তুহিন সরদার, বরিশাল জেলা প্রতিনিধি : বরিশালের মুলাদি উপজেলায় আলোর দিশারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নামক গায়েবী সংগঠনের আড়ালে প্রতারণার অভিযোগ ও সত্যতা পাওয়া গেছে।
তথ্যমতে, এই দালাল চক্রটি বিভিন্ন জনবহুল এরিয়ায় যেমনঃ হাসপাতাল, ক্লিনিক, চায়ের দোকানে এবং সোস্যাল মিডিয়ায় পেজ/গ্রুপ খুলে তাদের ব্যানার, স্টিকার টানিয়ে রেখেছে। তারা বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের পেজ থেকে ডোনারের তথ্য নিয়ে অসহায় ও মুমূর্ষু রোগীদের জিম্মি করে গৌরনদী থেকে রক্তের ব্যবস্থা করে দিবে বলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
হিজলা, মুলাদি ও মেহেন্দিগঞ্জ এরিয়ার গরীব ও মধ্যবিত্ত অসংখ্য রোগী মুলাদিতে চিকিৎসা সেবা নিতে আসে। দালাল চক্ত এই সকল অসহায় ও মুমূর্ষু রোগীদের রক্তের ব্যবস্থা করে দিবে বলে কৌশলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। টাকার বিনিময়ে রক্ত দেয়া এবং নেয়া গুরুতর অপরাধ, এ বিষয়ে রোগীর লোকের কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, মুমূর্ষু অবস্থায় রোগীকে হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়, জরুরী মুহুর্তে অনেকটা বাধ্য হয়ে তাদের চুক্তিতে রাজি হতে হয়ে। কয়েকজন রোগীর মাধ্যমে জানতে পারা যায় রোগীর শারিরীক ও আর্থিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে প্রতি ব্যাগ রক্ত ৫০০-৪০০০ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এই দালালচক্র।
ফয়সাল ঢালী নামক স্থানীয় এক স্বেচ্ছাসেবী জানান, কিছুদিন পূর্বে আমার এলাকার এক গরিব সিজারের রোগীর জন্য দূর্লভ এ নেগেটিভ রক্তের প্রয়োজনে ব্যানারে উল্লেখিত নাম্বারে যোগাযোগ করলে গৌরনদী থেকে রক্ত এনে দিবে বলে যাতায়াত ভাড়া ২২০০ টাকা দাবি করে। টাকা না দিয়ে তাদেরকে সরাসরি ডোনার আনার কথা বললে এবং রোগীর লোক নিজে গৌরনদী যেয়ে সরাসরি ডোনারের থেকে রক্ত সংগ্রহ করার কথা বললে তারা রাজি হয়নি। পরে স্থানীয় এক স্বেচ্ছাসেবী রোগীর অবস্থা বেগতিক দেখে রক্ত দেয়ার ৪ মাস পুর্ন হওয়ার পূর্বে আবার রক্তদান করে জরুরী মূহুর্তে মানবিকতার পরিচয় দিয়েছে। রক্তদানের শেষে একটি ডাব ও গাড়ি ভাড়া দিতে চাইলে তা না নিয়ে দোয়া চেয়ে বিদায় নেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নিয়মিত রক্তদাতা বলেন আমি উক্ত সংগঠনের রেফারেন্সে একব্যাগ রক্ত দান করি আমার এলাকার এক গরিব রোগীকে। রক্তদান করে বাড়িতে আসার পরে রোগীর লোকের মাধ্যমে জানতে পাড়ি আমার কথা বলে গাড়িভাড়া ৩০০ টাকা হাতিয়ে নেয় যা আমার জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক ও বিব্রত কর। অথচ আমি অসংখ্য বার রক্তদান করেছি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ও নিঃস্বার্থভাবে।
সরজমিনে মুলাদির কোথাও আলোর দিশারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নামে কোন সংগঠন খুঁজে পাওয়া যায় নি। ব্যানারে উল্লেখিত নাম্বারে যোগাযোগ করলে তৌহিদুল ইসলাম ত্বহা নামের এক ব্যক্তি জানান আলোর দিশারী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রধান কার্যালয় গৌরনদী উপজেলার নলচিড়ায় এবং মুলাদীতে তারা শাখা সংগঠনের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। রোগী জিম্মি করে চুক্তির মাধ্যমে টাকা নেয়া হয় জানতে চাইলে যাতায়াত ভাড়া বাবদ কিছু টাকা নেয় বলে জানান তিনি। তবে এ বিষয়ে সংগঠনটির গৌরনদী শাখার সভাপতি মোঃ মারুফ হাওলাদারের সাথে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান আমাদের মুলাদীতে কোন শাখা সংগঠন, এমনকি কোন প্রতিনিধিও নেই। যদি আমাদের নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ এমন প্রতারনা করে থাকে তাহলে আইনের আশ্রায় নিবো।
প্রতারনার শিকার অসংখ্য রোগী প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের আবেদন জানান।