জাপান, প্রশান্ত মহাসাগরের একটি দ্বীপরাষ্ট্র, ছবির মতো সুন্দর দেশটি। পৃথিবীর বাসযোগ্য দেশগুলোর তালিকায় এর অবস্থান নবম। বাসযোগ্য শুধু আর্থ-সামাজিক কারণেই নয়, বাসযোগ্য এর নিটোল ও নিখুঁত ঝকঝকে বাহ্যিক রূপের কারণেও। এ প্রসঙ্গে বলতে হয় দেশের যাবতীয় বস্তুর ডিসপেসাল সিস্টেমও তার প্রয়োগের বিষয়ে। এখানে বর্জ্য ফেলা হয় নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে। একেক ধরনের বর্জ্য ফেলার জন্য একেক ধরনের পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করা হয়। সবাই এ নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য। রোজকার রান্নাঘরের দাহ্য আবর্জনা ফেলা হয় স্বচ্ছ ৪৫ লিটার সাইজের পলিথিনের ব্যাগে। এ ব্যাগের লেখাগুলো লাল। পানীয় পেট বোতল ফেলা হয় একই রঙ্গের নীল রঙ্গের ছবি ছাপা ব্যাগে; কিন্তু এই পেট বোতলগুলোকে চ্যাপ্টা করে ঢোকানো হয় যাতে জায়গা কম লাগে।এভাবে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাগে ঢোকানোর কারণ হল: এসব আবর্জনাই আবার রিসাইক্লিং করা হয় এবং সে সময় যেন এগুলোকে পৃথক করতে পুনরায় লোকবল না লাগে যা জাপানে খুবই ব্যয়বহুল। এই আবর্জনার মধ্যে রান্নাঘরের বর্জ্য দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয়। ব্যবহৃত পেট বোতল থেকে তৈরি করা হয় নতুন পেট বোতল; আর ব্যবহৃত প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে নতুন প্লাস্টিক। টিনের ক্যানগুলো রাখা হয় সবুজ লেখা ছাপা ব্যাগে। এভাবে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাগে জিনিস না ভরা হলে ময়লা যারা সংগ্রহ করেন তারা ঠিকই তা বের করে ফেলতে পারেন যে, কোন ফ্ল্যাট থেকে এরকম নিয়ম ভাঙ্গা হচ্ছে। এ অপরাধে জরিমানা করা হয় মোটা অংকের টাকা
প্রতিটি জায়গায় লোকালয়, অফিস, দোকান বা স্টেশন যেখানে ডাস্টবিন আছে, সপ্তাহে নির্দিষ্ট দিনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যাগগুলো সেখানে রেখে আসতে হয়। অত:পর নির্দিষ্ট সময়ে আবর্জনা নেয়ার জন্য ঝকঝকে ট্রাক আসে এবং সেগুলো থেকে নেমে আসেন ইউনিফর্ম, গ্লাভস ও মুখোশপরা কর্মীরা। তারা ব্যাগগুলো সংগ্রহ করে নিয়ে যান। এছাড়াও প্রায় সবক’টি শপিং মল অথবা কনভেনিয়েন্ট শপেই রয়েছে বড় বড় স্টেনলেস স্টিলের বিভিন্ন ধরনের আবর্জনার জন্য নির্দিষ্ট বিভিন্ন বা বাস্ক যাতে খুচরা আবর্জনা যেমন ক্যান, কন্টেনার, কার্টন,পেট বোতল এসব নিয়ে ফেলে আসা যায়। আপনি যদি সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনের জন্য অপেক্ষা করতে চান না, তবে এসব বিনে ফেলে আসতে পারেন ময়লা-আবর্জনা। পলিথিনের এই ৪৫ লিটার সাইজৈর নির্দিষ্ট রংয়ের ব্যাগগুলো সব শপিং মলেই বিক্রয় হয়। এই ব্যাগের দাম পুরোটাই ট্যাক্স অর্থাৎ এর মূল্য শপিংমল বা এর প্রস্তুতকারক পাবে না, পুরোটাই পাবে মিউনিসিপ্যালিটি।
জাপানে পার্ক জনসাধারনের জন্য উন্মুক্ত। সব জায়গাতেই আছে আবর্জনা ফেলার বিন, অফিস, আদালত, স্কুল, কলেজ সর্বত্র। তাদের স্কুলের খুদে ছাত্ররাই স্কুল পরিস্কার করে, বাগান করে যেন ছোটোবেলা থেকেই তাদের এ ধারণা মনে গেঁথে যায় যে, আমি যেখানে থাকি, যেখানে পড়ি, যেখানে কাজ করি, সেটা পরিস্কার করার দায়িত্ব শুধুই আমার, অর্য কারো না। অফিস, আদালতে ক্লিনিং স্টাপ থাকলেও, তারা শুধু সিঁড়ি, বাথরুম ইত্যাদি পরিস্কার করে। রুম যদি কখনো নোংরা মনে হয়, তবে অফিসারদের যে কেউ রুমে রাখা ভ্যাকিউম ক্লিনার দিয়ে তা পরিস্কার করে ফেলে। যার ফলে তাদের স্কুল, কলেজ, অফিস, আদালত তো অবশ্যই, এমনকি রাস্তাঘাট, পার্ক, পাবলিক প্লেস-কোথাও এক টুকরো কাগজ বা ধুলো কেউ দেখতে পাবে না। দেশটা হয়েছে পটে আঁকা ছবির মতো ঝকঝকে পরিস্কার, নিটোল ছবির মতো যা না দেখলে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়।