দুর রহিম রানা, যশোর জেলা প্রতিনিধি দৈনিক শিরোমণিঃ
  • আপডেট : সোমবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২২

জেমস আব্দুর রহিম রানা, যশোর জেলা প্রতিনিধি দৈনিক শিরোমণিঃ যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের সার্বিক চিত্র বদলে গেছে। লেখাপড়া, বইপড়া, খেলা-ধুলা আর বিনোদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে কারা অভ্যন্তরে।হস্তশিল্পের কাজ করে রোগজারের সুযোগ পাচ্ছেন কয়েদিরা।দৃষ্টি কাড়ছে জেলারের নিজস্ব অর্থায়নে নবনির্মিত বঙ্গবন্ধু কর্নার।কারা লাইব্রেরির ঝুলি পূর্ণ হয়েছে সকল ধর্মের ধর্মগ্রন্থসহ ১০ সহস্রাধিক বইয়ে।খাবার ও আবাসনসহ চিকিৎসায় ফিরেছে স্বচ্ছতা। কারা ক্যান্টিনের গলাকাটা ব্যবসাও বন্ধ হয়েছে। হাজতির চাপও কমেছে। ধারণ ক্ষমতার প্রায় অর্ধেকে নেমেছে হাজতির সংখ্যা। বসত বাড়ির রূপ ফিরে পেয়েছে কারাগারটি। কয়েদিদের পাশাপাশি এর সুফল পাচ্ছেন কারা সংশ্লিষ্ট সবাই। সম্প্রতি জামিনে ছাড়া পাওয়া বেশ কয়েকজন এ তথ্য জানিয়েছেন। (এই প্রতিবেদনে যাদের বক্তব্য ছাপা হয়েছে সবার ছদ্মনাম ব্যবহার করা হয়েছে)।যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কথিত আছে, যশোর জেলখানায় টাকা ফেললে মেলে ‘বাঘের চোখ’। ঘাটে ঘাটে ঘুষ দিয়ে পাওয়া যায় নানা অনৈতিক সুবিধা। খাওয়া যায় মাদক থেকে শুরু করে পোলাও, বিরিয়ানি মাংস ভাত। মুঠোফোনে স্ত্রী থেকে শুরু করে প্রেয়সী, এমনকি গডফাদার’র সঙ্গেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলার সুযোগ ছিল এখানে! নির্দিষ্ট অংকের ঘুষ দিয়ে কথিত গেস্টরুমে বন্দির সাথে একান্তে কথা বলার সুযোগও ছিল যশোর কারাগারে।কিন্তু গত কয়েক বছরে বদলে গেছে সেই চিত্র। সদ্য জামিনে ছাড়া পাওয়া আব্দুল্লা আল-আমিন জানান, মাদক মামলায় তিনি জেলে ছিলেন। ৩ মাসের কারাজীবনে বদলে গেছে তার নেতিবাচক ধারণা। তার ভাষ্যমতে, এখন মেডিকেলে থাকতে আগের মতো মাসে দুই-তিন হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয় না। ঘুষ দিয়ে কারা অভ্যন্তরে রাজকীয় জীবন যাপনের সুযোগও নেই। জেলারের জোরালো তৎপরতায় ভেঙে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে কারাভ্যন্তরের মাদক সিন্ডিকেট। ক্যান্টিনে ২৫ টাকা প্যাকেটের বিড়ি এখন দেড়শ’ দুই’শ টাকায় কিনতে হয় না। বডি রেটে কারা ক্যান্টিন থেকে বৈধপণ্য কেনা যায় সহজেই। পিসি কার্ড নামে হাজতীদের জন্য করা হয়েছে হিসসেবের খাতা। যার মাধ্যমে ন্যায্য মূল্যে কেনাকাটাসহ সবধরনের লেনদেন লিপিবদ্ধ করার সুযোগ রয়েছে কারাগারে। খেলা-ধুলা ও বিনোদনে কেটে গেছে তার কারাজীবন। তিনি বাঘারপাড়ার বাসিন্দা।বেনাপোলের তুরিন আফরোজ নামের এক নারী হাজতি ফেনসিডিলের মামলায় প্রায় ৬ মাস জেলে থাকার পর জামিনে তিনি কারামুক্ত হয়েছেন। তিনি জানান, আগেও জেলে গিয়েছি কিন্তু তখন যশোর জেলখানায় ভীতিকর পরিবেশ ছিল। নারীদের প্রতি শারীরিক নির্যাতনসহ নানাভাবে হয়রানী করা হতো। সেই বিভিষিকাময় স্মৃতি এখনো তাড়া করে। তিনি বলেন, এবার দেখলাম সবকিছু পাল্টে গেছে। মানবিক আচরণ করেন কারা কর্তৃপক্ষ। বাসস্থান ও খাবারে কোন অনিয়ম নেই। ছোট-খাটো রোগ বালাইয়ের চিকিৎসা দেয়া হয়। পরিবারের লোকজন, আত্মীয়, বন্ধু-বান্ধব ও আইনজীবীর সাথে সাক্ষাতে এবার ঘুষ লাগেনি। এর আগে তিনি ২০১১ সালে ৯ মাস কারাভোগ করেন। কারাগারে ঘুষ দিয়ে স্বজনরা দেখা করতেন। ঘুষের পেছনেই তার পরিবারের খরচ হয়েছিল ৫০ হাজারের বেশি।যশোর শহরের শংকরপুর মুরগী ফার্ম এলাকার রেশমা বেগম। তিনি গত মাসে জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। গাঁজা বিক্রির দায়ে তাকে কারাগারে যেতে হয়েছিল। তিনি বলেন, এখন জেলখানা আর বাড়ির মধ্যে কোনো তফাৎ নেই। বাইরের খাবারের প্রয়োজন হয় না। বিনোদনের সুযোগ যেমন রয়েছে তেমনি অন্য হাজতিদের সাথে সুখ-দুঃখের কথা বলা যায় অনায়াসে। যেকারণে তিনি কারাভোগের কষ্ট বুঝতে পারেননি। তিনি আরও বলেন, জেলখানায় দেখার মতো অনেক কিছু আছে। বঙ্গবন্ধু কর্ণার তার সবচেয়ে ভাল লেগেছে। লাইব্রেরিতে বই পড়ার অবাধ সুযোগ আছে। অপরাধিদের সংশোধনে কারাগারে নিয়মিত কাউন্সিলিং করা হয়। কারাগারে থেকেই তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফেরার শপথ নিয়েছেন বলেও জানান।কুষ্টিয়ার আব্দুর রশিদ বলেন, কয়েদিরা হস্তশিল্পের কাজ করে বাড়িতে টাকা পাঠান। জেলে থেকেও যে রোজগার করা যায়, এবার নিজের চোখে তা দেখেছেন। তিনি বলেন, বাঁশ বেতের মোড়া, সিংহাসন চেয়ার ও শাড়ি-লুঙ্গি বানিয়ে অনেক কয়েদি বাড়িতে টাকা পাঠান। এদের সবাই সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তিনি বলেন, খেলা-ধুলা, বিনোদন, বইপড়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে যশোর কারাগারে। দর্জিসহ নানা প্রশিক্ষণও দেয়া হয়। তিনি বলেন, এখন আর জেলখানা ভয়ের জায়গা না। যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার এখন সংশোধনাগারে পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে তিনি জানান,এই কৃতিত্ব বর্তমান সরকার ও কারা কর্তৃপক্ষের।যশোর সদরের জলকর এলাকার কুখ্যাত সন্ত্রাসী আব্দুর রশিদ গত ডিসেম্বরে জামিনে বেরিয়েছেন। তিনি বলেন, জীবনে বহুবার কারাগারে যেতে হয়েছে। তখন বাইরে থেকে টের পাওয়া না গেলেও কারাগারের ভেতরে ছিল অবৈধ এক ‘ব্যবসা কেন্দ্র’। হরেক রকমের সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ ছিল কারা অভ্যন্তর। এসব সিন্ডিকেটে কয়েদীরা যেমন ছিল, তেমনি বাইরে থেকে অনেকে কলকাঠি নাড়তেন। এসব অপকীর্তির পেছনে কারাগারের কিছু অসাধু কর্মকর্তার হাত থাকতো। কথা বলতে, সাক্ষাতে, মেডিকেলে থাকতে ও কাপড়-চোপড় এবং বাইরের কিছু খাবার দিতে স্বজনদের ঘাটে ঘাটে ঘুষ দিতে হতো। তাতে ভাগ বসাতো শীর্ষ সন্ত্রাসী থেকে শুরু করে ডেপুটি জেলাররাও। তবে এবার সেই চিত্র তিনি দেখেননি। তিনি প্রায় দেড় বছরের কারাজীবনে অনেক কিছু শিখেছেন জানিয়ে বলেন, অশুভ শক্তির কালো ছায়া সরে গেছে। তিনি আরও বলেন, নানা অনিয়মই ছিল যশোর জেলখানার নিয়ম। সেই অনিয়ম-দুর্নীতির কবল থেকে মুক্ত হয়েছে যশোর জেলখানা।মণিরামপুরের আব্দুল করিম ছিলেন পেশাদার গাড়ি চোর। তিনি জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জামিনে বেরিয়েছেন। তার ভাষ্য মতে, এবার জেলখানায় ঢুকে জীবনের মুল্যবোধ সম্পর্কে অনেক কিছু শিখেছেন। কারাকর্তৃপক্ষ শিখিয়েছেন স্বাভাবিক জীবনে ফেরা কঠিন কোনো কাজ না। জীবন উপভোগের। তিনি বলেন, নিজের অপকর্মের ফল পরিবার ও সন্তান-সন্ততিদের ওপরও পড়ে। সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে তারা সম্মান নিয়ে বাঁচতে পারে না। স্বাভাবিক জীবনে ফেরার প্রত্যয় নিয়েছেন দাবি করে তিনি বলেন, পরিবার-পরিজনদের নিয়ে ডাল-ভাত খাবো, কিন্তু আর কোন অপকর্মে জড়াবো না। স্থানীয় প্রশাসনের অসাধু কিছু সদস্য স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে বলেও অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, এলাকায় চুরি-ডাকাতি হলেই আগে আমাকে ধরে।যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার তুহিন কান্তি খান আমাদের প্রতিবেদক জেমস আব্দুর রহিম রানাকে বলেন, আমাদের ভিশন হলো রাখিব নিরাপদ। মিশন হলো, বন্দিদের নিরাপদ আটক নিশ্চিত ও মানবিক আচরণ করা কারাকর্তৃপক্ষের দায়িত্ব ও কর্তব্য। তিনি বলেন, কারাগারের কঠোর নিরাপত্তা, বন্দিদের মাঝে শৃঙ্খলা বজায় রাখা, বাসস্থান, খাদ্য, চিকিৎসা এবং আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও আইনজীবীর সাথে সাক্ষাত নিশ্চিত করার বিষয়ে সর্বদা সজাগ ও সচেতন রয়েছে কর্তৃপক্ষ।এক প্রশ্নোত্তরে তিনি বলেন, যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে ধারণ ক্ষমতা রয়েছে ১৯১৩ জনের। যার বিপরীতে বর্তমানে ১৩৬০ জন হাজতি রয়েছেন। এরমধ্যে নারী হাজতী রয়েছে ৬০ জন। রোববার (৩০ জানুয়ারী) পর্যন্ত কারাভ্যন্তরে ফাঁসির আসামি রয়েছেন ৯৯ জন। সমাজে পুনর্বাসন করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় মোটিভেশন ও প্রশিক্ষণ প্রদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে কারাঅভ্যন্তরে দৃষ্টিনন্দিত বঙ্গবন্ধু কর্ণার নির্মাণ করা হয়েছে। ১০ হাজারের বেশি বই রয়েছে লাইব্রেরিতে। দেড় শতাধিক কয়েদি হস্তশিল্প পণ্য তৈরি করছেন। দৃষ্টিকাড়া এসব পণ্য বিক্রি করে মোট লভ্যাংশের ৫০ শতাংশ তাদের দেয়া হয়। জেলে থেকেও তারা পরিবারকে অর্থ সহায়তা করতে পারছেন। আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি যে ব্যক্তি জেল থেকে ছাড়া পাচ্ছে তাকে যেন আর কোনদিন জেলে প্রবেশ করতে না হয়। তারা যেন এখান থেকেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে পারে।

Facebook Comments
২৫ views

Please Share This Post in Your Social Media

এই বিভাগের আরো সংবাদ
© ২০২২ দৈনিক শিরোমনি