সব দিক থেকেই বিপদ বাড়ছে। মূল্যস্ফীতির কারণে বেড়ে গেছে জীবনযাত্রার ব্যয়, কষ্টে আছে সীমিত আয়ের সাধারণ মানুষ। এ অবস্থায় অর্থনীতিবিদেরা এখনই প্রস্তুতি নেওয়ার তাগিদ দিচ্ছেন। সামনে আসছে বাজেট। এই বাজেটে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বাড়ানো এবং অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানোর কথাও বলছেন তাঁরা।
২০২০ সালে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লেও ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত দেশে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি ছিল যথেষ্ট ভালো। শুরুতে রপ্তানি নিয়ে শঙ্কা থাকলেও পরে তা–ও কাটিয়ে ওঠা গেছে। এমনকি আমদানি ব্যয়ও ছিল সাধ্যের মধ্যে। কিন্তু চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের শুরু থেকেই কয়েকটি সূচকে ভঙ্গুরতা দেখা দেয়। বিশেষ করে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি তো দূরের কথা, আগের বছরের সমান আয়ও করা যায়নি। অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে প্রবাসী আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমে ১৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। আগের অর্থবছরে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ।
গত অর্থবছরের ১২ মাসে আমদানি ব্যয় ছিল ৬ হাজার কোটি টাকার সামান্য বেশি। আর চলতি অর্থবছরের ৯ মাসেই আমদানির জন্য ব্যয় করতে হয়েছে ৬ হাজার ১৫২ কোটি ডলার। এখন দেশে যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আছে, তা দিয়ে সাড়ে পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব, যা আগে ছিল আট মাসেরও বেশি। ৯ মাসের আমদানি ও রপ্তানির হিসাব ধরলে ঘাটতি প্রায় আড়াই হাজার কোটি ডলার। মূলত এখন বাংলাদেশ যত বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে, তার চেয়ে ব্যয় অনেক বেশি হয়ে গেছে। প্রবাসী আয়ে নিম্নগতি ও উচ্চ আমদানি ব্যয়ের কারণে চলতি আয়ে দেখা দিয়েছে রেকর্ড ঘাটতি। মূল সংকট এখানেই।
সুতরাং অর্থবছরের শুরু থেকেই অল্প অল্প চাপ বাড়ছিল। এর মধ্যে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতি আরও খারাপ করে দিয়েছে। কোভিড–পরবর্তী অর্থনৈতিক উত্তরণের পরিবর্তে নতুন মন্দায় নিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতিকে। নীতিনির্ধারকেরা উচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধি আর মাথাপিছু আয় বাড়াতে এবং ১৭ বছর আগের ভিত্তিবছর ধরে মূল্যস্ফীতি গণনাতেই ব্যস্ত থেকেছে বেশি। এতে মূল্যস্ফীতি কম দেখালেও যা প্রকৃত পরিস্থিতির সঙ্গে মিল ছিল না। ফলে বাস্তব পরিস্থিতি মূল্যায়নে মনোযোগ ছিল কম।