মোশারফ হোসেন লিটন সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি দৈনিক শিরোমণিঃ জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন ও পবিত্র গীতা পাঠের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ সুনামগঞ্জ জেলা শাখার দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন ২০২১ উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে জেলার ১২টি উপজেলা পূজা কমিটির সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকগন উপস্থিত ছিলেন। শুক্রবার সকাল ১১টায় বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ সুনামগঞ্জ জেলা শাখার উদ্যোগে শহরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাঠাগার মিলনায়তনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সুনামগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি এড. ডবমান কান্তি রায়ের সভাপতিত্বে ও সাধারন সম্পাদক বিমল বণিকের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন,বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারন সম্পাদক জয়ন্ত কুমার দেব। সভার শুরুতেই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন সুনামগঞ্জ সরকারী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ পরিমল কান্তি দেন। সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন,পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি নৃপেশ তালুকদার নানু,যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মৃত্যুজ্ঞয় ধর ভোলা,প্রধান বক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুভাশিষ বিশ^াস সাধন,এড. রঞ্জন ঘোষ,রামকৃষ্ণ আশ্রমের সাধারন সম্পাদক যোগেশ^র দাস,সুনামগঞ্জ জেলা হিন্দু বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি দিপক ঘোষ,সাধারন সম্পাদক এড. বিশ^জিৎ চক্রবর্তী,জেলা জন্মাষ্টমী পরিষদের সভাপতি এড. গৌরাংঙ্গ পদ দাশ,জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সহ সভাপতি স্বপন কুমার দাস,ঝন্টু তালুকদার,বিজন কুমার দেব,জেলা আওয়ামীলীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক সীতেশ তালুকদার মঞ্জু,পৌর কাউন্সিলর চঞ্চল কুমার লৌহ,দিরাই উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সদস্য নীহার রঞ্জন চৌধুরী,শান্তিগঞ্জ উপজেলা কমিটির সভাপতি জ্যোতিভূষন তালুকদার,তাহিরপুর কমিটির আহবায়ক সুভাষ পুরকায়স্থ,ছাতক কমিটির সভাপতি পীজুষ ভট্রচার্য্য,জামালগঞ্জ কমিটির সাধারন সম্পাদক শম্ভ আচার্য্য, জগন্নাথপুর উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির আহবায়ক সতীশ গোস্বামী,মধ্যনগর কমিটির সভাপতি দেবল কিরন তালুকদার,শাল্লা কমিটির আহবায়ক তরুণ কান্তি দাস, দোয়ারাবাজার কমিটির সাধারন সম্পাদক অজিত দাস(মেম্বার) প্রমুখ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাধারন সম্পাদক জয়ন্ত কুমার দেব বলেছেন দেশে সাম্প্রদায়িক গোষ্টি আমাদের হিন্দুদের বাড়িঘরে আগুন দিয়ে জ¦ালিয়ে দিবেন আর সরকার আমাদের পূনঃবাসন করবে তা আমরা চাই না। আমরা এ দেশে কোন রোহিঙ্গা হিসেবে আশ্রয় নিতে আসিনি। এদেশের সংস্কৃতিতে হিন্দু মুসলিম আর বৌদ্ধ খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষের হাজারো বছরের গৌরব উজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে তাই আমরা কারো দয়ায় এদেশে আসিনি। একটি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে সকল ধর্মের মানুষের অংশগ্রহন ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত আমরা এই স্বাধীন ভূখন্ডের নাগরিক। তাই প্রতিটি ধর্মের মানুষের সুরক্ষা দেয়া হলো রাষ্ট্রের দায়িত্ব্ তিনি আরো বলেন গেলবছর সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার নোয়াগাওঁ গ্রামের ঝুমন দাসের একটি ফেইসবুকের স্টেটাস নিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যেভাবে দূর্গাপূজা চলাকালীন সময়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে,মন্দিরে হামলা ভাংচুর,লুটপাঠের ঘটনাসহ নারীদের নির্যাতন করা হয়েছে তা স্বাধীনতার মূল স্প্রিট অসাম্প্রদায়িকতাকে ভূলন্ট্রিত করেছেন। হাঁজারো বছরের সেই সংস্কৃতি ১৯৭১ সালে জাতির পিতার ডাকে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে তৎকালীন প্রতিটি ধর্মের সাড়ে সাতকোটি মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনের মধ্যে দিয়ে ত্রিশলাখ শহীদ ও দু’লাখ মাবোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীন বাংলাদেশের প্রনীত সংবিধানে ধর্ম নিরপেক্ষতা এবং সমধিকারের কথা বলা ছিল।। কিন্তু তা শুধুমাত্র কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ থাকায় স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে যেখানে জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকীতে তার সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের শাসনামলেও দেশের রামুতে,রংপুরের পীরগঞ্জে,ব্রাক্ষ্রণবাড়িয়া ও সুনামগঞ্জের শাল্লায় হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর,মন্দিরে হামলা, প্রতিমা ভাংচুর ও নারী নির্যাতনের ঘটনাও ঘটে গেল। তিনি আক্কেপ করে আরো বলেন,শাল্লার নোয়াগাওঁ গ্রামের ঝুমন দাসের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হলো ঝুমন দাস জেলে গেলেন,ঐ গ্রামে হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলার মূল নায়ক স্বাধীন মিয়ার নেতৃত্বে হামলার ঘটনায় মামলা হলো। স্বাধীন মিয়া গ্রেপ্তারের কয়েকদিনের মাথায় তিনি জামিনে মুক্তি ফেলেন অথচ ঝুমন দাসের মুক্তির জন্য বার বার আবেদন করে ও তার মুক্তি হয়নি। পরবর্তী হিন্দু সম্প্রদায়ের কেন্দ্রীয় নেতারা ঝুমন দাসকে শর্তসাপেক্ষে মহামান্য হাইকোর্ট থেকে মুক্ত করা হয়। অথচ যারা হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা,অগ্নিসংযোগ ও মন্দিরে প্রতিমা ভাংচুরকারী করে লঘু অপরাধ করেছেন তারা দ্রæত সময়েই মধ্যে জামিনে মুক্তি পেয়ে আবারো সংখ্যালঘুদের হুমকি দিচ্ছেন এই যদি হয় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের চরিত্র তাহলে সংখ্যালঘুরা এই দেশে কতটুকু নিরাপদ তা ভেবে দেখার সময় এসেছে। তিনি সকল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সাম্প্রাদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানান। পরে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দরা এড. বিমান কান্তি রায়কে সভাপতি ও বিমল বনিককে সাধারন সম্পাদক করে নতুন কমিটির ঘোষনা দেওয়া হয়।
৩ views