দৈনিক শিরোমণি ডেস্ক: ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতন এবং দিল্লিতে গিয়ে তাঁর আশ্রয় নেওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে। ছাত্র-জনতা অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে শুধু রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হয়নি, সমাজ-সংস্কৃতি ও প্রথাগত চিন্তার জগতেও একটা যে বড় বদল ঘটে গেছে, সেই পরিবর্তিত বাস্তবতা ভারতের রাজনৈতিক এলিটরা (শাসক দল, বিরোধী দলনির্বিশেষে) মেনে নিতে পারেনি।
এখানে এটাও বলাটা জরুরি, বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা যখন রাস্তায় লড়াই করছিলেন, গুলির সামনে বুক পেতে দিচ্ছিলেন, তখন ভারতের ছাত্র-তরুণদের অনেকে তার সমর্থনে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। মোদি সরকারের বাংলাদেশ নীতির সমালোচনা করে তারা স্লোগান তুলেছিল, ‘মোদির পোষা হাসিনা, তোমায় ভালোবাসি না।’
বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার গণতান্ত্রিক দেশ গড়ে তোলার লড়াইয়ে ভারতের ছাত্র-তরুণদের এই সংহতির কারণ হলো উপমহাদেশের যে স্বৈরতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা (রাজনীতি ও রাষ্ট্রে যার সর্বোচ্চ বিকাশ আমরা দেখি), তার থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা। ধর্মীয় পরিচয়ে বিভাজিত উপমহাদেশের রাষ্ট্র ও শাসনকাঠামোয় ব্যক্তির নাগরিক অস্তিত্ব ও মর্যাদা নেই বললেই চলে। সাতচল্লিশের দেশভাগ থেকেই এ অঞ্চলের সংখ্যালঘুরা অনেকটা জিম্মি রাজনীতির শিকার। তাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত সহিংসতা রাষ্ট্র, সরকার, বুদ্ধিজীবী-সমাজ ও সমাজের গরিষ্ঠ অংশের কাছে অপরাধ বলেই গণ্য হয় না। এর বিপরীত চিত্র যে নেই, তা নয়। কিন্তু তারা সংখ্যালঘুরও সংখ্যালঘু। তাই সেই স্বরটা ক্ষীণ। এই নীরবতা উপমহাদেশের সংখ্যালঘুদের মধ্যে জন্মসূত্রেই ভীতি আর নিরাপত্তাহীনতার একটা বোধ তৈরি করে।
এ অঞ্চলের বেশির ভাগ শাসক জনগণকে বিভক্ত করে শাসন করার পরীক্ষিত পথ হিসেবে তাঁদের ঝুলি থেকে সংখ্যালঘু কার্ড বের করেন। জনগণের খাদ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা, বাসস্থান, চাকরি ও আয়-রোজগারের মতো মৌলিক সমস্যাগুলোর সমাধান করতে তাঁরা যত ব্যর্থ হন, ততই তাঁরা ধর্মকে ব্যবহার করে কিংবা উগ্র জাতীয়তাবাদী ধুয়া তুলে জনগণের মধ্যে বিভক্তি তৈরি করতে থাকেন।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]