খাদেমুল ইসলাম পঞ্চগড় প্রতিনিধি:দেশের চতুর্দেশীয় স্থলবন্দর পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। ২০১৮ সালে স্থলবন্দরটিতে ইমিগ্রেশন সুবিধা চালুর পর ভারত, নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশের পাসপোর্টধারী যাত্রীরা যাতায়াতে প্রাণ চাঞ্চল্য ছিল।
কিন্তু মহামারী করোনা পরিস্থিতির কারণে দুই বছরের বেশি সময় ধরে এই বন্দর দিয়ে যাত্রী পারাপার বন্ধ রয়েছে। এতে করে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন এ রুট ব্যবহারকারী পর্যটক, রোগী ও ব্যবসায়ীরা।
ইমিগ্রেশন সূত্র জানায়, চলতি বছরের ০৭ এপ্রিলে ভ্রমণ ভিসায় ভারতে যাতায়াতের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশনে অজ্ঞাত কারণে ভ্রমণ ভিসা দেয়া হচ্ছে না। চলতি বছরে নতুন ভিসায় যাদের বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ি রুট উল্লেখ থাকবে এমন পর্যটকরাই এই রুট ব্যবহার করতে পারবেন বলে জানানো হয়। কিন্তু ঠাকুরগাঁওয়ে ভিসা সেন্টারে ভিসা করতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন পাসপোর্টধারী যাত্রীরা। পর্যটকরা এ রুটে অতি দ্রুত ভিসা দেয়ার দাবি জানিয়েছেন।
বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ি ইমিগ্রেশন রুটে ভিসা চালুর দাবিতে গত ২৬ জুন পঞ্চগড় চেম্বার অব কমার্স ভবনে এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানীকারক গ্রুপ। সে সম্মেলনে জানানো হয়, করোনার স্বাভাবিক পরিস্থিতির গত মার্চ মাস থেকে সব ধরনের ভিসা দেওয়া শুরু করেন ভারত। কিন্তু ভিসায় রুট নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন দেশের একমাত্র চতুর্দেশীয় বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর সংশ্লিষ্ট ভারত, নেপাল এবং ভুটানের যাত্রীরা। এ ইমিগ্রেশন ব্যবহার করে শিক্ষার্থী, রোগী, ব্যবসায়ীসহ পর্যটকরা ভারত, নেপাল এবং ভুটানে যাতায়াত করেন। এই রুটে ভিসা না দেওয়ায় সমস্যায় পড়েছে স্থানীয়সহ দেশের হাজারো মানুষ।
স্থলবন্দর ঘুরে জানা যায়, ভিসা না থাকায় প্রাণচাঞ্চল্য নেই দেশের একমাত্র চতুদের্শীয় স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশনে। আগে যেখানে উভয় দেশের মানুষদের পারাপারে সরগরম হয়ে থাকতো। এখন নিস্প্রাণের মতো পড়ে রয়েছে এ ইমিগ্রেশনটি। পর্যটন সংশ্লিষ্ট সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো জানায়, ভারতের দার্জিলিং, কাঞ্চনজঙ্ঘা, গ্যাংটক, ডুয়ার্স, গ্যাংটক, ডুয়ার্সসহ নেপাল, ভুটানের বহু পর্যটক ব্যবহার করতেন এ বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট। বর্তমানে এ রুট বন্ধ থাকায় ভারত-নেপাল-ভুটান থেকে আসা পর্যটক যেমন কমে গেছে, তেমনি বাংলাদেশি পর্যটকরা যেতে পারছেন না। অনেকে বাধ্য হয়েই ভিন্ন রুট হিসেবে হিলি, বুড়িমারী কিংবা বেনাপোল স্থলবন্দর ব্যবহার করছেন। এতে তাদের প্রচুর সময় ও অর্থ ব্যয়ের সঙ্গে দূর্ভোগও পোহাতে হচ্ছে।
পর্যটকরা জানান, দেশের অন্যান্য স্থলবন্দর থেকে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের গুরুত্ব আলাদা। এ বন্দর থেকে ভারত, নেপাল, ভুটান কাছাকাছি হওয়ায় পর্যটক ও ভ্রমণপিপাসুদের কাছে সবচেয়ে বেশি পছন্দ এ স্থলবন্দরটি। বিশেষ করে এ বন্দর দিয়ে অতি অল্প সময়ে ভারতের শিলিগুড়ি, দার্জিলিং, সিকিম, গ্যাংকটকসহ নেপাল ও ভুটান ঘুরে আসা যায়। ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়া যায়।
বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন রুটের নিয়মিত যাত্রী কবীর আকন্দ বলেন, দু’বছর ধরে ভারত যেতে পারছি না। অন্যান্য স্থলবন্দরে ভারতীয় ভ্রমণ ভিসা চালু থাকলেও অজ্ঞাত কারণে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে ভারতীয় ট্যুরিস্ট ভিসা দেয়া হচ্ছে না। যে কারণে আমাকে এখন অন্য রুটে যেতে হচ্ছে। এতে করে সময় এবং অর্থ দুটিই বেশি লাগছে। আমরা প্রত্যাশা করবো স্থানীয়দের কথা বিবেচনা করে অতিদ্রুত ফুলবাড়ি-বাংলাবান্ধা পোর্ট ট্যুরিষ্টদের জন্য খুলে দেয়া হোক।
পর্যটক সাব্বির হোসেন বলেন, কদিন আগে ভারত গিয়েছিলাম বুড়িমারী স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন রুট ব্যবহার করে। কী পরিমাণ ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে তা বোঝানোর মতো নয়। সময়, অর্থ সবই দ্বিগুন গেছে। অথচ বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশনে ট্যুরিস্ট ভিসা চালু থাকলেও এই ভোগান্তি পোহাতে হতো না।
জেলা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস সূত্রে জানা যায়, করোনার দুই বছরে নতুন পাসপোর্ট করেছেন সাড়ে পাঁচ হাজার ব্যক্তি। নতুন ভিসা না পাওয়ায় বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ব্যবহার করে ভারতসহ কাংখিত দেশগুলোতে যেতে পারছেন না। গেল ঈদের সময় বুড়িমারি ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট খুলে দেয়ার পর এখানে পাসপোর্টের আবেদন বেড়েছে।
বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন ওসি নজরুল ইসলাম বলেন, বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট চালু রয়েছে। যে সমস্যার কারণে এ স্থলবন্দর ইমিগ্রেশনে ট্যুরিস্ট ভিসা বন্ধ রাখা হয়েছিল, সে সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে ভারতীয় হাইকমিশনার বন্দরটি ঘুরে গেছেন। শীঘ্রই ট্যুরিস্ট ভিসা দেয়া হবে।