স্বাধীন বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দেয়া রাষ্ট্র ভুটানের সঙ্গে প্রথম মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বা ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (এফটিএ) করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এর মাধ্যমে দুই দেশের বেশ কিছু পণ্য একে অপরের বাজারে শুল্ক ছাড়াই প্রবেশ করবে। পর্যায়ক্রমে পণ্যের সংখ্যা আরো বাড়বে। এছাড়া এই চুক্তির ফলে দুই দেশই শুল্কমুক্ত আমদানি-রফতানির নানা সুবিধা পাবে।
সম্প্রতি বান্দরবান জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক মতবিনিময় সভায় আগামীকাল রোববার (৬ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ-ভুটানের মধ্যে এই মুক্তবাণিজ্য চুক্তি হতে যাচ্ছে বলে জানান বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন।
জানা গেছে, ভুটানের পর থাইল্যান্ডের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া আরো ১৭টি দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা চালাচ্ছে সরকার। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, প্যারাগুয়ে ও উরুগুয়ে, শ্রীলংকা, ভিয়েতনাম, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, ফিলিস্তিন, ব্রাজিল, চীন, ভারত, পাকিস্তান, সৌদি আরব ও মালয়েশিয়া। এসব দেশের সঙ্গেও নতুন করে আলোচনা শুরু করেছে বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে এফটিএ শাখাকে শক্তিশালী করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের তথ্য মতে, বাংলাদেশের সঙ্গে এখন ১৯৮টি দেশের বাণিজ্য রয়েছে। এর মধ্যে ৭১টি দেশের সঙ্গে রয়েছে বাণিজ্য ঘাটতি। বিশাল এ ঘাটতি কমাতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এফটিএ এবং পিটিএ সইয়ের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চীন থেকে আমদানি হয় এক লাখ ১৪ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য হয় ভারতের সঙ্গে। গত বছর দেশটির সঙ্গে মোট দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য হয় ৭২ হাজার ৭৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে আমদানি ৬৪ হাজার ২৫৩ কোটি টাকা ও রফতানি পাঁচ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা। তবে এফটিএ চুক্তির জন্য এগিয়ে থাকা ভুটান ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য শীর্ষ ১০-এ নেই।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে থাইল্যান্ডের সঙ্গে আট হাজার ২৮৫ কোটি টাকার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে রফতানি মাত্র ২৩৯ কোটি টাকা। একই সময়ে ভুটানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য হয় ৪৫৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশের রফতানি মাত্র ৩৮ কোটি টাকা। তবে দেশটির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ বেড়ে চলেছে।
২০১০ সালে প্রণীত দ্বিপাক্ষিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি নীতিমালা অনুযায়ী কোনো দেশের সঙ্গে এফটিএ করতে হলে সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের লাভ-ক্ষতি নিরূপণের লক্ষ্যে একটি ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এক্ষেত্রে ভুটান, মালয়েশিয়া, শ্রীলংকার সঙ্গে এফটিএ নিয়ে বাংলাদেশ ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি সম্পন্ন করলেও থাইল্যান্ডের সঙ্গে তা এখনো সম্পন্ন করতে পারেনি। দেশটির সঙ্গে আপাতত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভিত্তিতে আলোচনা এগিয়ে চলছে।
বাংলাদেশের প্রস্তাবিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির ব্যাপারে সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে চলতি বছরের ১৭ থেকে ২৫ আগস্ট সাউদার্ন কমন মার্কেটের (মার্কোসুর) অন্তর্ভুক্ত চারটি দেশ- আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, প্যারাগুয়ে ও উরুগুয়ে সফর করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। ওই চারটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও পারস্পরিক বিনিয়োগ উন্নয়নের উপায়সমূহও পর্যালোচনা করা হয়।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, সবশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ৪৩ লাখ ৫৬ হাজার ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে ভুটানে। দেশটির বাজারে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনিক্স, আসবাব, তৈরি পোশাক পণ্য রফতানি করেন। অপরদিকে দেশটি থেকে বাংলাদেশে আমদানি হয়েছে প্রায় ৪ কোটি ডলারের পণ্য। এর মধ্যে কমলা, দারুচিনি সবচেয়ে বেশি। এছাড়া বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা ভুটান থেকে চুনাপাথর, পাথর, কয়লাসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি করেন।
ভুটানের সঙ্গে এফটিএ’র বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ- সিপিডির গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের এই দ্বিপক্ষীয় মুক্তবাণিজ্য চুক্তি আমাদের বাণিজ্য বৃদ্ধির চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো নতুন অভিজ্ঞতা হবে।
গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বাংলাদেশ প্রথম কোনো দেশের সঙ্গে এই ধরনের চুক্তি করতে যাচ্ছে। এটা থেকে আমরা বুঝতে পারবো ভবিষ্যতে অন্য দেশগুলোর সঙ্গে কোন কোন জায়গায় গুরুত্ব দিতে হবে। এই অভিজ্ঞতা অন্যান্য দেশের সঙ্গে এফটিএ করতে গিয়ে কাজে লাগানো যাবে।
সম্পাদক:সাহিদুর রহমান
অফিস:২৭/১১/২, তোপখানা রোড, পল্টন মোড়,ঢাকা -১০০০।
ফোন: ০১৯১১- ৭৩৫৫৩৩ ই- মেইল : [email protected], [email protected]