বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ব্যবসা-বাণিজ্যে ইউএস ডলারের ব্যবহার এড়িয়ে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া। সম্প্রতি ভারতের রাষ্ট্র মালিকানাধীন সবচেয়ে বড় এই ব্যাংক তার শাখাগুলোতে দেওয়া এক চিঠিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। প্রতিবেশী দুই দেশের বাণিজ্যে ডলারের পরিবর্তে টাকা ও রুপি ব্যবহার করতে রপ্তানিকারকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে ওই চিঠিতে।
সোমবার রয়টার্সের এক খবরে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাড়তি আমদানি ব্যয় মেটাতে গিয়ে বাংলাদেশের চলতি হিসাবের ঘাটতি বেড়ে গেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও কমেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে ঋণ চেয়েছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নেমে এসেছে ৩৭ বিলিয়ন ডলারে, যেটি এক বছর আগেও ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছিল। বর্তমানে যে রিজার্ভ রয়েছে, তা দিয়ে পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। রিজার্ভ কমে আসার পাশাপাশি ডলারের দামও ঊর্ধ্বমুখী হতে দেখা গেছে। গত মাসে আমদানিতে ডলারের সর্বোচ্চ দর ওঠে ১১২ টাকা। এখন তা ১০৮ টাকার মতো। শুধু চলতি বছরেই বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি ডলারের দর ১০ টাকা ২০ পয়সা বাড়িয়েছে।
বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে চলতি অর্থবছরের সোমবার পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২৯৯ কোটি ৬৫ লাখ ডলার বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে বিক্রি করেছে। গত অর্থবছরে বিক্রি করা হয় ৭৬২ কোটি ডলার। এমন বাস্তবতায় বাংলাদেশ ব্যাংকও ডলারের বিকল্প ভাবছে। সম্প্রতি চীনের মুদ্রা ইউয়ানে করেসপন্ডেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলার অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া রাশিয়ার সঙ্গে টাকা-রুবলে লেনদেনেরও আলোচনা চলছে।
এদিকে ভারত সরকারও বিভিন্ন দেশের সঙ্গে রুপিতে লেনদেনের বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনায় নিয়েছে। সম্প্রতি নয়াদিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে দেশটির অর্থমন্ত্রী নির্মলা সিতারমন জানান, বিশ্বের অনেক দেশ ভারতের সঙ্গে রুপিতে বাণিজ্য করতে আগ্রহী। তিনি বলেন, এটি সম্ভব। এ বিষয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার সংশ্নিষ্ট প্ল্যাটফর্মগুলোকে সক্রিয় করছে বলেও জানান তিনি।
গত ২৪ আগস্ট স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার প্রধান কার্যালয় থেকে ব্যাংকটির শাখাগুলোতে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, উচ্চ আমদানি ব্যয় ও সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের বিপরীতে টাকার মান পড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি মোকাবিলা করছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্যাংকটির একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের প্রায় ৫০ কোটি ইউএস ডলারের লেনদেন হয়। দেশটির অর্থনীতিকে ঘিরে যেসব সংবাদ পাচ্ছি, তাতে আমরা এটি (ডলারে লেনদেন) আর ব্যাপকভাবে বাড়তে দিতে চাই না। বরং প্রয়োজন অনুসারে তা কমানো হতে পারে।
প্রসঙ্গত, সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সম্প্রতি আইএমএফের কাছে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চেয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে প্রথম দফায় দেড় বিলিয়ন ডলারের মতো চাওয়া হয়েছে।