গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রতিনিধি: সিলেটের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বড় প্রকল্প এবং সীমান্তে বসবাসকারী মানুষের স্বপ্ন জাফলং সেতু নির্মাণ। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ঐ অঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সেতুটি পূর্ণাঙ্গরূপ পেলেও মাত্র কয়েক বছরের মাথায় অবাধ বালু-পাথর উত্তোলনের ফলে ঝুঁকিতে পড়েছে সেতুটি। যেকোনো মুহূর্তে সেতুটির বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন স্থানীয় সচেতন মহল। সেতুর নিচ থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু-পাথর উত্তোলনের ফলে দুটি পিলার বাদে সব পিলারের ভূগর্ভস্থ অংশের চারপাশ আলগা হয়ে পড়েছে। সেতুর ওপর হালকা যান চলাচলেও মাত্রাতিরিক্ত ঝাঁকুনির সৃষ্টি হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে রহস্যজনক কারণে বালু-পাথর উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসন কোন কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ভারতের মেঘালয় পাহাড় থেকে বয়ে আসা পিয়াইন নদীর জাফলং খেয়াঘাট এলাকায় এলজিডির তত্ত্বাবধানে প্রায় ২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৬০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটি নির্মাণ করা হয়। এর লক্ষ্য ছিল জেলা সদরের সঙ্গে গোয়াইনঘাট উপজেলার সীমান্ত এলাকা জাফলংয়ের সড়ক যোগাযোগ সহজকরন ও দূরত্ব কমিয়ে আনা। ২০১৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ভিডিও কনফারেন্স’র মাধ্যমে জাফলং সেতু প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৮ সালের ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে যানবাহন চলাচলের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেয়া হয় সেতুটি। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাফলং সেতু উদ্বোধনের পর সিলেট সদর উপজেলার সঙ্গে জাফলংয়ের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের পাশাপাশি উত্তর সিলেটের জৈন্তাপুর-গোয়াইনঘাট-কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার যোগাযোগ সহজতর হয়েছে। যোগাযোগ ও পর্যটন সম্ভাবনার উন্নয়ন ব্যবস্থাপনায়ও নতুন সম্ভাবনা দেখা দেয়।
এদিকে জাফলং পাথর কোয়ারী ইসিএভুক্ত এলাকা হওয়ায় বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধ করে দেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। তবে স্থানীয় প্রভাবশালীদের স্বার্থের কারণে জাফলং সেতুটি ঝুঁকিতে পড়েছে। উপজেলার সংশ্লিষ্ট অসাধু কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা,আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কতিপয় ব্যক্তির মদদে সেতুর নিচ থেকে প্রতিদিন অবাধে উত্তোলন করা হচ্ছে প্রাকৃতিক সম্পদ বালু-পাথর।এতে করে চরম ঝুঁকিতে পড়েছে সেতুটি।
সরজমিন জাফলং নদী ঘুরে দেখা যায়, প্রতিদিন উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন সিলিন্ডার মেশিন দিয়ে জাফলং নদীর তলদেশের ৮০/১০০ ফুট গভীর থেকে তোলা হচ্ছে পাথর। ভয়ঙ্কর এ মেশিন গুলো মাটির উপরের অংশ ভেদ করে নিচ থেকে পাথর উত্তোলনের ফলে দিনদিন হুমকির মুখে পড়ছে জাফলং এলাকা সহ্ পর্যটন পরিবেশ।সরকারের প্রশাসনিক কোন দপ্তর থেকেও নেওয়া হচ্ছে না কোন পদক্ষেপ ? মাঝে মধ্যে প্রশাসন’র লোক দেখানো অভিযানেই দ্বায়সারা উপজেলা প্রশাসন গোয়াইনঘাট। বোমা মেশিনসহ বিভিন্ন যন্ত্র দিয়ে বালু-পাথর উত্তোলন অব্যাহত রাখায় এরই মধ্যে সেতুটির প্রধান দুটি পিলার ছাড়া সব পিলারের ভূগর্ভস্থ অংশ আলগা হয়ে পড়েছে। বর্তমানে সেতু ওপর দিয়ে যেকোনো ধরনের হালকা যান চলাচল করলে বড় ধরনের ঝাঁকুনির সৃষ্টি হচ্ছে। তাই যেকোনো সময় সেতুটি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা জানান, একটি চক্র গত আগস্টের পর থেকেই ইসিএভুক্ত এলাকা জাফলং, পিয়াইন ও ডাউকী নদীর উৎসমুখ হয়ে জাফলং সেতু পর্যন্ত অবাধে বালু-পাথর উত্তোলন করছে। এতে মাঝেমধ্যে স্থানীয় প্রশাসনের তরফ থেকে লোকদেখানো অভিযান হলেও অভিযানের কয়েক ঘন্টা পরে সেই আগের রুপ ফিরে পায় জাফলং নদী। সেতু দিয়ে চলাচলকারী কলিম উল্লাহ নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘যারা বালু-পাথর উত্তোলন করছে, তারা খুব প্রভাবশালী হওয়ার কারণে প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই তারা এ অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন।এভাবে চলতে থাকলে সেতুটি যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে।
সওজের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সিলেট’র মো: সালাহ্ উদ্দিন সোহাগ বলেন, ব্রীজের নিচ থেকে বালু-পাথর উত্তোলন করলে সেতুটি অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং দুর্বল হয়ে পড়বে। জাফলং সেতুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, এটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে জনসাধারণের দুর্ভোগ বাড়বে। শীগ্রই সরেজমিন পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করব।
Notifications